Category Archives: কৃষি

কৃষি গুরুকুলের “কৃষি” সেকশন হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার যেখানে কৃষির ইতিহাস, ঐতিহ্য, আধুনিক গবেষণা ও কৃষি বিষয়ক অথরিটি প্রবন্ধসমূহ প্রকাশিত হয়। এখানে পাঠকরা কৃষি সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য, উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ও সমৃদ্ধ কনটেন্ট খুঁজে পাবেন।

মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি

মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি ,মরিচ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় মসলা জাতীয় ফসল। তরকারি সুস্বাদু করতে মরিচ ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ছাড়া ঝাল হিসেবে নানান খাবারে এর ব্যবহার হয়। এর বাজারমূল্যও ভাল। তাই আজ আলোচনা করবো মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি নিয়ে-

মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি

 

মাটি ও জলবায়ু

পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত আলো বাতাসময় উর্বর দো-আঁশ মাটিতে মরিচ ভাল হয়। অতিরিক্ত অম্ল মাটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের মাটিতেই মরিচ জন্মে। মরিচ গাছে ফুল ধরার সময় ৩৫ থেকে ৪৫ সে. তাপমাত্রা সর্বাপেক্ষা উপযোগী। অধিক বৃষ্টিপাত ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ফুল ঝরে পড়ে।

জাত

মরিচকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ঝাল ও মিষ্টি। বাংলাদেশে ঝাল মরিচের মধ্যে বগুড়া, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী ইত্যাদি আঞ্চলিক মৌসুমি জাত আছে। এ ছাড়া আকালী, কামরাঙা, কালো ইত্যাদি মরিচও খুব ঝাল। আঞ্চলিকভাবে আরও বিভিন্ন নামের যেমন- ছোট মরিচ, বড় মরিচ, ধানী মরিচ, সাহেব মরিচ, বোম্বাই মরিচ, গোল মরিচ, মেজর মরিচ, সনিক মরিচ, যমুনা মরিচ, বালিঝুরা মরিচ, পাটনাই মরিচ, রাঁচি মরিচ, সূর্যমুখী ও বারি মরিচ চাষ হয়ে থাকে।

 

 

চারা উৎপাদন পদ্ধতি

ভাল চারার জন্য প্রথম বীজতলায় চারা গজিয়ে দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। প্রতিটি বীজতলা জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী লম্বা, ১ মিটার বা সাড়ে তিন ফুট প্রস্থ এবং ৪০ সেমি. বা ১৬ ইঞ্চি উঁচু হতে হবে। বীজতলার ওপরের মাটিতে বালি ও কম্পোস্ট বা শুকনো পচা গোবর সার পরিমাণমত মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। একবিঘা জমির চারার জন্য ১২০ থেকে ১৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

বীজতলা জীবাণুমুক্তকরণ

সূর্যের আলোতে শুকিয়ে বীজতলা শোধন করা। এ পদ্ধতিতে বীজতলা ভালভাবে কোপানোর পর সমতল করে সাদা ও স্বচ্ছ পলিথিন সিট দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিতে হবে। তারপর ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ঢাকা অবস্থায় সরাসরি সূর্যরশ্মি স্বচ্ছ পলিথিন সিটের ওপর পড়বে। এতে করে বীজতলার মাটির ভেতর গরম হয়ে যে তাপ সৃষ্টি হবে তাতে ক্ষতিকারক জীবাণুগুলো মারা যাবে। এ ছাড়া তাপবৃদ্ধির ফলে বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস নির্গত হবে। তাই এ পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত করার সাথে সাথে বীজতলায় বীজবপন করা যাবে না। এই বিষাক্ত গ্যাস কোদাল কোপালে ধীরে ধীরে সরে যাবে। এ পদ্ধতিতে বীজতলায় বসবাসকারী পোকা-মাকড় মারা যাবে অন্যথায় তারা স্থান ত্যাগ করবে। তাপের মাধ্যমে বীজতলা জীবাণুমুক্ত করতে গেলে মাটিতে রক্ষিত নাইট্রোজেন সার বাতাসে উড়ে যায় ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের অভাব দেখা দেয়।

বীজ শোধন ও পানিতে ভেজানো

ভালভাবে বীজ গজানোর জন্য বপনের আগে ৪৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। নীরোগ চারা উৎপাদনের জন্য বপনের ৬ ঘণ্টা আগে প্রোভেক্স বা ক্যাপটান (১ গ্রাম/৫০০ গ্রাম বীজের) দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।

বীজ বপন ও চারা রোপণ

বর্ষা মৌসুমের জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে এবং রবি মৌসুমের জন্য অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ঝাল মরিচ বছরের প্রায় যেকোনো সময়ই জন্মে এবং মিষ্টি মরিচ রবি মৌসুমেই ভাল হয়। যখন চারা প্রায় ১০ সেমি বা ৪ ইঞ্চি উঁচু হয় তখন জমিতে ৬০ থেকে ৭০ সেমি বা ২৫ থেকে ৩০ ইঞ্চি দূরত্বে সারিতে চারা রোপণ করতে হয় এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৩০ থেকে ৪০ সেমি বা ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি।

 

 

বীজ ফসলের জন্য নিরাপদ দূরত্ব

মরিচ স্বপরাগায়িত জাত। তবে কিছু কিছু জাতে প্রায় ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত পরাগায়ণ হতে পারে। এ কারণে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করতে হলে বীজ ফসলের জমির চার পাশে অন্তত ৪০০ মিটারের মধ্যে অন্য কোনও জাতের মরিচ না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে অল্প পরিমাণ বীজের জন্য ক্ষেতের সুস্থ সবল নির্বাচিত গাছের ফুল স্বপরাগায়িত করে সেগুলো থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। স্বপরাগায়ণের জন্য সাদা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ফুল ফোটার আগেই ঢেকে দিতে হবে।

জমি চাষ ও সার প্রয়োগ

প্রকারভেদে জমিতে চাষ ও মই দিতে হয় ৪-৬টি । প্রথম চাষ গভীর হওয়া উচিত। জমি তৈরির সময় বিঘাপ্রতি ১২০০-১৩০০ কেজি জৈব সার, ৪০ কেজি টিএসপি, ৬ কেজি এমওপি এবং ১৫ কেজি জিপসাম সার মিশিয়ে দিতে হবে। আর চারা রোপণের প্রতি কিস্তিতে ২৫ দিন পর ইউরিয়া ৯ কেজি, ৫০ দিন ও ৭০ দিন পর এমওপি ৬ কেজি হারে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

পরবর্তী পরিচর্চা

সময়মত আগাছা দমন করতে হবে। অনাবৃষ্টির সময় সম্ভব হলে ক্ষেতে পানি সেচ দিতে হবে।

 

পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমন

মরিচের ক্ষেতে সাধারণত মাইট ও থ্রিপসের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। ওমাইট/ম্যালাথিয়ন/ পারফেকথিয়ন/মেটাসিসটক্স ১ চা চামচ ৫ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করে এসব পোকা দমন করা যায়। রোগ-বালাইয়ের মধ্যে উইল্টিং, এ্যানথ্রাকনোজ/ডাইব্যাক ও ভাইরাস রোগ প্রধান। উইল্টিং রোগের জন্য রিডোমিল এমজেড ৭২, ২ গ্রাম/প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজ তলায় ৭ দিন অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করে দমন রাখা যায়। এ্যানথ্রাকনোজ/ডাইব্যাক রোগের লক্ষণ দেখা গেলে টিল্ট নামক ছত্রাকনাশক ১ চা চামচ ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

মরিচ সংগ্রহ ও বীজ সংরক্ষণ

গাছে মরিচ যখন পুরোপুরি পাকে সেই অবস্থায় উঠানো উচিত। পরিপক্ব, পুষ্ট এবং উজ্জ্বল লাল রঙের মরিচ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। পাকা মরিচ কেটে ভেতরের বীজ বের করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়ে বাতাস ঢুকতে পারে না এমন পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

 

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি,বরবটি আমিষ সমৃদ্ধ সবজি। প্রায় সারা বছরই এটি ফলানো যায়। তবে গ্রীষ্মকালে এটি ভালো হয়। খুব বেশি শীতে আবার ভালো হয় না। বরবটি ভর্তা, ভাজি, তরকারি সব কিছুতেই সমান উপযোগী। পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। খাবারে স্বাদ বাড়ানো পাশাপাশি চমৎকার কিছু পুষ্টির উৎস এটি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি থাকে। এটি চর্বি কমাতে ও সাহায্য করে থাকে।

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি

 

 

আজ আপনাদের সাথে বরবটি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব-

বরবটির জাত

বরবটি চাষ করলে ভালো জাত দেখে চাষ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের বরবটির জাত রয়েছে। যেমন- বিএইউ বরবটি ১, কেগর নাইটি, চীনা বরবটি, ফেলন, লাল বেনী, ঘৃত কুমারি, গ্রিন লং, তকি, বনলতা ইত্যাদি। তবে কেগর নাটকী নামে একটি উন্নত জাতের বরবটি অনেক চাষ হয়ে থাকে। কেগর নাটকী জাতটি পৌষ এবং মাঘ মাস ছাড়া সারা বছরই চাষ করা যায়। বরবটির উল্লেখযোগ্য জাতের মধ্যে কেগর নাটকী ও লাল বেণী জাতের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়।

প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি নির্বাচন

অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় বরবটি ভালো জন্মে। তবে খুব বেশি শীত পড়লে বরবটি চাষ ভালো হয় না। কারণ শীতকালে বরবটি গাছের বৃদ্ধি কম হয় ও ফল কম ধরে। বরবটি উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলের ফসল। কিন্তু বরবটি এখন সারা বছরই চাষ করা হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে বরবটি সবসময় চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে বরবটির চাষের জন্য বেশি উপযোগী।

চাষের সময়

বরবটির বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাস। শীতকালে বরবটির বীজ বোনা উচিত নয়।

 

 

বীজের পরিমাণ

প্রতি শতকে ১০০-১২৫ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি।

জমি তৈরি ও বীজ বপন

বরবটি চাষের জন্য জমি হতে হবে আগাছামুক্ত ও ঝুরঝুরে মাটি। এজন্য জমি ভালোভাবে কয়েকবার চাষ দিতে হবে। জমি পরিষ্কার করে ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। তারপর মাটির ওপরে বেড ও মাদা তৈরি করে প্রত্যেক মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২-৩ হাত এবং মাদা হতে মাদার দূরত্ব হতে হবে ১ থেকে ২ হাত। একই সময় পলিব্যাগে কিছু চারা তৈরি করে রাখলে যেসব জায়গায় বীজ গজাবে না সেসব ফাঁকা জায়গায় পলিব্যাগে চারা রোপণ করে পূরণ করা যাবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ কেজি বা প্রতি শতকে ৪০ গ্রাম বীজ লাগে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

জৈব সার বরবটি গাছের জন্য খুবই ভালো। অল্প সময়ে অধিক ফলন পেতে হলে অন্যান্য সার ও দিতে হবে পরিমাণ মতো। যেমন টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া। এসব সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে বরবটি চাষে ইউরিয়া সার কম লাগে। এ ছাড়াও গোবর সার, জিপসাম সার, জিংক সালফেট সার ও বোরক্স সার দিতে হবে। ইউরিয়া সার বেশি দিলে গাছ ঝোপালো হয় ও ফলন কম হয়।

সেচ ব্যবস্থাপনা

জমিতে জলের যাতে অভাব না হয় সেজন্য প্রয়োজন অনুসারে শুকনার সময় জল সেচ দিতে হবে। নালার মধ্যে জল ঢুকিয়ে সেচ দিলে গাছের শিকড় সে জল টেনে নিতে পারে। এজন্য জমিতে নালা তৈরি করে দিতে হবে।

 

আগাছা ও নিড়ানি

বৃষ্টির জল যাতে আটকে না থাকে সেজন্য নালার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। জমি সবসময় আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বিশেষ করে গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বরবটির গাছ বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। জমিতে মাটির অবস্থা বুঝে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে। জমিতে জল জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।

রোগ বালাই দমন

বরবটি গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা যায়। যেমন জাব পোকা, বিছা পোকা, মাজরা পোকা ইত্যাদি। এসকল পোকা বরবটি গাছের কচিপাতা, কাণ্ড, ফুল ও ফলের ক্ষতি করে থাকে। তাই এই সব পোকা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এসব পোকা দমনে বাজারে বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের কীটনাশক ওষুধ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও বরবটি গাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন- এনথ্রাকনোজ রোগ, পাতায় দাগ রোগ, গাছের শিকড় ও গোড়া পচা রোগ ইত্যাদি। এসব রোগ দমন করার জন্য ও বাজারে বিভিন্ন ছত্রাকনাশক পাওয়া যায়।

ফসল সংগ্রহ ও ফলন

বীজ বোনার ৫০-৬০ দিন পর থেকেই বরবটি সংগ্রহ করা যায়। কচি অবস্থাতেই বরবটি তোলা যায়। কারণ বেশি পুষ্ট হলে সবজি হিসেবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। আর বীজের জন্য শুটি সম্পূর্ণ পেকে গেলে সংগ্রহ করতে হবে। তবে সব শুটি একসাথে পাকে না। কয়েক বারে সংগ্রহ করতে হয়ে থাকে। শতকপ্রতি ফলন ৩০-৬০ কেজি, প্রতি হেক্টরে ফলন ১০-১২ টন।

রসুনের উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

রসুনের উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য , রসুন হলো কন্দ জাতীয় মসলা ফসল। বৈজ্ঞানিক নাম Allium sativum। রসুন শুধু মসলা হিসেবে নয় হেকিমি শাস্ত্রে ওষুধ হিসাবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি রান্নার স্বাদ, গন্ধ ও রুচি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। রসুনে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি-৬ রয়েছে।

রসুনের উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

উপকারিতা

রসুন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কাঁচা রসুন সেবনে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। সর্দি-কাশিতেও রসুন বেশ উপকারী। রক্তে কোলেস্টেরল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও রসুনকে ন্যাচারাল পেইন কিলারও বলা হয়। কেননা শিশু বা বড়দের দাঁতে ব্যথা হলে এক কোষ রসুন চিবালে দাঁতের ব্যথা অনেকটা উপশম হয়। নিয়মিত রসুন খেলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়।

দেশের দিনাজপুর, রংপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বরাইগ্রাম, পাবনা জেলার চাটমহর, শরিয়তপুর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার তারাশ উপজেলায় রসুন বেশি উৎপাদিত হয়।

মাটি ও জলবায়ু

উর্বর দো-আঁশ মাটি, পলি দো-আঁশ মাটি অর্থাৎ যেখানে পানি জমে থাকে না মাটি সহজেই ঝুরঝুরা হয় এমন মাটি রসুন চাষের জন্য উপযোগী। শক্ত এঁটেল মাটি রসুন চাষের জন্য উপযোগী নয়। কেননা এঁটেল মাটিতে রসুনের কন্দ সুগঠিত হয় না। রসুন চাষের জমি থেকে পানি অপসারণ হওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে কন্দ বড় হয় না এবং রং নষ্ট হয়ে যায়। রসুন সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে ভালো জন্মে।

 

 

জাত পরিচিতি

বারি রসুন-১: বারি রসুন ১ এর গড় উচ্চতা ৬০-৬২ সেমি এবং পাতার সংখ্যা (প্রতি গাছে) ৭-৮টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ২০-২২টি। এই জাতে রোগ ও পোকার আক্রমণ খুব কম। এর জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন। ফলন ৬-৭ টন/ হেক্টর।

বারি রসুন-২: গড় উচ্চতা ৫৬-৫৮ সেমি। প্রতি গাছে পাতার সংখ্যা ৯-১০টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ২৩-২৪ টি এবং কোয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ইঞ্চি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ও সংরক্ষণ ক্ষমতা ভালো। এর জীবনকাল ১৪৫-১৫৫ দিন এবং ফলন হেক্টর প্রতি ৭-৯ টন।

 

বারি রসুন-৩: এ জাতের রসুন গাছের গড় উচ্চতা ৭১-৭২ সেমি। পাতার সংখ্যা (প্রতি গাছে) ৯-১০টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ২৩-২৪টি। ভাইরাস রোগ ও পোকামাকড় সহনশীল হলেও মাঝে মাঝে পার্পল ব্লচ ও পাতা মোড়ানো রোগ দেখা দিতে পারে। জীবনকাল ১৩৫-১৪০ দিন। ফলন (হেক্টর প্রতি) ১০.৫-১১.৩১ টন।

বারি রসুন-৪: গাছের গড় উচ্চতা ৬৭-৬৮ সেমি এবং পাতার সংখ্যা প্রতি গাছে ৯-১০টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ১৭-১৮টি। ভাইরাস রোগ ও পোকামাকড় সহনশীল হলেও মাঝে মাঝে পার্পল ব্লচ ও পাতা মোড়ানো রোগ দেখা দিতে পারে। জীবনকাল ১৩০-১৪০ দিন। ফলন (হেক্টর প্রতি) ৮.০-৮.৭৮ টন।

বাউ রসুন-১: রসুনের এই জাতটি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কিছু রোগ প্রতিরোধী। এছাড়াও এটি উচ্চ ফলনশীল এবং সংরক্ষণ গুণসম্পন্ন।

বাউ রসুন-২: এটি উচ্চ ফলনশীল ও ভাইরাস রোগ প্রতিরোধী জাত। রসুনের এ জাতের সংরক্ষণ গুণ অনেক ভালো এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম হয়ে থাকে। একর প্রতি ফলন ৫ থেকে ৬ হাজার কেজি হয়ে থাকে।

ইটালি (দেশি জাত): রসুনের এই জাতের গাছগুলো শক্ত, চওড়া, পাতাগুলো উপরের দিকে থাকে এবং ফলন বেশি হয়।

আউশী (দেশি জাত): রসুনের এই জাতের পাতা অপেক্ষাকৃত ছোট ও চিকন। এর কন্দ আকারে ছোট এবং ঢলে পড়ে। এই জাতের ফলন কম হয়ে থাকে। এ ছাড়াও আকারে ছোট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ও মূল্য কম পাওয়া যায়। দেশি জাতের মধ্যে আমনী জাতের রসুনও রয়েছে।

 

রোপণের সময় 

রসুন সাধারণত মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে রোপণ করা উত্তম।

বীজ বপনের হার 

হেক্টর প্রতি ৩০০-৪০০ কেজি কোয়া বা বীজ রসুন লাগে। রসুনের কোয়ার আকার বড় হলে ফলনও বেশি হয়।

বীজ বপন

রসুনের কোয়াগুলো হাতের দু’আঙুল দিয়ে ধরে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৫ সেমি. রেখে প্রতি সারিতে ১০ সেমি. দূরে দূরে ৩-৪ সেমি. মাটির গভীরে লাগাতে হবে।

 

 

সার প্রয়োগ

রসুনের জমিতে হেক্টর/বিঘা প্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

সারের নাম পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) পরিমাণ (বিঘা প্রতি)
গোবর ৮  টন ১ টন
ইউরিয়া ২০০ কেজি ২৫-২৬ কেজি
টিএসপি ১২৫ কেজি ১৫-১৬ কেজি
এমওপি ১০০ কেজি ১৩-১৪ কেজি
জিপসাম ১০০ কেজি ১৩-১৪ কেজি
জিংক সালফেট ২০ কেজি ২-৩ কেজি
বোরাক্স (বরিক এসিড) ১০ কেজি ১-১.৫ কেজি

 

সারের মাত্রা মাটির উর্বরতা বা প্রকৃতি ভেদে কম বেশি হতে পারে। এক কিস্তি ইউরিয়া এবং অন্যান্য সারের সবটুকু জমি তৈরির শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া সার দুই কিস্তিতে চারা গজানোর যথাক্রমে ২৫ ও ৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়াও ছাই প্রয়োগ করা যাবে। কেননা ছাই দিলে মাটি আলগা থাকে এবং ফলন বেশি হয়।

আন্তঃপরিচর্যা

রসুনের চারা বৃদ্ধি পর্যায়ে জমিতে আগাছা থাকলে জমি আগাছামুক্ত করতে হবে। রসুন লাগানোর ১৫ দিন পর আগাছা বেশি হলে অর্থাৎ আগাছাগুলো নাড়ার ওপর দিয়ে উঠা শুরু করলে রনষ্টার ১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

কন্দ গঠনের পূর্ব পর্যন্ত ২-৩ বার জমিতে নিড়ানি দিতে হবে। জমিতে ৪-৫ সেমি পুরু করে কচুরিপানা বা ধানের খড় দ্বারা মালচ প্রয়োগ করলে রসুনের ফলন ভালো হয়। এক্ষেত্রে বেশি সেচের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু মালচ ছাড়া করলে জমির প্রকারভেদে ১০-১৫ দিন পর সেচ প্রয়োগ করতে হবে।

 

 

ফসল সংগ্রহ

রসুন লাগানোর ২ মাস পর থাকে কন্দ গঠন করতে শুরু করে। ৩-৩.৫ মাস পরে কন্দ পুষ্ট হতে আরম্ভ করে। এভাবে ৪-৫ মাস পরে রসুন উত্তোলন করা যাবে। রসুন গাছের পাতার অগ্রভাগ শুকিয়ে হলুদ বা বাদামি রং হয়ে গেলে রসুন তোলা যাবে। হাত দিয়ে টেনে গাছসহ রসুন তোলা হয়ে থাকে। এভাবে রসুনের কন্দগুলো ৪-৫ দিন ছায়াতে শুকানোর পর মরা পাতা কেটে সংরক্ষণ করা হয়।

ফলন

রসুনের হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৮-১০ টন।

ফসল উত্তোলনের পর করণীয়

রসুনের কন্দগুলো ৪-৫ দিন ছায়াতে শুকিয়ে নিলে রসুনের গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে। রোদে শুকালে রসুন নরম হয়ে যেতে পারে। ফুতি পোকার লার্ভা থেকে রসুনকে রক্ষার জন্য সংরক্ষণের সময় সেভিন পাউডার ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে। রসুন খুব ভালোভাবে পরিপক্ব করে নিয়ে জমি থেকে তুলতে হবে। কেননা অপরিপক্ব রসুন তুললে তা থেকে বীজ করা যাবে না।

বীজ হিসাবে রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি

রসুন সংগ্রহের পর ৫-৭ দিন ছায়াযুক্ত স্থানে ভালোভাবে শুকাতে হয়। একে রসুনের কিউরিং বলে। পরে পরিমাণ মতো (৪-৫ কেজি) রসুনের শুকনো গাছ দিয়ে বেনি তৈরি করে বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে কয়েকটা বাঁশ দিয়ে তার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এক ঝোপা থেকে অন্য ঝোপা ফাঁকা ফাঁকা করে রাখতে হবে যাতে করে বাতাস চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া রসুন উত্তোলনের পর পাতা ও শিকড় কেটে ব্যাগে, বাঁশের রেকে, মাচায় এবং চটের বস্তাতেও সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

সবজি চাষের সঠিক নিয়ম এবং উপায়

সবজি চাষের সঠিক নিয়ম এবং উপায় , বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশে প্রতিনিয়ত চাষের জমি কমে যাচ্ছে। কিন্তু খাদ্যের চাহিদা বেড়েই যাচ্ছে। ফলে ফসলের সঠিক যোগান দিতে আমাদের সবজি চাষ হোক কিংবা সাধারণ ভেষজ উদ্ভিদ চাষ হোক; সঠিক উপায় মেনে চললে ভালো ফল আশা করতে পারবো।

আমরা যেসব ফলমূল রান্না করে খাই, তাদের সাধারণভাবে সবজি বলা হয়। যেমন—আলু, বেগুন, পটল, মুলা, ঝিঙে, কপি, লাউ, কুমড়া ইত্যাদি।

ঋতু বা বপনকাল অনুসারে সবজিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—গ্রীষ্মকালীন বা বর্ষাকালীন সবজি ও শীতকালীন সবজি।

সবজি চাষের সঠিক নিয়ম এবং উপায়

খারিফ সবজি

শসা, বেগুন, ঢেঁড়স, পটল, লাউ, কুমড়া, ঝিঙে, উচ্ছে প্রভৃতি সবজির চাষ গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকালে হয়। এদের খারিফ সবজি বলে।

রবি সবজি

ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টম্যাটো, বীট, গাজর, শিম, মুলা প্রভৃতি সবজির চাষ শীতকালে হয়। এদের রবি সবজি বলে। হেমন্তকালে বীজ বুনে যে ফসল কৃষক বসন্তকালে ঘরে তোলে তা-ই রবিশস্য।

সবজি চাষের জন্য প্রধান উপকরণ হল জমি। সাধারণত সবজি চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি সর্বাপেক্ষা উপযোগী। মাটিতে যেন রৌদ্র পড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সবজি চাষের জন্য যে সকল যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সেগুলো হল—কোদাল, খুরপি, নিড়ানি, পানির ঝাঁঝরি ইত্যাদি।

সবজি চাষের জন্য কয়েক দফা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যেমন— বীজতলা কর্ষণ ও প্রস্তুত করা, বীজ বপন, চারা লাগানো, সেচ, সার প্রয়োগ, আগাছা তোলা, কীটনাশক প্রয়োগ, ফসল তোলা।

 

রবি সবজি -গাজর

 

বীজতলা ও মূল জমি প্রস্তুত করা 

কিছু সবজি আছে যাদের চারা প্রস্তুত করে মূল জমিতে লাগানো হয়। সে কারণে সবজির বীজতলা প্রয়োজন। চারা উৎপাদনের উদ্দেশ্যে যে জমি নির্বাচন করা হয়, তাকে বীজতলা বলে। বীজতলার জমি পার্শ্ববর্তী জমি থেকে অন্তত ১৫ সেমি উঁচু হওয়া চাই। একটি আদর্শ বীজতলার আকৃতি হবে লম্বায় ৩০০ সেমি, এবং চওড়ায় ১২০ সেমি.। বীজতলায় যাতে অবাধ রোদ পাওয়া যায়, সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। প্রতি বীজতলার চারিধারে গভীর জলনিকাশের নালা রাখা প্রয়োজন। বীজতলার মাটি বেশ নরম, উর্বর, ঝুরঝুরে হওয়া দরকার। বীজতলার মাটিকে কোদাল দিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে ঝুরাঝুরা করে নিতে হবে। সার হিসাবে গোবর, কম্পোস্ট সার, খৈল, অ্যামোনিয়াম সালফেট, সুপার ফসফেট ব্যবহার করা হয়। বীজতলা তৈরি হয়ে গেলে মাটি সামান্য আর্দ্র অবস্থায় থাকার সময় পাতলা করে বীজ বপন করতে হবে।

 

মূল জমি প্রস্তুত করা

 

যে জমিতে চারা লাগানো হবে সেখানকার জমি ভালোভাবে কর্ষণ করে এবং প্রয়োজনমতো সার প্রয়োগ করে জমি তৈরি করে রাখতে হবে।

বীজ বপন

ভালো পুষ্ট, রোগহীন বীজ সংগ্রহ করে বীজতলায় বপন করতে হবে। মাটি সামান্য ভিজে অবস্থায় থাকার সময় পাতলা করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের পর প্রত্যহ সকাল-বিকাল ঝাঁঝরি দিয়ে জল দিতে হবে। রোদের সময় বীজতলা খড়, চাটাই দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

চারা লাগানো

বীজ বপনের ১৫ দিন পর চারাগুলো এক ইঞ্চির মতন লম্বা হলে বীজতলা থেকে চারা তুলে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। চারা তুলবার আগে বীজতলাকে ভিজিয়ে রাখতে হবে। চারা তুলে লাগানোর উপযুক্ত সময় হল বিকেল। চারা বীজতলা থেকে ধীরে ধীরে তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট সারি ও গাছের দূরত্ব রেখে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর গোড়ার মাটি শক্ত করে চেপে দিতে হবে। পরে গোড়ায় সামান্য জল দিতে হবে।

সেচ 

চারাগাছ লাগানোর ১০-১৫ দিন পর থেকে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে অতিরিক্ত পানি না জমে তার জন্য নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

 

সার প্রয়োগ 

চারা লাগানোর কিছুদিন পর থেকে গাছের গোড়ার চারপাশে ৩/৩ ইঞ্চি দূরত্বে সার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে গোবর বা পাতাপচা সার প্রয়োগ করলে মাটি খুব সরস ও সতেজ থাকে।

আগাছা দমন 

সবজি গাছের চারপাশের মাটিকে হালকাভাবে কর্ষণ করে আগাছাগুলো বেছে গাছের গোড়ায় মাটি ধরিয়ে দিতে হবে। সবজি খেতে আগাছা থাকলে সবজির বৃদ্ধি কমে যায় এবং উদ্ভিদ দুর্বল হয়ে পড়ে। তার ফলে ফসল সহজেই কাঁটশত্র দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাই জমি ও জমির আশপাশ আগাছামুক্ত রাখা একান্ত দরকার।

কীটনাশক প্রয়োগ 

গাছে পোকামাকড়ের উপদ্রব হলে মাঝে মাঝে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এতে ফলনের হার বৃদ্ধি পায়। এর পরেই নির্দিষ্ট সময়ে ফসল তোলার কাজ করতে হবে।

উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পুষ্টি 

উদ্ভিদ বৃদ্ধি ও পুষ্টির প্রয়োজনে মাটি, জল ও বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি, পুষ্টি ও দেহগঠনের জন্য মাটিতে ১৬টি খাদ্য উপাদান প্রয়োজন। এগুলোকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।

প্রধান বা মুখ্য খাদ্যোপাদান (Major nutrients): কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম প্রভৃতি উপাদানগুলো গাছ বেশি মাত্রায় গ্রহণ করে বলে এদের প্রধান বা মুখ্য খাদ্যোপাদান বলে। এদের মধ্যে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, জল ও বাতাস থেকে এবং বাকিগুলো উদ্ভিদ মাটি থেকে গ্রহণ করে।

গৌণ খাদ্যোপাদান (Secondary nutrients): ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার— এই উপাদানগুলো উদ্ভিদ কিছুটা কম পরিমাণে গ্রহণ করে। এদের বলা হয় গৌণ খাদ্যোপাদান।

অণুখাদ্য উপাদান (Micro Trace elements): আয়রন, জিংক, বোরন, তামা, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম, ক্লোরিন- এই উপাদানগুলো অতি সামান্য পরিমাণ উদ্ভিদের প্রয়োজন হয়। এগুলোকে অণুখাদ্য উপাদান বলে।

উদ্ভিদদেহে প্রধান, গৌণ ও অণুখাদ্য সবই অপরিহার্য। কারণ এদের যেকোনও একটির অভাব ঘটলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটে। সেজন্য এদের সকলকেই অপরিহার্য উপাদান বলে।

 

বড় আকারের রুই জাতীয় মাছ উৎপাদন কৌশল

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে রাজশাহী এলাকায় বড় আকারের রুই জাতীয় মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে, যা দেশের বড় বড় শহরের বাজারসমূহে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা বিশেষ করে রাজশাহী জেলার পবা, পুটিয়া, দূর্গাপুর, মোহনপুর; নাটোর জেলার সিংড়া, গুরুদাশপুর, বড়ায়গ্রাম, লালপুর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া, তাড়াশ ও রায়গঞ্জে এ ধরনের বড় আকারের কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ দ্রæত সম্প্রসারিত হচ্ছে।

 

বড় আকারের রুই জাতীয় মাছ উৎপাদন কৌশল

 

 

রাজশাহী বিভাগের অন্যান্য অঞ্চলেও স্বল্প পরিসরে হোলেও এ পদ্ধতিতে মাছচাষ শুরু হয়েছে। উৎপাদিত এ ধরনের বৃহৎ আকারের (৪-২০ কেজি) মাছ জীবন্ত অবস্থায় রাজধানি ঢাকার বজারসহ দেশের অন্যান্য বৃহৎ শহরগুলোতে পৌছে যাচ্ছে। বড় আকারের মাছের চাহিদা সারা বছরই একই রকম থাকে এবং এর বাজার মূল্যও খুব বেশি উঠা নামা করে না। ফলে প্রতি দিন ২০০-২৫০ ট্রাক মাছ যমুনা সেতু পার হয়ে দেশের ভিবিন্ন শহরে পৌছে যাচ্ছে। বড় আকারের মাছ উৎপাদনের এ কৌশল এ অঞ্চলে মাছচাষে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।

পুকুরে কার্পজাতীয় মাছের মিশ্রচাষের এ বিশেষ পদ্ধতিটি এলাকা ভিত্তিক নানা মাত্রায় নানাভাবে প্রয়োগ হচ্ছে এবং চাষ পদ্ধতিতে কিছু ভুল ভ্রান্তিও চর্চার মধ্যে প্রবেশ করেছে বলে আমাদের প্রতিয়মান হয়। এ পদ্ধতিতে মাছচাষ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান তথ্যগত ঘাটতি পুরণসহ একটি সমন্বিত ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য এবং সঠিক ধারণা সকলের কাছে পৌছে দেবার জন্য আমাদের আজকের এ প্রচেস্টা। আশা করি নতুন আগ্রহী মাছচাষি এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সম্প্রসারণ কর্মীরা বড় আকারের রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন কৌশলের বিষয়ে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারবেন।

কার্প মিশ্রচাষ

বিভিন্ন প্রজাতির কার্প জাতীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ একয় পুকুরে একত্রে প্রাকৃতিক ও সম্পূরক খাবার ব্যবহারকরে যে চাষ করা হয় তাহায় কার্প মিশ্রচাষ হিসাবে পরিচিত। এ পদ্ধতিতে যখন বড় আকারের (০২ কেজি হতে ১০ কেজি বা এর চেয়েও বড়) মাছ উৎপাদন করা হয় তখন অনেকে এ পদ্ধতিকে কার্প মোট-তাজাকরণ বা কার্প ফ্যাটেনিং বলে থাকেন।

রাজশাহী অঞ্চলে উৎপাদিত এ বড় আকারের মাছ সারাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বড় আকারের এ মাছ বেশি পরিমাণে উৎপাদন করলেও বিক্রয় করতে কোন সমস্যা হয় না। কার্পজাতীয় মিশ্রচাষের সাথে সাথি ফসল হিসেবে প্রচুর পরিমাণে ফলি ও চিতল মাছও উৎপাদিত হয়। বর্তমানে অনেকেই এ মাছের সাথে একত্রে শিং-মাগুর, পাবদা, গুলশা ও ট্যাংরা চাষ শুরু করে অধিক লাভ নিশ্চিত করছেন।

 

 

কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষের সুবিধা

১) স্তর ভিত্তিক পোনামাছ মজুদের ফলে পুকুরের সকল স্তরের খাদ্য সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়;
২) সিলভার কার্প মজুদের মাধ্যমে ফাইটোপ্লাংটনের প্রাচুর্যতা (অ্যালগাল বøুম) নিয়ন্ত্রণ করা যায়;
৩) গ্রাসকার্প জলজ উদ্ভিদ (তন্তুজাতীয়) নিয়ন্ত্রণ করে পাশাপাশি এ মাছের মল কার্পের খাদ্য ও সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়;
৪) তলবাসী মাছ মৃগেল, কমনকার্প, মিরর কার্প কাদায় খাদ্য খোঁজে খায় এর ফলে তলদেশের পুষ্টি পানিতে মিশ্রিত হয়, তলদেশের গ্যাস দূর করে এবং
৫) পুকুরের শামুক নিয়ন্ত্রণে বøাককার্প মজুদ করা হয় এবং
৬) একয় সাথে বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ এক সাথে চাষ করার ফলে পুকুরে সর্বোত্তম উৎপাদন পাওয়া যায়।

 

মাছচাষ ব্যাবিস্থাপনা

মাছচাষের জন্য পুকুর নির্বাচন থেকে শুরু করে মাছ বাজারে বিক্রয় পর্যন্তধারাবাহিকভাবে কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হয় যার
সমস্টিকে এক কথায় মাছচাষ (অয়ঁধপঁষঃঁৎব) বলে। এসকল কার্যক্রমকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় ক) মজুদ পূর্ব ব্যবস্থাপ
না খ) মজুদ কালিন ব্যবস্থাপনা এবং গ) মজুদ পরবর্তি ব্যবস্থাপনা

ক) মজুদ পূর্ব ব্যবস্থাপনা পুকুর নির্বাচন ঃ

যে কান পুকুরে এ ধরনের মাছচাষ করা সম্ভব নয়। যেহেতু বড় আকারের মাছ উৎপাদন করা হয় সে জন্য বড় আকারের (২-১০ একর) গভীর (৫-১০ ফুট) পুকুরের প্রয়োজন। বণ্যা মুক্ত মজবুত পাড়যুক্ত রৌদ্রউজ্জল পুকুর এপদ্ধতিতে মাছচাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। মাছচাষের
উপকরণ ও মাছ সহজে পরিবহনের জন্য পুকুরটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হতে হবে।

১) পুকুর প্রস্তুতি ঃ

ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসে পুকুর প্রস্তুতি শুরু করতে হয়। আগের অধ্যায়ে আলোচিত পদ্ধতিতে নির্বাচিত পুকুরটি মাছাচাষের উপযোগী করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। তবে সব সময় একয়ভাবে প্রস্তুত করা যায় না কারণ এখানে বড় আকারের পুকর ব্যবহারকরা হয় যা স্বেচ দিয়ে তৈরি করা যায় না বা সব সময় শুকানো যায় না। ফলে মাছচাষ চলাকালে বিশেষ কিছু সমস্যার সম্মূখিন হতে হয় তা প্রতিরোধের জন্য নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হয়।

২) মজুদের জন্য পোনা নির্বাচন ঃ

এ পদ্ধতিতে মাছচাষের জন্য রুই জাতীয মাছের নুন্যতম ২৫০ গ্রাম থেকে ২ কেজি আকারের মাছে প্রয়োজন হয় অনেক সময় এর চেয়েও বড় পোনা পুকুরে মজুদ করা হয় অধিকতর বড় আকারের মাছ উৎপাদনের জন্য। এ পদ্ধতিতে সাধারণত রুই ও কাতল মাছের পোনা তুলনামূলক বেশি লাগে। বাজারসমূহে রুই ও কাতল মাছের চাহিদাও বেশি দামও বেশি এ জন্য মাছচাষিরা এ পদ্ধতিতে রুই-কাতল মাছ যাতে বেশি চাষ করতে পারেন সে জন্য বিশেষ যতœবান থাকেন।

এ পদ্ধতিতে সাধারণত তলদেশের মাছ (মৃগেল, কার্পিও, কালিবাউশ) তুলনামূলক কম চাষ করা হয় যা সাধারণ রুই জাতীয মাছের মিশ্রচাষের অনেকটা বিপরিত। এ মিশ্রচাষ পদ্ধতি ব্যবহৃত পোনা অবশ্যই ভাল মানের হতে হবে।

৩) পোনা সংগ্রহ ঃ

এপদ্ধতির চাষে ব্যবস্থাপনায় যেহেতু বড় আকারের পোনা লাগে এ জন্য পোনা সংগ্রহে খরচ বেশি। বিশেষ করে বড়পুকুরে চাষ করা হয় বলে পোনার পরিমাণও বেশি লাগে। বড় আকারের মাছ উৎপাদন করা হয় বলে পোনার গুণগত মান অবশ্যই ভাল হতে হবে। অন্যথায় ভাল ফলাফল পাওয়া যায় না। এজন্য পোনা সংগ্রহে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

যদি সম্ভব হয় প্রাকৃতিক উৎসের পোনা সংগ্রহ করে নিজের পুকুরে চাষ করে উপযুক্ত আকারের পোনা তৈরি করে নিতে হবে। যদি প্রাকৃতিক উৎসের পোনা না পাওয়া যায় তা হলে অবশ্যই ভাল মানের হ্যাচারি বা উৎস হতে পোনা সংগ্রহ করতে হবে। রাজশাহী অঞ্চলে অবশ্য এক ধরনের চাষি গড়ে উঠেছে যারা কেবল এ ধরনের পোনা উৎপাদন করে বড় খামারীদের নিকট বিক্রয় করেন।

অবশ্য অভিজ্ঞ চাষিরা নিজের চাহিদা মত পোনা নিজের পুকুরে উৎপাদন ও মজুদ রাখেন। অনেক সময় আংশিক আহরণের পর পোনা পুনরায় মজুদ করা হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় পোনা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য নিজের পুকুরে পোনা মজুদ রাখাটায় উত্তম।

৪) পোনা মজুদ হার ঃ

এ পদ্ধতির মাছচাষে পোনা মজুদের পরিমাণ বা মজুদ ঘনত্ব খুবই গুরুত্ব বহন করে। অনেক চাষি দির্ঘ দিন এ পদ্ধতিতে মাছচাষ করে নিজস্ব একটি মজুদ ঘনত্ব ঠিক করে নিয়েছেন। পোনা কি পরিমাণে ছাড়তে হবে তা নির্ভর করে কত বড় আকারের মাছ উৎপাদন করতে চায় তার উপর। রাজশাহী অঞ্চলে প্রচলিত চাষ পদ্ধতি অনুযায়ী নি¤েœ১০ বিঘা পুকুরে কি পরিমাণ মাছের পোনা মজুদ করতে হবে তার কয়েকটি নমুনা নিন্মে উল্লেখ করা হল ঃ

 

 

বড় পুকুরে মাছচাষ করার কারণে এ সকল পুকুরে প্রচুর গুড়া মাছ হয় যা মাছের খাদ্যে ভাগ বসায় এবং অক্সিজেন ঘাটতির সৃষ্টি করে। এ সব মাছের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং বাড়তি উৎপাদন পাবার জন্য উপরে উল্লেখিত মাছের সাথে কিছুচিতল মাছের পোনা বা ফলি মাছ ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। এ সব মাছের বাজার দর অনেক বেশি, মূল চাষের মাছের পাশাপাশি এ মাছ থেকে একটি ভাল উৎপাদন পাওয়া যায়।

৫) পোনা পরিবহন ঃ

যেহেতু পুকুরে বড় আকারের পোনা মজুদ করতে হয় সে জন্য এক্ষেত্রে পোনা পরিবহন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। পোনা পরিবহনের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

  • কাছাকাছি উৎস থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে
  • পোনা পরিবহনের সময় এ্যারেশন নিশ্চিত করতে হবে
  • পরিবহনের আগের দিন খাবার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে
  • পরিবহনের আগে ভালভাবে কন্ডিশনিং করে নিতে হবে
  • দূর থেকে পরিবহনের সময় পরিবহন ট্যাংকের পানির সাথে স্যালাইন মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে
  • অথবা পরিবহন ট্যাংকের পানিতে ভিটামিন সি বা প্যানভিট একুয়া মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে

 

৬) পুকুরে পোঁকা মারার ঔষধ প্রয়োগ ঃ

পুকরে পোনা মজুদের আগের দিন পুকুরে বিদ্যমান পোঁকা মাকড় বা বড় আকারের জুপ্লাংকটন মারার জন্য ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। রিবকর্ড বা সাইপারমেথ্রিন গ্রæপের যে কোন একটি ঔষধ বিঘাতে ৫০-৭০ এমএল প্রয়োগ করতে হবে। পোঁকা-মাকড় মজুদকৃত মাছের নানাভাবে ক্ষতি করে থাকে, মাছের শরীরে আক্রমণ করে মাছকে অস্বস্তিতে ফেলে পিড়ন অবস্থায় সম্মূখিন করে। অনেক সময় মাছে রোগের সৃষ্টি করে মৃত্যুহার বৃদ্ধি করে।

বিঃদ্রঃ বড় বাকারের মাছচাষে ৫০০ গ্রামের বড় আকারের মাছ ছাড়া হয় যেমন ধরে নেয়া যাক এক একরে মোট মাছ ছাড়া হয় ১০০০টি যার ওজন প্রায় ৫০০ কেজি, যার ক্রয় মূল্য পড়ে ১৫০/Ñ টাকা দরে মোট ৭৫,০০০/- টাকা। এখানে একটি বিষয় অনেকে বুঝতে চাইনা যে এই মাছ ৬ মাস বা এক বছর পরে যখন বিক্রয় করা হয় তখন এই ৫০০ কেজি মাছ বৃদ্ধি পেয়ে ২০০০ কেজি বা আরো বেশি হয়ে যায়।

এ সময় গড়ে মাছের ওজন ২-৪ কেজি হয় যার বাজারে বিক্রয় মূল্য ৩০০-৪০০/- টাকা প্রতি কেজি। এখানে ক্রয় করা ৫০০ কেজি মাছ এই ২০০০ কেজি মাছের মধ্যেয় আছে যার বিক্রয় মূল্য বেড়ে ১,৫০,০০০/- হতে ২,০০,০০০/- টাকা হয়ে গেছে। খুব মজার বিষয় হলো এ ৫০০ কেজি এর পিছনে কোন খাবার খরচ না করেই প্রায় লক্ষাধিক টাকা বাড়তি আয় হচ্ছে। এখানেই বড় আকারের মাছচাষের গুড় রহস্য।

 

 

খ) মজুদ কালিন ব্যবস্থাপনা

১) পোনা শোধন ঃ

পোনা জালদিয়ে ধরা, পরিবহন গাড়িগে উঠাতে ও পরিবহনের সময় পোনার পাখনা ভেঙ্গে যেতে পারে কিছু আইশঁ উঠে যেতে পারে। যেখানে পরবর্তিতে ইনফেকশন হয়ে পোনার মৃত্যুহার বেড়ে যেতে পারে, পোনার বৃদ্ধিহার কমে যেতে পারে। এ জন্য পোনা মজুদের আগে পোনা পটাশিয়াম পারমেঙ্গানেট দিয়ে শোধন করতে হবে। পোনা পুকুর পাড়ে আসার আগে একটি পাত্রে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পটাশ গুলিয়ে রাখতে হবে। পরিবহন ট্যাংকে সরাসরি পটাশের দানা না দিয়ে গুলানো পটাশ দিতে হবে। এ কাজটি লবণ (NaCl) দিয়েও করা যেতে পারে।

২) পোনা খাপখাওয়ানো (Acclimatization) ঃ

পুকুরে পোনা মজুদের আগে পোনা শোধনের পাশাপাশি পুকুরের পানির সাথে খাপখাওয়াতে হবে। হঠাৎ নতুন পরিবেশে (যেখানে তাপমাত্রা, পিএইচ, অক্সিজেন এর মাত্রা একই রকম নয়) পোনা অবমুক্ত করলে পোনা শক বা পিড়ন (Stress) এর সম্মূখিন হতে পারে। এর ফলে পোনার নানাবিধ ক্ষতি হতে পারে যেমন পোনার বর্দন হার কমে যেতে পারে।

৩) পোনা পর্যবেক্ষণ ঃ

পোনা ছাড়ার পরের দিন ভোরে পুকুরের চারিদিকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যে কোন পোনা মারা গেছে কিনা বা দূর্বল হয়ে ঘুরছে কিনা। দু-একটি পোনা মারা গেলে তা উৎপাদনে তেমন প্রভাব ফেলবে না তবে বেশি সংক্ষ্যক (৫০-১০০) পোনা মারা গেলে অবশ্যই প্রজাতি ভিত্তিক সে পরিমাণ পোনা পুনরায় মজুদ করে দিতে হবে।

গ) পোনা মজুদের পরে করণীয় কার্যক্রম

১) মাছের খাদ্য প্রদান ঃ

পুকুরে পোনা মজুদের পরের দিন হতে নিয়মিত খাবার দিতে হবে। মাছের মোট ওজনের ৩-৪% হারে প্রতি দিন খাবার দিতে হবে। কার্পজাতীয় মাছের খাদ্যে ২২-২৫% আমিষ থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি চর্চা হয়ে আসছে। পুকুরে মাছের বৃদ্ধি ভাল পাবার জন্য প্রতিদিন দুইবার (সকাল-বিকাল) মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।

সকাল ৯-১০ ঘটিকার মধ্যে একবার এবং বিকাল ৪-৫ ঘটিকার মধ্যে আর একবার। তবে দিনে একবার ডুবন্ত খাবার দিয়েও মাছচাষ করা যেতে পারে। ডুবন্ত খাবার দুই রকম হতে পারে। ক) বাজারের পিলেট খাবার এবং খ) পুকুরের পাড়ে তৈরি ভিজা খাবার। ভিজা খাবার নানা উপকরণ মিশ্রণে তৈরি করা হয়ে থাকে যার কয়েকটি ধরন নি¤েœ উল্লেখ করা হল।

১০০ কেজি খাবার তৈরিতে ভিভিন্ন উপকরণের পরিমাণ (কেজিতে)

 

 

২) খাবার প্রয়োগ পদ্ধতি ঃ

সমস্ত খাবার নির্ধারিত কয়েকটি স্থানে দিতে হবে। খাবার প্রদানের ১ ঘন্টা পরে খাবার অবশিস্ট আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী খাবার বাড়াতে বা কমাতে হবে। খাবারের প্রতি মাছের আচারণও পর্যবেক্ষণ করতে হয়। অতিরিক্ত খাবার পঁচে পুকুরের পরিবেশই নস্ট করে না অর্থেরও অপচয় হয়।

৩) খাদ্য দানিতে (Feed Tray) ঃ

মাছের খাবার গ্রহণের হার পর্যবেক্ষণ করার জন্য বড় মাছ উৎপাদন কারীরা সাধারণত পুকুরে খাদ্য দানিতে খাবার প্রয়োগ করে থাকেন। পুকুরে বিঘা প্রতি নুন্যতম একটি খাদ্য দানি স্থাপন করতে হবে। খাদ্য দানিতে খাবার দিলে মাছ সমস্তখাবার খেয়েছে কিনা পর্যবেক্ষণ করা যায়। খাদ্যের অপচয় রোধ করা যেতে পারে। খাদ্য দানিতে খাবার দিলে রুই মাছের জন্য সবচেয়ে ভাল হয়।

খাদ্য পুকুরের তলায় চলে গেলে সাধারণত সে খাবার মৃগেল ও কার্পিও মাছে সহজে খেতে পারে কিন্তু রুই মাছের নাগালের বাহিরে চলে যায়। অনেক চাষির মতে এভাবে খাবার দিলে কাতলের জন্যও সুবিধা হয়। খাদ্য দানিতে খাবার দেবার জন্য এ অঞ্চলের চাষিরা সিমেন্টের চাড়ির নৌকা ব্যবহারকরে থাকেন, যা দেশের অন্য কোথাও দেখা যায় না।

৪) বস্তায় খাবার ঝুলিয়ে দেয়া ঃ

বানানো ভিজা খাবার বা ডুবন্ত পিলেট খাবার অনেকে বস্তার মধ্যে ভরে বাশের খুটির সাথে বা আড়ার সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে থাকেন। খাবারের বস্তার চারিদিকে ছোট ছিদ্র করে দেয়া হয়। এভাবে খাবার দিলেও খাবার গ্রহণের পরিমাণ বা খাবার শেষ করার সময় সহজে পর্যবেক্ষণ করা যায়। বস্তার খাবার ৩-৪ ঘন্টার মাঝে ফুেিয় যায় কিনা দেখতে হবে।

 

 

৫) ভাসমান খাদ্য প্রদান ঃ

মাছের দ্রæত বর্ধন বা বিশেষ করে রুই মাছের ভাল উৎপাদন পাবার জন্য পুকুরে ডুবন্ত খাবার দেবার পাশিাপাশি বিকাল ৪-৫ ঘটিকার মধ্যে মোট খাবারের অর্ধেক ভাসমান খাবার দিতে হয়। বাজারে বিভিন্ন কম্পানির ভালমানের খাবার পাওয়া যায়। ভাসমান খাবার দেবার জন্য পুকুরের ৩-৪ স্থানে ভাসমান নেট বৃত্তাকার বা আয়তকারভাবে স্থাপন করে তার মধ্যে খাবার দেয়া হয় যাতে খাবার সারা পুকুরে ছড়িয়ে না যায়। পুকুরে খাদ্য প্রয়োগের সময় অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা করে থাকে যা এ ধরনের ঘের তৈরি করে প্রতিরোধ করা যায়। আকবার মাছের ভাসমান খাবার সারা পুকুরে ছড়িয়ে গেলে মাছের খাদ্য গ্রহণে অনেক শক্তি ব্যায় হয় এবং খাদ্য অপচয় হতে পারে।

 

 

৬) খাদ্য প্রয়োগে সতর্কতা ঃ

খাদ্য প্রয়োগের সময় কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয় যা নি¤েœ উল্লেখ করা হল

  • প্রয়োজনের অধিক খাবার দেয়া যাবে না;
  • নিয়মিত এবং পরিমাণমত খাবার দিতে হবে;
  • নির্ধারিত স্থানে প্রতিদিন খাবার দিতে হবে;
  • আবহাওয়া ঠান্ডা বা ঝির ঝির বৃষ্টি বা মেঘলা হলে খাবার কম দিতে হবে;
  • পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার বেশি থাকলে খাবার কমিয়ে দিতে হবে;
  • খাদ্য উপকরণ ২-৩ দিন ভিজিয়ে রেখে পুকুরে প্রয়োগ করা ঠিক নয়;
  • গোবরের সাথে কোন সময় খাদ্য উপকরণ মিশিয়ে পুকুরে প্রয়োগ করা ঠিক নয়;
  • অনেকে খাদ্য উপকরণের সাথে সার মিশিয়ে পুকুরে প্রয়োগ করে থাকেন যা কোন ভাবেই উচিৎ নয়।

অধিক ফলন পেতে ৬-৭ দিন পরপর প্রতি কেজি খাদ্যে ১-২ গ্রাম ভিটামিন ও ১-২ গ্রাম লবণ এবং ফিশফিড সাপ্লিমেন্ট বা গাট-প্রোবায়োটিক ১-২ গ্রাম মিশ্রিত করে প্রয়োগ করা যেতে পারে ।

 

৭) মাছের উৎপাদন অধিকতর ভাল পাওয়ার জন্য করণীয় ঃ

বাজারে রুই মাছের চাহিদা ও দামও বেশি সুতরাং অনেক প্রতিষ্ঠিত
অগ্রসর মাছচাষিগণ মাছের বর্ধন ভাল পাবার জন্য বিশেষ করে রুই মাছের উৎপাদন বেশি করার জন্য পুকুরে তুলনা মূলকভাবে রুই মাছ বেশি মজুদ করেন এবং রুই মাছের বর্ধন দ্রæত করার জন্য নানবিধভাবে চেস্টা করে থাকেন। এ জন্য মাছচাষিরা খাবারের সাথে বাড়তি ফিড এডিটিভস (এ্যামিনোএসিড) এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন প্রিমিক্স মিশিয়ে খাওয়ান যা মাছের খাদ্যের পুস্টির ভারসাম্য (Balance Feed) রক্ষা করে, খাদ্যের হজম বা পরিপাক (Digestion) তরান্বিত করে এবং খাদ্যের আত্বিকরণ (Assimilation) বাড়িয়ে খাদ্যের মাংসে রুপান্তর হার (Feed Conversion Ratio-FCR) বাড়িয়ে দেয়।

পাশাপাশি এ সকল উপাকরণ মাছের খাদ্য গ্রহণের রুচি বাড়িয়ে দেয় এবং খাদ্যের পানিতে স্থায়িত্ব কালও বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন না হলেও ৬-৭ দিন পরপর খাদ্যের সাথে (প্রতি কেজি খাবারে ১ গ্রাম) মিশিয়ে খাওয়ালে মাছের বর্ধন হার বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মাছ ভাল থাকে এবং মাছের উজ্জলতা ও বর্ণ আকর্ষণীয় হয়।

 

৮) সার প্রয়োগ ঃ

পুকুরে প্রাকৃতিক খাবারের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধির জন্য পুকুরে নিয়মিত জৈব-অজৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। যে সব পুকুরে নিয়মিত খাদ্য প্রয়োগ করা হয় সে সব পুকুরে ইউরিয়া সার কম দিতে হয় এবং যে সব পুকুরে নিয়মিত ভিজা খাবার প্রয়োগ করা হয় সে সব পুকুরে সাধারণত ইউরিয়া সার প্রয়োগ না করাই ভাল কেবল টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। কারণ এ সব পুকুরে মাছের পায়খানা থেকে পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগ পদার্থ নিয়মিত পুকুরের পানিতে যুক্ত হয়। ফলে অনেক সময় নাইট্রোজেনের এ প্রাচুর্যতা পুকুরে ফাইটোপ্লাংকটনের বøুম ঘটিয়ে পুকুরে অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

পানি হালকা সবুজ বা হালকা বাদামী রং থাকায় ভাল। পানি গাঢ় সবুজ হলে সার দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পুকুরের পানির রং এবং জুপ্লাংকটনের উপস্থিতি দেখে পুকুরে সার দেবার প্রয়োজন আছে কি না বুঝতে হবে।

 

 

সরিষার খৈল ২৪ ঘন্টা পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে পুকুরে প্রয়োগের সময় ভালভাবে গুলিয়ে সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। বৃষ্টির দিনে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। টিএসপি ব্যাবহারের আগে ১০-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে গুলিয়ে নিতে হবে, দানাদার অবস্থায় টিএসাপি সার পুকুরে ব্যবহারকরা ঠিক নয়।

সার প্রয়োগ ছাড়াও পুকুরে পর্যাপ্ত জুপ্লাংটন তৈরির জন্য আগের অধ্যায়ে বর্ণিত ইস্ট মোলাসেস পদ্ধতিও অনুসরণ করা যেতে পারে।

 

ঘ) মাছের চাষ নিরাপদ রাখার জন্য অন্যান্য কার্যক্রম

মাছেরচাষ নিরাপদরেখে অধিক উৎপাদন পাবার জন্য বেশ কয়েকটি কার্যক্রম গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। নি¤েœ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

১) নমুনায়ন ঃ

মাছ বিক্রয় করার সময় ছাড়া মাছ ধরে পর্যবেক্ষন করা ঠিক নয়। মাছের খাবার প্রয়োগের সময় খাবারের প্রতি মাছের সাড়া এবং মাছের গতি প্রকৃতি পর্যক্ষেণ করে মাছের বর্ধন ও খাদ্য প্রদানের পরিমাণ নির্ণয় করায় উত্তম। মাছ ধরে নমুনাকরণ করে পুকুরের মাছকে বিরক্ত করা বা পিড়ন অবস্থায় ফেললে মাছের বর্ধনে খারাপ প্রভাব পড়ে।

২) পুকুরে চুন প্রয়োগ ঃ

পুকুরের পানির পরিবেশ ভাল রাখার জন্য মাছচাষ চলাকালে প্রতিমাসে একবার বিঘা প্রতি ৫-৬ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে। পানির পিএইচ ৭.৫-৮.৫ বজায় রাখতে হবে। ক্ষারীয় পরিবেশে সারের কার্যকারিতা ভাল হয়। মাছ থাকা অবস্থায় পুকুরের পানিতে চুন ভিজান মাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পুকুরে মাছ থাকা অবস্থায় সকাল ৭-৮ ঘটিকার মধ্যে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

চুন পুকুরে প্রয়োগের ১-২ ঘন্টা আগে সিমেন্টর চাড়ি বা বড় ড্রামে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে ভিজাতে হবে এবং পাতলা করে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। চুন অধিক সময় ধরে ভিজিয়ে রাখলে চুনের কার্যকারিতা কমে যায়। চুন প্রয়োগের আগে পুকুরের পানির পিএইচ অবশ্যই মেপে নিতে হবে। পি এইচ ৭ এর উপরে থাকলে পুকুরে চুন প্রয়োগের প্রয়োজন নাই। মেঘলা দিনে পুকুরে চুন দেয়া যাবে না। চুন সব সময় সারা পুকুরে সমভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।

৩) জীবণুনাশক ও প্রোবায়োটিক্স প্রয়োগ ঃ

চাষের মাছ নিরাপদ রাখার জন্য ২-৩ মাস পরে বাজারে প্রাপ্ত ভাল মানের যে কোন একটি জীবাণু নাশক প্রয়োগ করতে হবে। বিশেষ করে শীতের সময় এ কাজটি অবশ্যই করতে হবে। তবে পুকুরে জীবাণুনাশক প্রয়োগ করলে পুকুরের ক্ষতিকর জীবাণুর সাথে সাথে উপকারী ব্যাক্টেরিয়াসমূহও মারা যায় এর ফলে পুকুরের বাস্ততন্ত্রের ((Ecology) ক্ষতি হয় বিশেষ করে ক্ষতিকর এ্যামোনিয়াকে উপকারি নাইট্রাইটে রুপান্তরে জড়িত ব্যাক্টেরিয়ার অনুপস্থিতি পুকুরের মাছের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এ জন্য জীবাণুনাশক প্রয়োগের ৩-৪ দিনের মধ্যে এক ডোজ ভালমানের প্রোবায়টিক্স প্রয়োগ করতে হবে। প্রোবায়টিক্স পুকুরে দ্রæত উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার উৎপাদন করে এবং পরিবেশের জৈব পদার্থ ব্যবহার করে পুকুরের পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ ভ‚মিকা রাখে। প্রতিবারে পরিমাণ মত প্রোবায়োটিক বিঘাপ্রতি ৩-৪ কেজি চিটাগুড়ের সাথে একটি পাত্রে ১০-১৫ লিটার পানিতে মিশ্রিত করে ছায়াযুক্ত স্থানে ১-৩ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে তারপর পানিতে প্রয়োগ করতে হবে।

 

৪) জুপ্লাংকটনের প্রাচুর্যতা কমানো ঃ

বৃহৎ পুকুরে বড় আকারের মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এবিষয়টি একটি অপরিহার্য সমস্যা। চাষি বড় আকারের রুই এবং কাতল উৎপাদনের জন্য খুবই তৎপর থাকে সে জন্য পুকুরে একাধিকবার খাবার দেবার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে সরিষার খৈল ভিজিয়ে পুকুরে প্রয়োগ করে। এ ছাড়া বিশেষ করে যে সব পুকুরে ভিজা খাবার প্রদান করা হয় সে সব পুকুরে পর্যাপ্ত প্লাংকটন তৈরি হয় যা মাছে খেয়ে শেষ করতে পারেনা।

এ সব অতিরিক্ত জুপ্লাংকটন মাছের ক্ষতির পাশাপাশি পুকুরের অক্সিজেনের ঘাটতিসৃষ্টি করে। এ জন্য জুপ্লাংকটনের প্রাচুর্যতা (মাখোন পোঁকা বা সুজি পোঁকা) দেখে মাঝে মধ্যে সাইফারমিথ্রিন ১০ ইসি (বিঘা প্রতি ২৫-৩০ এমএল) বা বিঘা প্রতি ডেলটামিথ্রিন ৬০-১০০ এমএল প্রয়োগ করা হয়। তবে অভিজ্ঞ চাষিরা সন্ধার পরে পুকুরের কর্ণারে জমা হওয়া প্লাংকটনের উপর ঔষধ ছিটিয়ে দেন মারার জন্য। এতে খরচ কিছুটা কম হয় এবং অধিক ঔষধ ব্যবহারপরিহার করা যায়। নিরুপায় না হলে বা সমস্যা প্রকট না হলে এ ধরনের ঔষধ পুকুরে না প্রয়োগ করাই ভাল।

 

৫) পুকুরে এ্যারেটর স্থাপন ঃ

বিগত ২০২০ সনের সেপ্টেম্বর মাসের ১ ও ২ তারিখে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বড় মাছচাষের পুকুরে হঠাৎ করে অক্সিজেন ঘাটতি হয় এবং লক্ষ লক্ষ টাকার মাছের ক্ষতি হয়ে যায়। এ ছাড়াও মনে রাখা দরকার বড় মাছের অক্সিজেনের চাহিদা কিছুটা বেশি থাকে। এজন্য মাছ যখন বড় হয়ে যায় তখন মাছকে নিরাপদ রাখার জন্য পুকুরে এ্যারেশনের ব্যবস্থা রাখা নিরাপদ।

পুকুরের অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য এ্যারেশন নানাভাবে করা যেতে পারে। প্রতিদিন পুকুরে ডিজেল মেশিন বা গভীর-অগভীর নলক‚পের পানি দিয়ে পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের পর্যাপ্ততা বাড়ানো যেতে পারে অথবা বর্তমান সময়ে বাজারে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরনের যে এ্যারেটর মেশিন পাওয়া যাচ্ছে তা পুকুরে এক বা একাধিক স্থাপন করে মাছচাষকে অধিকতর নিরাপদ ও লাভজনক করা যেতে পারে।

 

 

৬) মাছের রোগ ও তার প্রতিকার ঃ

চাষের পুকুরে দ্রবণীয় অক্সিজেনের সংকট ছাড়াও এ ধরনের মাছচাষ পদ্ধতিতে প্রধানত কয়েকটি রোগের সমস্যা প্রায় দেখা দেয়:

ক) মাছের উকুন ঃ

এ ধরনের মাছচাষে সাধারণত এ সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে কারণ বড় পুকুরে যারা মাছচাষ করেন তাঁরা পুকুর শুকাতে পারেন না। বছরের পর বছর একইভাবে মাছচাষ করার কারণে পুকুরের তলদেশে জৈব পদার্থের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। চাষ পদ্ধতিতে ভিজা খাবার এবং সরিষার খৈল ভিজিয়ে পুকুরে প্রয়োগ করা হয় এ জন্য পুকুরে পঁচনশীল জৈব পদার্থ বেশি থাকে।

এ চাষ পদ্ধতিতে ৪ মাস পরে প্রতি মাসেই মাছ ধরে বিক্রয় করা হয় ফলে মাছের গায়ের শ্লাইম উঠে যায় ফলে উকুনের আক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মাছের উকুন সাধারণত রুই মাছকে হোস্ট হিসাবে পছন্দ করে। এ জন্য পুকুরে উকুন হলে রুই মাছের বেশি ক্ষতি হয়। আক্রন্ত হলে টের পাবার সাথে সাথে পর পর তিন সপ্তাহ প্রতি বিঘাতে (৩-৪ ফুট গভীরতায় ) ২০০-২৫০ এমএল সুমিথিয়ন বা এ জাতীয় ঔষধ সন্ধার সময় প্রয়োগ করতে হবে। তবে পুকুরে যাতে এ সমস্যা না হয় সেদিকে মনোযোগী হওয়া দরকার।

খ) এংকর ওয়ার্ম ঃ

মাছের উকুন হওয়ার পাশাপাশি রুই মাছের আর একটি সমস্যা বেশি হয় তা হল এংকর ওয়ার্ম এটি মাছের শরীরের রক্ত চুষে নেয়। এ পরজীবীর একটি অংশ মাছের শরীরের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে সুতার মত ঝুলতে থাকে। পুকুরে বড় আকারের জুপ্লাংকটন বেশি উৎপাদিত হলে এরা মাছের শরীরে আক্রমণ করে ক্ষত সৃষ্টি করে যেখানে এংকর ওয়ার্ম আক্রমণ করে।

এ রোগে আক্রান্ত হলে রুই মাছের খাদ্য গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় কাতলের ফুলকার মধ্যেও আক্রমণ করতে দেখা যায়। রুই মাছের শরীরে লাল ক্ষতের সুষ্টি হয়ে ছোপ ছোপ দাগের সুষ্টি হয়। বেশি দিন ধরে আক্রান্ত মাছে এংকর ওয়ার্মকে মাছের দেহে সুতার মত ঝুলতে দেখা যায়। মাছ দ্রæত দূর্বল হয়ে পড়ে। অন্যান্নমাছেও এর আক্রমণ দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে। এ সমস্যার প্রতিকারে ডেলটামিথ্রিন বা এ জাতীয় ঔষধ বিঘাতে ৬০-১০০ এমএল প্রয়োগ করতে হয় পর পর ২ সপ্তাহ। পাশাপাশি বিঘাতে ২০০ গ্রাম পটাশিয়াম পারমেঙ্গানেট প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এ সমস্যা সমাধানে তুতে (CuSO4) বিঘা প্রতি ৩০০ গ্রাম প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে পুকুরে এ ধরনের ঔষধ ব্যাহার না করায় ভাল। চেস্টা করা দরকার যাতে এ ধরনের সমস্যা না হয়।

গ) ক্ষত রোগ ঃ

সাধারণত শেিতর সময় মৃগেল, থাই সরপুটি, বাটা, দেশি পুটি এবং শৈল-টাকি মাছে এ রোগ দেখা দেয়। এ রোগের প্রতিরোধ করতে না পারলে অনেক মাছ মারা যেতে পারে। এ রোগ হয়ে গেলে শতকে ১ কেজি চুন ও ১ কেজি লবণ প্রয়োগ করতে হয়। পাশাপাশি পাটাশিয়াম পারমেঙ্গানেট শতকে ৫-৮ গ্রাম প্রয়োগ করা যেতে পারে। মাছ থাকা অবস্থায় পুকুরে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা ঠিক নয়। সমস্ত চুন দুভাগে ভাগ করে মাঝে একদিন বিরতী দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। তবে প্রতিরোধেকল্পে শীতের শুরুতে শতকে ১ কেজি (৫ ফুট গভীরতায়) হারে চুন প্রয়োগ করলে এ রোগ আর দেখা দেয় না।

আংশিক আহরণ ও পুনঃমজুদ

বড় আকারের মাছ উৎপাদনে মাছের আহরণ বিষয়টি একেক চাষি একেকভাবে করে থাকেন। কারো উদ্দেশ্য থাকে কিছু খরচ বের করা আবার কারো লক্ষ্য থাকে মাছকে অধিকতর বড় হওয়ার জন্য পুকুরের জীবভর কমিয়ে দেয়া। সাধারণত চাষের সময় ৪ মাস পর হতে আংশিক আহরণ শুরু হয় এবং আহরণ উপযোগী মাছের আকার বুঝে প্রতি মাসেই মাছ আহরণ করে হয়। যারা অধিকতর বড় আকারের মাছ উৎপাদনের জন্য আংশিক আহরণ করেন তাঁরা ব্যতিত অন্যরা ধৃত মাছের পরিমাণ বুঝে আবার সমপরিমাণ বড় আকারের প্রজাতি ভিত্তিক পোনা মজুদ করে উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখেন।

১) আহরণ ও জীবন্তমাছ বাজারজাতকরণ ঃ

মাছের ওজন ও দর কাঙ্খিত হলে মাছ আহরণ করা হয় এবং তা জীবন্তঅবস্থায় বাজারজাত করা হয়। জীবন্তমাছ বিপণন অধিক লাভজনক এবং অন্তত ১০% বেশি দামে বিক্রয় হয়। ভোক্তা পর্যায়ে তাজা ও জীবন্তপঁচনমুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত এ মাছের চাহিদা অনেক বেশি। উপরের আলোচিত পদ্ধতিতে মাছচাষ করা হলে বছরে প্রতি শতাংশে প্রায় ২০-২৫ কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

২) আয় ব্যয়ের হিসাব ঃ

এক একর জলায়তন একটি পুকুরে

 

 

যে সকল চাষিগণ কার্পমিশ্রচাষের সাথে কিছু ফলি বা চিতল মাছ মজুদ করবেন তাঁরা দামি এ মাছের একটি বাড়তি মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। বর্তমান সময়ে বাজারে যে চিতল বা ফলি মাছ পাওয়া যায় তার মূখ্য অংশ এই বড় মাছের পুকুরে একই সাথে উৎপাদিত হয়। বড় মাছের প্রতি গাড়িতে কার্প জাতীয় বড় মাছের সাথে ৩০-৪০ কেজি এ ধরনের মাছ জিবন্ত অবস্থায় বাজারে নেয়া হয়। এখানে আর একটি বিষয় উল্লেখ্য যে বর্তমান অনেকে চাষি এ মিশ্রচাষ পদ্ধতির সাথে গুলশা, পাবদা ও ট্যাংরা মাছ মজুদ করে বাড়তি উৎপাদন ঘরে তুলছেন। সেক্ষেত্রে চিতল বা ফলি মাছ মজুদ করা নিরাপদ হবে না।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্পর্কিত সকল তথ্য

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ অপেক্ষাকৃত নতুন একটি পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে দেশে প্রচুর তরুণ উদ্যোক্তারা চাষ করছেন। তরুণ ও বেকার যুব-সমাজের কাছে এই পদ্ধতি খুবই আকর্ষণের বিষয়। কারণ, সীমিত জায়গা ও স্বল্প খরচে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। তাই পদ্ধতিটি বাজারে আসার পরেই তরুণ ও যুবকদের মধ্যেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিলো। অনেকেই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। আবার অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। অভিজ্ঞ জনদের মতে সঠিক দিকনির্দেশনা, আর্থিক অভাব, প্রতারণার শিকার ও মাছের পোনার সঠিক পরিচর্যা না করায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে উদ্যোক্তারা। তাই আপনাদের সবার সুবিধার্থে এই বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি একত্রে পরিবেশন করার চেষ্টা করা হল।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

 

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ

বায়োফ্লক প্রযুক্তির ইতিহাস

প্রথম বিএফটি ১৯৭০-এর দশকে ইফ্রেমার-সিওপি (ফ্রেঞ্চ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর এক্সপ্লয়টেশন অফ দ্য সি, ওশেনিক সেন্টার অফ প্যাসিফিক) পেনিয়াস মনোডন, ফেনারোপেনিয়াস মেরগুয়েনসিস, লিটোপেনিয়াস ভ্যানামেই এবং এল. স্টাইলিরোস্ট্রিসের মাছ নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ওয়াডেল মেরিকালচার সেন্টার) যথাক্রমে ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তেলাপিয়া এবং এল. ভ্যানামেইয়ের নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন শুরু করে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

 

বায়োফ্লক প্রযুক্তি কী?

বায়োফ্লক প্রযুক্তি হলো সিস্টেমের মধ্যে কার্বন এবং নাইট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে মাছ চাষে চাষে পানির গুণমান বাড়ানোর একটি কৌশল। অন্যভাবে বলা যায় বায়োফ্লক প্রযুক্তি জল থেকে বর্জ্য অপসারণ করার একটি ব্যবস্থা।

বায়োফ্লক প্রযুক্তির অর্থ হল উপকারী ব্যাকটেরিয়া, অণুজীব ও শৈবালের সমন্বয়ে তৈরি করা পাতলা আস্তরণ, যা পানিকে শোধন করে। এই প্রযুক্তি পানি থেকে নাইট্রোজেন জাতীয় ক্ষতিকর উপাদানগুলি শোষণ করে নেয়। যার ফলে মাছ খাদ্য হিসেবে এর প্রোটিন সমৃদ্ধ উপাদান গ্রহণ করতে পারে। এই প্রযুক্তিতে যেহেতু উপকারী ব্যাকটেরিয়া (প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া) ব্যবহার করা হয়, যার ফলে এই পদ্ধতিতে পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি ও রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ বায়োসিকিউরিটি প্রদান করে। এই পদ্ধতিতে বিদ্যমান ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া ও বাইরে থেকে সরবরাহকৃত কার্বনকে ব্যবহার করে অণুজীব আমিষ তৈরি করে। এক্ষেত্রে বায়োফ্লক প্রযুক্তি উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাছের অব্যবহৃত খাদ্য, মল-মূত্র থেকে নিঃসৃত অ্যামোনিয়াকে ব্যবহার করে অণুজীব প্রোটিন তৈরি করার ফলে বাহির থেকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য কম সরবরাহ করলেও হয়।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে ছোট ছোট ট্যাংকে অনেক মাছ উৎপাদন সম্ভব হয় এবং ট্যাংকের পানি খুব কম পরিবর্তন করতে হয় তাই অল্প জমি ও অল্প পানি ব্যবহার করে অধিক মাছ উৎপাদন সম্ভব হয়। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন নেই বললেই চলে। তাই এটি একটি পরিবেশ-বান্ধব মাছ চাষ পদ্ধতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হচ্ছে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

 

ফ্লক কি?

শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, বিভিন্ন ধরণের জৈব কণা যেমন মাছের মল ও অব্যবহৃত ফিড ইত্যাদির সমষ্টি। পানিতে ফ্লক একসাথে মিউকাসের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে যা ব্যাকটিরিয়া দ্বারা খাদ্যে রূপান্তরিত হয়।

বায়োফ্লক কী কাজ করে?

এই প্রযুক্ততে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয় যা উপকারী ব্যাকটেরিযা। এগুলি কেই আমরা প্রোবায়োটিক বলছি। এই প্রোবায়োটিকগুলি ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়াকে হত্যা করে।

সুতরাং পানির গুণাগুণ বজায় বজায় থাকে। জলের নাইট্রোজেনকে প্রোটিনে রূপান্তর করার ক্ষমতাও এই প্রোবায়োটিকগুলির রয়েছে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

 

বায়োফ্লক সিস্টেমের কাজ কি?

বায়োফ্লক দুটি আলোচনামূলক পরিষেবা সরবরাহ করে-

  • মাছকে খাওয়ানো, পুষ্টি সরবরাহ ও চিকিৎসা করা সহজ ও কম খরচ হয়।
  • সিস্টেমে পানি পরিবর্তন হার কম (প্রতিদিন 0.5 থেকে 1 শতাংশ)।

মাছগুলো ট্যাঙ্কে বর্জ্য উত্পাদন করে। প্রোবায়টিক/উপকারি অনুজীব এই বর্জ্যগুলিকে প্রোটিন/পুষ্টিতে রূপান্তর করে। যা মাছের জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

 

বায়োফ্লক সিস্টেম কীভাবে কাজ করে?

বায়োফ্লক প্রযুক্তি হলো একটি রিসাইকেলিং প্রক্রিয়া যেখানে পানিতে উৎপন্ন বর্জ্য খাদ্যে রুপান্তরিত হয়। পানিতে সামান্য কার্বন থাকে যা নাইট্রোজেন যুক্ত বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেলিং করতে পারে না এজন্য কর্বনের সোর্স হিসাবে চিটাগুর ও প্রোবায়টিক ব্যবহার করা হয় যা পানিতে থাকা বর্জকে খাবারে রুপান্তরিত করে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

 

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে কীভাবে ফ্লক বজায় রাখা যায়?

ফ্লকের পরিমাণ 30 থেকে 40 মিলি / 1000 মিলি বজায় রাখতে হবে। এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যদি ফ্লক হ্রাস পায় তবে ট্যাঙ্কে অ্যামোনিয়া স্তর বৃদ্ধি পাবে, যদি ফ্লক বৃদ্ধি পায় তবে পানি সংবেদনশীল হয়ে উঠবে এবং মাছের শ্বাস নিতে অসুবিধা হবে। সুতরাং ফ্লক রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যদি ফ্লক বৃদ্ধি পায় তবে পানি পরিবর্তন করতে হবে।

যদি ফ্লক হ্রাস পায় তবে আপনার ট্যাঙ্কে সামান্য চিটাগুড়ের সাথে 25 মিলিগ্রাম প্রোবায়োটিক যুক্ত করুন।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

 

বায়োফ্লোক মাছ চাষের জন্য জলে কী পরীক্ষা করা হয়?

  • লবনাক্ততা
  • টিডিএস (মোট দ্রবীভূত কঠিন)
  • পিএইচ (হাইড্রোজেনের শক্তি বা হাইড্রোজেনের সম্ভাব্য)
  • ট্যান (মোট অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন) / অ্যামোনিয়া, অ্যামোনিয়ার অধীনে আমরা এনএইচ 3 এবং এনএইচ 4 পরীক্ষা করি
  • তাপমাত্রা
  • সি: এন অনুপাত (কার্বন থেকে নাইট্রোজেন অনুপাত)

 

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

 

টিডিএস (TDS)

টিডিএস (TDS) শব্দের পূর্ণ রূপ হলো টোটাল ডিসলভড সলিডস (Total dissolved solids (TDS)। অর্থাৎ সম্পূর্ণ দ্রভীবুত বস্তু কণা।

পানির টিডিএস (TDS) কী?

টোটাল ডিসলভড সলিডস (Total dissolved solids, TDS হলো পানিতে উপস্থিত আয়নযুক্ত বা ক্ষুদ্র কণা এবং পানিতে উপস্থিত সমস্ত অজৈব এবং জৈব পদার্থগুলির দ্রবীভূত পরিমাপ। টিডিএসকে মাঝে মাঝে প্রতি মিলিয়নে অংশ হিসাবে উল্লেখ করা হয়- parts per million (ppm)। ডিজিটাল টিডিএস মিটার দ্বারা পানির টিডিএস নির্ণয় করা যেতে পারে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে টিডিএস কী?

পানি প্রাকৃতিক পুকুর থেকে নেওয়া উচিৎ (মিনারেল বা খনিজ পানি নয়), এরপর পানির টিডিএস পরীক্ষা করুন এটিতে সাধারণত টিডিএস স্তর 400-500 হযয়ে থাকে। পানিতে সমুদ্রের লবণ যুক্ত করুন (দ্রষ্টব্য: – আয়োডিনযুক্ত লবণ নয়) পানির টিডিএস স্তর বাড়ানোর জন্য। 1 কেজি লবণ / 1000 লিটার পানি, এই অনুপাতে। টিডিএস কিছু সময়ের পরে 1000 লিটার পানির জন্য 1000 বৃদ্ধি পাবে। 1800-1900 জলের টিডিএস নিয়ে আসা উচিত।

বায়োফ্লোক মাছ চাষের জন্য কত টিডিএস দরকার?

টিডিএস বায়োফ্লোকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, টিডিএস 1800 থেকে 2000 এর মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।

টিডিএসটি যদি 1800 এর চেয়ে কম হয় তবে জলে প্রাকৃতিক কাঁচা লবণ যুক্ত করুন। কাঁচা নুন সমুদ্র থেকে প্রাপ্ত হবে এবং অপ্রসারণযোগ্য হবে।

যদি টিডিএস 2000 এর চেয়ে বেশি হয়, তবে এটিতে আরও টাটকা জল যুক্ত করুন।

বায়োফ্লোক ট্যাঙ্কে টিডিএস কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?

টিডিএস যদি 1800 এর চেয়ে কম হয় তবে পানিতে প্রাকৃতিক কাঁচা লবণ যুক্ত করুন। কাঁচা নুন সমুদ্র থেকে প্রাপ্ত হবে এবং অপ্রসারণযোগ্য হবে। যদি টিডিএস 2000 এর চেয়ে বেশি হয়, তবে এটিতে আরও টাটকা জল যুক্ত করুন।

বায়োফ্লোকের জন্য টিডিএস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, টিডিএস 1800 থেকে 2000 এর মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।

পিএইচ (pH)

রসায়নে, পিএইচ (pH) এর সম্পূর্ণ ফর্ম ( power of hydrogen or potential for hydrogen )। এটি একটি স্কেল বা পরিমাপের একক যা পানির অম্ল ও খারত্বের অনুপাতকে নির্দেশ করে। পানি যদি এসিটিক বা অম্লিয় হয় তাহলে পিএইচ এর মান কম হয় আর পানি খারীয় হলে পিএইচের মান বাড়ে।

পিএইচ (pH) কি?

পিএইচ হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্বের একটি পরিমাপ বা পানির অম্লতা বা ক্ষারত্বের একটি পরিমাপ। পিএইচ স্কেল সাধারণত 0 থেকে 14 এর মধ্যে থাকে। 25 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বা ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পানির পিএইচ ৭ এর কম হলে এটি অম্লিয় আর ৭ এর বেশি হলে এটি ক্ষারীয় হয়।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে কত পিএইচ (pH) প্রয়োজন?

পিএইচ প্রায় 6 থেকে 8 প্রয়োজন।

দ্রষ্টব্য: – পিএইচ সমস্ত মাছের জন্য এক নয়, বিভিন্ন মাছের বিভিন্ন পিএইচ প্রয়োজন। বায়োফ্লক মাছ চাষের ক্ষেত্রে এর মান ৭ এর কম হলে তবে এটি নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়াটিকে প্রভাবিত করতে পারে।

পানির পিএইচ কী?

মাছ চাষের জন্য pH খুবই গুরুত্বপূর্ণ। pH এর মান ৪ এর কম ও ১০ এর বশি হলে মাছ বাচতে পারে না। অপর দিকে ৬-৮ এর মধ্যে থাকলে মাছ ভালো থাকে এবং দ্রুত বাড়তে পারে।

কিভাবে বায়োফ্লকে পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়?

বায়োফ্লোকের জন্য পিএইচ মান 6 থেকে 8 এর মধ্যে বজায় রাখা উচিত। যদি পিএইচ 6 এর চেয়ে কম হয় তবে পানিতে চুন (CaCO3 বা চুনা) যুক্ত করুন। যদি পিএইচ 8 এর চেয়ে বেশি হয় তবে আরও মিঠা জল যুক্ত করুন।

আপনি কীভাবে পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করবেন?

পাতিত জল বা খাঁটি জলের একটি পিএইচ স্তর 7 থাকে যার অর্থ এটি নিরপেক্ষ।

আপনি যদি পানির পিএইচ বৃদ্ধি করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই এটিতে একটি ক্ষারযুক্ত উপাদান যেমন বেকিং পাউডার যুক্ত করতে হবে।
আপনি যদি পানির পিএইচ হ্রাস করতে চান তবে আপনি এটিতে একটি অম্লীয় পদার্থ যেমন লেবুর রস যুক্ত করুন।

বায়োফ্লোক মাছ চাষে টিএএন এর পূর্ণরূপ কী?

ট্যান নামক মোট অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন, এটি মূলত অ্যামোনিয়া।

বায়োফ্লোক মাছ চাষে ট্যান কী?

ট্যান (মোট অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন) পানিতে এনএইচ 3 এবং এনএইচ 4 + আকারে মোট নাইট্রোজেনের পরিমাণ। জলে অ্যামোনিয়া (এনএইচ 3) দ্রবীভূত অ্যামোনিয়াম আয়নগুলি (এনএইচ 4 +) সহ ভারসাম্যের মধ্যে উপস্থিত থাকে। দ্রষ্টব্য: – জলজ চাষে, টিএএন ঘনত্ব অবশ্যই 0.5 মিলিগ্রাম / এল এর চেয়ে কম হওয়া উচিত।

অণুজীব দ্বারা জলে টিএন ব্যবহার করে কতটি প্রক্রিয়া?

মাইক্রো-অর্গানিজমের জলে ট্যান (মোট অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন) ব্যবহার করে বায়লফোক টু প্রসেসে।
1.সাম্যকরণ প্রক্রিয়া
২.অনুক্রমিককরণ প্রক্রিয়া

বায়োফ্লোকের মধ্যে আত্তীকরণ প্রক্রিয়াটি কী?

হিটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া টিএএনকে মাইক্রোবায়াল প্রোটিনের সাথে মিলিত করে। এই প্রক্রিয়াতে উভয় নাইট্রোজেন এবং কার্বন উত্স থাকা উচিত। ভিয়েতনাম লিনহের কয়েকটি উল্লেখ অনুসারে, সি: এন> 15 অনুপাতটি হ্যাঁরোট্রফিক ব্যাকটেরিয়ার জন্য ট্যান গ্রহণের জন্য ভাল হার হিসাবে বিবেচিত হয় এবং নিম্ন স্তরে পানিতে টিএএন ঘনত্ব বজায় রাখে।

অ্যাকোয়াচারাল্ট মডেল বায়োফ্লোকে, বায়োফ্লোক কণাগুলিতে অন্যান্য জীব এবং জৈব কণাগুলির সাথে লেগে থাকা ব্যাকটিরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

০.০ থেকে কয়েক মিমি অবধি বায়োফ্লোক কণা হ’ল খামারযুক্ত মাছ এবং চিংড়ির জন্য সরবরাহকারী প্রোটিনের উত্স।

বায়োফ্লোকের নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়া কী?

নাইট্রিফিকেশন ট্যানকে (মোট অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন) নাইট্রেটে রূপান্তর করে। এই রূপান্তর প্রক্রিয়াতে, প্রথম ধাপে, টিএন নাইট্রাইটে রূপান্তরিত হয় (NO2-, বিষাক্ত)। এর পরে, নাইট্রাইট (NO2-) নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয় (NO3-)। এই দুটি পদক্ষেপের জন্য ব্যাকটিরিয়া এবং অক্সিজেনের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

পানির লবণাক্ততা

লবণাক্ততা হ’ল নোনতা বা জলের শরীরে লবণের পরিমাণ। তার মানে মিঠা পানিতে কত লবণ? উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি 1 গ্রাম লবণ এবং এক হাজার গ্রাম জল থাকে তবে আপনার লবণাক্ততা 1 গ্রাম / কেজি বা 1 পিপিটি হয়।

পানির লবণাক্ততা কীভাবে পরিমাপ করা যায়?

পানির লবণাক্ততা বলতে পানিতে কতটা লবণের পরিমাণ রয়েছে? হাইড্রোমিটার ব্যবহার করে বা লবণাক্ততা মিটার নামে পানির লবণাক্ততা পরিমাপ করতে।

তাপমাত্রা

বায়োফ্লোক চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত তাপমাত্রা 22 থেকে 29 ডিগ্রির মধ্যে যে কোনও জায়গায়। যখন তাপমাত্রা 30 ডিগ্রির উপরে চলে যায় তখন আমার ফ্লুক নেমে আসে এবং সেখানে অ্যামোনিয়াতে বৃদ্ধি ঘটে। কিছু সময় মাছ মারা যায় তাই যখন তাপমাত্রা 31 ডিগ্রির উপরে চলে যায় তখন আমি শীতল পুকুরে মাছগুলি স্থানান্তর করতে পছন্দ করি।

অ্যামোনিয়া কি?

অ্যামোনিয়া হ’ল মৎস্য সংস্কৃতিতে উত্পন্ন বর্জ্য এবং বিষাক্ত যৌগ। অ্যামোনিয়া আপনার মাছের জন্য খুব বিপজ্জনক।

অ্যামোনিয়া কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?

অ্যামোনিয়া আপনার মাছের জন্য খুব বিপজ্জনক। অ্যামোনিয়া 10: 1 কার্বন থেকে নাইট্রোজেন অনুপাত (যার অর্থ সি: এন অনুপাত) বজায় রেখে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

জেনে নিন পিএইচ হ্রাস করার পাশাপাশি জলের তাপমাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। সুতরাং আপনার কাছে নতুন জল দিয়ে জল মিশিয়ে দেওয়ার, জল ঠান্ডা করার বা পিএইচ কমিয়ে দেওয়ার পছন্দ রয়েছে।

বা ফিল্টারিং সিস্টেমের মাধ্যমে জলটি পাম্প করুন যা অ্যামোনিয়াকে ক্যাপচার করবে বা নাইট্রেটে রূপান্তর করতে জীবাণু ব্যবহার করবে (ভাল বায়ুচঞ্চলের প্রয়োজন)

বায়োফ্লোক মাছ চাষে এনএইচ 3 কী?

জলে অ্যামোনিয়াাকাল নাইট্রোজেন সর্বদা NH3 + NH4 আকারে থাকে। এনএইচ 3 (অ্যামোনিয়া) একটি গ্যাস এবং কখনও কখনও এটি বিষাক্ত বা ফ্রি অ্যামোনিয়া বলে। এই ধরণের অ্যামোনিয়া বিপজ্জনক অংশ। এটি ইউনিয়নযুক্ত অ্যামোনিয়া (এনএইচ 3) যা মাছকে মেরে ফেলে।

বায়োফ্লোক মাছ চাষে এনএইচ 4 কী?

জলে অ্যামোনিয়াাকাল নাইট্রোজেন সর্বদা NH3 + NH4 আকারে থাকে। এনএইচ 4 (অ্যামোনিয়াম) একটি নন-অ্যাটাক লবণ। এটি অ্যামোনিয়ার আয়নযুক্ত রূপ। আপনার মাছের জন্য এনএইচ 4 খুব ভাল।

কীভাবে অ্যামোনিয়া (এনএইচ 3) এবং নাইট্রাইট (এনও 2-) হ্রাস করবেন?

দ্রুততম পদ্ধতিটি হল জল পরিবর্তন করা। যখন জল পরিবর্তন করা যায় না, জলাশয়ে জলাশয় / ট্যাংকগুলিতে জৈব কার্বনের পরিপূরক প্রয়োজনীয় কারণ এটি হিটারোট্রফিক ব্যাকটিরিয়া “হজম” অ্যামোনিয়াকে সহায়তা করে। চিনি এবং গুড় জলাশয় / ট্যাঙ্কে জলের জৈব কার্বনের উত্স। এছাড়াও, অ্যানারোবিক ব্যাকটেরিয়া, স্থিতিশীল পিএইচ এবং ঘনত্বের অ্যালগাল-ব্যাকটেরিয়াগুলির পর্যাপ্ত অক্সিজেন সমর্থনকারী কার্যক্রমও নিশ্চিত করতে হবে।

প্রোবায়োটিক কী?

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে প্রোবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যাকটিরিয়া, পুষ্টি উপাদান, মাইক্রো এবং ম্যাক্রো মিনারেল এর সমষ্টি যা ফ্লক, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাছের উন্নত বিকাশের জন্য এটি একটি আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে, পানির গুণমান উন্নত করে এবং বজায় রাখে।

কোন ব্যাকটিরিয়া বায়োফ্লকে ব্যবহৃত হয়?

বায়োফ্লকে কিছু অণুবিক্ষণীক জীব ব্যবহার করা হয় যেমন- হেটেরোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া (heterotrophic bacteria), শৈবাল বা শেওলা (algae), ছত্রাক (fungi), নেমাটোড (nematodes), মেটাযোয়া (metazoans), ডেট্রিটাস (detritus) ইত্যাদি। এগুলো সবই জলজ এক কোষি প্রাণি।

সি এন রেশিও

গ: এন অনুপাত বলতে সি: এন অনুপাত বলে কার্বন এবং নাইট্রোজেন অনুপাত। যদি আমরা বায়োফ্লোক ট্যাঙ্কে 1 মিলিগ্রাম অ্যামোনিয়া শেষ করি তবে আমাদের 10 মিলিগ্রাম কার্বন (10: 1) প্রয়োজন।

এফসিআর কী?

বায়োফ্লোক মাছ চাষে এফসিআর এর সম্পূর্ণ ফর্ম হ’ল ফিড রূপান্তর অনুপাত। এফসিআর (ফিড রূপান্তর অনুপাত) 1 কেজি মাছের ওজন বাড়ানোর জন্য মাছ খাওয়ার পরিমাণ।

বায়োফ্লোক মাছ চাষে এফসিআর কী?

এফসিআর (ফিড রূপান্তর অনুপাত) 1 কেজি মাছের ওজন বাড়ানোর জন্য মাছ খাওয়ার পরিমাণ। ফিড রূপান্তর অনুপাত একটি সূচক যা সাধারণত সব ধরণের কৃষিতে ব্যবহৃত হয়। এফসিআর হ’ল ফিডটি দেওয়া ফিডের ইনপুট এবং জনসংখ্যার ওজন বাড়ানোর মধ্যে গাণিতিক সম্পর্ক।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ কী?

বায়োফ্লোক ফিশ ফার্মিং, ফিশ ফার্মিংয়ের একটি লাভজনক পদ্ধতি। খোলা পুকুরের মাছ চাষের বিকল্প হিসাবে এটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি একটি স্বল্প ব্যয়যুক্ত উপায় যেখানে মাছের জন্য বিষাক্ত পদার্থ যেমন অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট এবং নাইট্রাইটকে ফিডে রূপান্তর করা যায়। এই কৌশলটির মূলনীতি পুষ্টি পুনর্ব্যবহার করা।

বায়োফ্লোক ফিডের অতিরিক্ত উত্স দেওয়ার সময় মাছের সংস্কৃতি জল পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।

এটি একটি টেকসই এবং পরিবেশ বান্ধব প্রক্রিয়া। উচ্চ ঘনত্বে মাছ পালনের জন্য কিছু বর্জ্য পরিচালনার ব্যবস্থা প্রয়োজন। বায়োফ্লোক মূলত এটি একটি বর্জ্য চিকিত্সা সিস্টেম। একটি খামারে আগত জল থেকে রোগ প্রতিরোধের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ কি লাভজনক?

অনেক লোক যারা বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করেছেন তারা উত্পাদন এবং লাভের উন্নতি হওয়ায় এটি থেকে প্রচুর আয় হয়েছে। এটি মাছ উত্থাপনে প্রয়োজনীয় সময়ও হ্রাস করেছে যার অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাছগুলি বহুবার বাড়ানো যায়। সুতরাং, বায়োফ্লোক প্রযুক্তি মাছ উৎপাদন এবং লালন পালনে লাভজনক।

কোন মাছ বায়োফ্লকের জন্য সবচেয়ে ভাল?

প্রায় সমস্ত বায়োফ্লক সিস্টেম চিংড়ি, তেলাপিয়া, শিং, কৈ ও কার্প মাছ বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হয়।

প্রয়োজনীয় বায়োফ্লক সরঞ্জাম গুলো কি কি?

প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সমূহ-

চুন [ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (চুনা)।]
চিটাগুড় বা মোলাসেস।
কাঁচা সল্ট, সমুদ্র থেকে প্রাপ্ত লবণ।
প্রোবায়োটিক
টাটকা পানি
ফিশ ফার্মিংয়ের জন্য পিভিসি ট্যাঙ্ক / সিমেন্টের ট্যাঙ্ক
বায়ুচালিত করার জন্য এরটর পাম্প

পানি প্রস্তুতি কিভাবে করতে হবে?

প্রথমে ট্যাঙ্কটি ধুয়ে নিন, ওয়াশিংয়ের পরে ট্যাঙ্কিতে জল ভরাট শুরু করুন। প্রায় 35-50% টাটকা জল দিয়ে ট্যাঙ্কটি পূরণ করুন। 50% এর বেশি পূরণ করবেন না কারণ ব্যাকটেরিয়ার বিকাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিবেশের প্রয়োজন। জল ভলিউমের উপর নির্ভর করে নীচে বর্ণিত অনুপাতের সাথে গ্রেডিয়েন্টগুলি যুক্ত করুন।

চুন 0.05g / লিটার,
গুড় 0.1g / লিটার এবং
প্রোবায়োটিক 0.03g / লিটার, যুক্ত করুন।
বায়োফ্লোক ট্যাঙ্কে গ্রেডিয়েন্ট যুক্ত করা বায়োফ্লোক প্রযুক্তিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সুতরাং দয়া করে এই পদক্ষেপগুলি যথাযথভাবে এবং সাবধানে অনুসরণ করুন। উপরে উল্লিখিত গ্রেডিয়েন্টগুলি মিশ্রণের পরে 3-7 দিনের জন্য ট্যাঙ্কটিকে উচ্চ বায়ুতে লাগিয়ে দিন। এর মধ্যে, প্রোবায়োটিকগুলির কারণে, এটি পানিতে বর্তমান অ্যামোনিয়া ধ্বংস করতে শুরু করবে যা মাছের জন্য জলজ পরিবেশ তৈরি করতে শুরু করে। এর পরে পানির পিএইচ এবং টিডিএসের মান পরিমাপ করুন।

পিএইচ মান 6 থেকে 8 এর মধ্যে বজায় রাখতে হবে।
টিডিএস 1800 থেকে 2000 এর মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
টিডিএস 1800 এর চেয়ে কম হলে পানিতে প্রাকৃতিক কাঁচা লবণ যুক্ত করুন। যদি টিডিএস 2000 এর চেয়ে বেশি হয়, তবে এটিতে আরও টাটকা পানি যুক্ত করুন। যদি পিএইচ 6 এর চেয়ে কম হয় তবে পানিতে চুন (CaCO3 বা চুনা) যুক্ত করুন। যদি পিএইচ 8 এর চেয়ে বেশি হয়, তবে আরও টাটকা জল যুক্ত করুন।

কিভাবে বায়োফ্লক মাছ চাষ শুরু করবেন?

আপনার সঠিক প্রশিক্ষণ বা দিকনির্দেশনা প্রয়োজন।
ট্যাঙ্ক সেটআপ / ট্যাঙ্ক নির্মাণ।
ট্যাঙ্ক স্যানিটাইজ করুন বা আপনার ট্যাঙ্কটি সঠিকভাবে পরিষ্কার করুন।
আপনার একটি উপাদান প্রয়োজন যা বায়োফ্লক ট্যাঙ্কে ব্যবহৃত হয়।
আপনার ট্যাঙ্কে জল প্রস্তুতি।
জলের প্যারামিটারগুলি যেমন- পিএইচ, টিডিএস, অ্যামোনিয়া, সি: এন রেশিও, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং আরও যে কোনও জিনিস পরীক্ষা করে দেখুন।
স্টোক ফিশ বীজ।
আপনার মাছ স্যানিটাইজ করুন।
স্যানিটাইজ করার পরে আপনি ট্যাঙ্কে রাখতে পারেন। সমস্ত জলের পরামিতি যদি ঠিক থাকে।
এরপরে আপনার মাছের আকার অনুযায়ী আপনার মাছকে পর্যায়ক্রমে খাওয়ান।
সময়ে সময়ে সমস্ত প্যারামিটার জলের পরীক্ষা করুন এবং আপনার মাছের অবস্থাও পরীক্ষা করুন।

  •  

পাঙ্গাশ মাছ চাষ

পাঙ্গাশ মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করবো আজ। আবহমানকাল থেকে পাঙ্গাস মাছ এদেশের মানুষের জন্য রসনার উৎস হিসেবে পরিচিত। এই মাছটি প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এক সময়ে পাঙ্গাস মাছ আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে উচ্চবিত্তের মাছ হিসেবে বিবেচিত ছিল। বর্তমানে পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে নদীর নাব্যতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাথে সাথে এর প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রসমূহ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে পাঙ্গাস মাছের উৎপাদনও ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। তবে পুকুরে পাঙ্গাস চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় আশির দশক থেকেই এর ওপর কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।

 

 

পাঙ্গাস মাছ চাষ

পাঙ্গাশ মাছের বিভিন্ন জাত:

পাঙ্গাস মাঝের জাতগুলোর মধ্যে দেশী পাঙ্গাস ও থাই পাঙ্গাস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। চলুন এদের পরিচয় সম্পর্কে এখন কিছু তথ্য জেনে নেই,

দেশী পাঙ্গাশ:

দেশী পাঙ্গাসের রূপালী রঙের পিঠের দিকে কালচে এবং পার্শ্ব রেখার ওপরে সামান্য ধূসর। এ মাছের দেহে কোন আঁশ নেই। এখনও আমাদের দেশীয় প্রজাতির পাঙ্গাস সুস্বাদু এবং বেশি মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, বহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে এ মাছটি বেশি পাওয়া যায়। এরা প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন নদীসহ প্রধান নদীগুলোতে এর পোনা পাওয়া যায়।

থাই পাঙ্গাশ:

এদের আদিবাস থাইল্যান্ডে, কম্পুচিয়া, ভিয়েতনাম এবং পাশ্ববর্তী অঞ্চলের দেশে। আমাদের দেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সনে বিদেশী এ প্রজাতির মাছের সফল প্রজনন করানো সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক চাষাবাদের ক্ষেত্রে থাই পাঙ্গাস একটি জনপ্রিয় নাম। দেশী পাঙ্গাসের চেয়ে এ জাত দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ মাছটি সর্বোচ্চ ১০-১২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

 

 

পাঙ্গাশ মাছের চাষ পদ্ধতি:

মাছ চাষের পদ্ধতিটি নির্ভর করে পুকুর বা জলাশয়ের বৈশিষ্ট্য, পরিবেশেগত অবস্থা, পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, পুঁজি, মানসম্মত পোনা প্রাপ্তি, বাজার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ের ওপরে। এসব বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় চাষ পদ্ধতিটি কেমন হবে। আজকে আমরা জানব পাঙ্গাস মাছের একক চাষ বা নিবিড় চাষ সম্পর্কে।

 

পাঙ্গাশ চাষের পুকুর নির্বাচন:

  • পাঙ্গাস চাষের পুকুর আয়তাকার হলে ভাল হয়। পুকুরের তলা ভালভাবে সমতল করে নিতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা ১.৫ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত রাখা দরকার।
  • পাঙ্গাস চাষের জন্য দোআঁশ মাটির পুকুর সবেচেয়ে ভাল। জরুরি প্রয়োজনে যাতে দ্রুত পানি দেয়া যায় সেজন্য পুকুরের কাছেই গভীর বা অগভীর নলকূপের ব্যবস্থা রাখা দরকার।
  • বর্ষায় বা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে যাতে করে পুকুর ভেঙ্গে না যায় সেজন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় মেরামত সেরে ফেলতে হয়।
  • সর্বোপরি এমন জায়গায় পুকুরটি বেছে নিতে হবে যেখানে যোগাযোগের সুবিধা ভাল এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

 

পাঙ্গাশ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি:

পুকর নির্বাচন করার পরের কাজটি হলো পুকুরকে ভালভাবে প্রস্তুত করে নেয়া। এবার জেনে নেয়া যাক পুকুর প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

  • পুকুরে নানা প্রকৃতির ও বৈশিষ্ট্যে জলজ আগাছা থাকলে প্রথমেই সেগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • পাঙ্গাস চাষের পুকুরে অপ্রয়োজনীয় ও রাক্ষুসে মাছ যেমন-শোল, বোয়াল, গজার, টাকি, বাইম, মলা, ঢেলা ইত্যাদি মাছকে পাঙ্গাস চাষের আগেই অপসারণ করতে হবে। বিভিন্নভাবেই এদেরকে অপসারণ করা যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে-
  • ঘন ফাঁসের জাল বারবার টেনে সব ধরণের অনাকাক্সিক্ষত মাছ সরিয়ে ফেলতে হবে;
  • পুকুরের পানি পরিষ্কার করে এবং সম্ভব হলে তলার মাটি লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে দিতে হবে;
  • অনেক সময় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করলেও অপ্রয়োজনীয় ও রাক্ষুসে মাছদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে স্থানীয় মৎস্য অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করে এদের দমন করা যেতে পারে।
  • পুকুরকে মাছ চাষের উপযুক্ত ও টেকসই করতে চুন প্রয়োগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সব পুকুরের পানিতে অম্লত্বের সমস্য নেই সেখানে প্রতি হেক্টরের জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। চুন প্রয়োগের আগে গুড়ো করে মিহি করে নিলে এর কার্যকারিতা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
  • পুকুরের প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জৈব এবং রাসায়নিক সার দুটোই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত চুন প্রয়োগের ৪/৫ দিন পর সার প্রয়োগ করতে হয়। নতুন পুকুর এবং বেলে মাটির পুকুরে জৈব সার বেশি প্রয়োগ করতে হয়। তবে পুরাতন কাদাযুক্ত পুকুরে রাসায়নিক সার প্রয়োগের হার বেশি হবে। পুকুর প্রস্তুতকালীন সময়ে জৈব সার হিসেবে প্রতি শতকে ৮ থেকে ১০ কেজি গোবর অথবা ৪ থেকে ৫ কেজি মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার করতে হবে।
  • সারের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য প্রতি শতকে ১০০ গ্রাম টিএসপি জৈব সারের সাথে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ব্যবহার করতে হয়। ব্যবহারের আগে প্রতি শতকে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে মিশ্রনটি সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিন পর পুকুরের পানির রঙ সবুজ বা বাদামী হলে সাধারণত পোনা মজুদের উপযোগী হয়।

 

 

পাঙ্গাশের পোনা সংগ্রহ ও পরিবহন:

পুকুরের প্রস্তুতি শেষ হলে উন্নত গুনাগুন সম্পন্ন পাঙ্গাস মাছের পোনা সংগ্রহ করতে হয়। এ জন্য বিশ্বস্ত কোন হ্যাচারী থেকে পোনা সংগ্রহ করা উচিত। পোনা পরিবহনের সময় বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে যাতে করে পরিবহনের সময় পোনার কোন ক্ষতি না হয়। পরিবহনের আগেই চৌবাচ্চায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পোনাকে উপোস রেখে টেকসই করে নিতে হবে। পরিবহনের সময় পোনাকে বেশি উত্তেজিত করা উচিৎ নয়।

পাঙ্গাশের খাদ্য প্রয়োগ:

পাঙ্গাস চাষে পুকুরে যে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয়, তা মাছের আশানুরূপ ফলনের জন্য যথেষ্ঠ নয়। তাই সুষম খাদ্য প্রয়োগ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে চাষ পর্যায়ে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমান খাদ্য সরবরাহ না করতে পারলে পাঙ্গাসের উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হবে। মাছের খাদ্যের পরিমান মাছের বয়স এবং দেহের ওজনের ওপর নির্ভর করে।

১৫ দিন পর পর নমুনা হিসেবে কয়েকটি মাছের ওজন পরীক্ষা করে দেখতে হবে মাছ ঠিক মতো বাড়ছে কিনা। নির্দিষ্ট পরিমান খাদ্য পুকুরের আয়তন অনুযায়ী নির্ধারিত ৬ থেকে ৮ টি স্থানে প্রদান করা ভাল। দানাদার জাতীয় খাবার ছিটিং এবং সম্পূরক খাবার বল আকারে নির্দিষ্ট জায়গায় সরবরাহ করতে হয়। খাবার একবারে না দিয়ে ২ থেকে ৩ বারে সমানভাবে ভাগ করে প্রয়োগ করলে খাদ্যের কার্যকারীতা অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া প্রয়োজনমতো চুন এবং সার প্রয়োগ করাটাও জরুরি।

পাঙ্গাশ মাছ সংগ্রহ ও বিক্রয় :

বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মাছ মজুদের ৫-৬ মাস পর যখন পাঙ্গাসের গড় ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম হয়, তখনই মজুদকৃত মাছের ৫০% বাজারে বিক্রি করে দিতে হয়। এতে করে অবশিষ্ট মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।

পাঙ্গাশ মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা:

পাঙ্গাস বেশ শক্ত প্রকৃতির মাছ। তারপরও পাঙ্গাসের রোগ—বালাই দেখা দিতে পারে। রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই উত্তম। সেক্ষেত্রে— পুকুর প্রস্তুতকরণ ধাপটি যথাযথভাবে করতে হবে। সুস্থ—সবল রোগমুক্ত পোনা মজুদ করতে হবে। সাধারণত নিম্নমানের চাষ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত ধকলের কারণে পাঙ্গাস মাছ প্রোটোজোয়া ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়।

এসব ব্যাকটোরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসায় তঁুত ব্যবহার বেশ ফলদায়ক ইকঈ (ইবহুধষ কড়হরঁস ঈযষড়ৎরফব) দ্রবণে ৭—১০ দিন আক্রান্ত মাছকে গোসল করালেও প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক যেমন— টেট্রাসাইক্লিন (মাত্রা ৫৫—৭৭ মিগ্রা/কেজি খাবার) খাবারের সাথে মিশিয়ে ৭—১০ দিন আক্রান্ত মাছকে খাওয়ালে প্রতিকার পাওয়া যাবে।

 

 

পাঙ্গাশ মাছের একক চাষ পদ্ধতি:

পাঙ্গাস মাছের একক চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের পাঠ। এই পঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র এর ইউনিট-১ এর পাঠ -১.৫ এর অংশ। আবহমানকাল থেকে পাঙ্গাস মাছ এদেশের মানুষের জন্য রসনার উৎস হিসেবে পরিচিত। এই মাছটি প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এক সময়ে পাঙ্গাস মাছ আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে উচ্চবিত্তের মাছ হিসেবে বিবেচিত ছিল।

বাংলাদেশের নদ—নদীতে এক সময় প্রচুর দেশী পাঙ্গাস পাওয়া যেত। নদী থেকে মাছটির পোনা সংগ্রহ করে পুকুর দীঘিতে চাষের চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু সফলতা আসেনি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। পরবর্তিতে ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ড থেকে “থাই পাঙ্গাস” আমদানি করা হয়। ১৯৯৩ সালে মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউটে থাই পাঙ্গাসের পোনা উৎপাদনের সফলতার পর থেকে এর চাষ ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে।

এ পদ্ধতিতে কম সময়ে বেশি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বেশি ঘনত্বে পোনা মজুদ করা হয়। এক্ষেত্রে আমিষ সমৃদ্ধ কৃত্রিম খাবার প্রয়োগের মাধ্যমে বেশি মুনাফা করা যায়। উন্নত চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ২০ টন পাঙ্গাস উৎপাদন করা সম্ভব। একক চাষে প্রতি হেক্টরে ৮ থেকে ১০ সেমি. আকারের ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বিগত বছরের পোনা মজুদ করে অধিক উৎপাদন ও বেশি মুনাফা বাড়ানো সম্ভব।

 

থাই পাঙ্গাশ মাছের একক চাষ :

জলাশয় বা পুকুরে শুধু একটি প্রজাতি অর্থাৎ শুধু থাই পাঙ্গাস চাষ করলে তাকে থাই পাঙ্গাসের একক চাষ বলা হয়। এ ধরনের চাষ মূলত নিবিড় ব্যবস্থাপনায় করা হয়। থাই পাঙ্গাস মাছের একক চাষ পদ্ধতির ধাপগুলো নিচে আলোচনা করা হল:

পুকুর নির্বাচন বন্যামুক্ত আলো—বাতাস পূর্ণ এলাকায় পুকুর নির্বাচন করতে হবে। এঁটেল দো—আঁশ বা দো—আঁশ মাটির পুকুর পাঙ্গাস চাষের জন্য উত্তম। পুকুর আয়তাকার হলে ব্যবস্থাপনা করতে সুবিধা হয়। পুকুরের আয়তন হতে হবে ২৫—১০০ শতাংশ এবং গভীরতা হবে ১.৫—২ মিটার। পুকুরের তলায় কাদার পরিমান ১৫ সে.মি এর বেশি না থাকাই ভাল।

 

থাই পাঙ্গাশ মাছ চাষের সুবিধা :

(১) সব ধরনের জলাশয়ে চাষযোগ্য।

(২) চাষের জন্য পোনা পাওয়া যায়।

(৩) দ্রুত বর্ধনশীল।

(৪) একক ও মিশ্র প্রজাতির সাথে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়।

(৫) সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করে।

(৬) পরিবেশের প্রতিকূলতা সহ্য করতে পারে।

(৭) দাম কিছুটা কম হলেও বাজার চাহিদা ভাল।

(৮) জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়।

(৯) বিদেশেও রপ্তানিযোগ্য।

 

একক পাঙ্গাশ চাষের  জন্য পুকুর প্রস্তুতকরণ :

জলজ আগাছা দমন, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণি দমন এবং পাড় ও তলা মেরামত করার পর যথাক্রমে চুন ও সার প্রয়োগ করে চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করতে হয়। উক্ত কাজগুলো যথারীতি আগের মতই করতে হবে (কই চাষের পুকুর প্রস্তুতকরণ অংশ দেখে নিতে পারেন)।

চুন ও সার প্রয়োগের ক্ষেত্রেও কই মাছের একই মাত্রা প্রযোজ্য। তবে অধিক ঘনত্বে পাঙ্গাস চাষ করলে পুকুরে জৈব সার প্রয়োগ না করাই উত্তম। কারণ পাঙ্গাস চাষে যে পরিমাণ খাদ্য প্রয়োগ করা হয় তাতে পাঙ্গাসের মল—মূত্রের কারণে পরিবেশ এমনিতেই উর্বর থাকে এবং পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মে। অনেক সময় প্রাকৃতিক খাদ্যাধিক্যের ফলে মাছের সমস্যা দেখা দেয়। যে সব খামারি ভাসমান খাদ্য দিয়ে অধিক ঘনত্বে পাঙ্গাস চাষ করবেন তাদের ক্ষেত্রে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখা উচিত।

পোনা মজুদ পুকুর প্রস্তুতির কাজ চলাকালীন ভাল পোনার জন্য নির্ভরযোগ্য নার্সারি/হ্যাচারি মালিকের সাথে যোগাযোগ শুরু করা বাঞ্চনীয়। ভাল ব্যবস্থাপনা আর ভাল খাবার খাওয়ালেই যে মাছের ভাল উৎপাদন পাওয়া যাবে তা অনেক সময় ঠিক নাও হতে পারে। ভাল উৎপাদন পাওয়ার পূর্বশর্ত হল ভালো মানসম্মত পোনা। অন্তঃপ্রজনন জনিত সমস্যার কারণে সব হ্যাচারির পোনার মান সমান নয়। ভাল ও বিশ্বস্ত হ্যাচারির পোনা দেখে কিনতে হবে। পুকুরে মজুদ করার জন্য একটু বড় মাপের পোনা (৬—৭ ইঞ্চি লম্বা) হলে ভাল হয়।

অনেকে অধিক ফলন পেতে আরো বড় আকারের পোনা (১০০১৫০ গ্রাম ওজন/ প্রতিটি) মজুদ করে। সকালের কম তাপমাত্রায় পুকুরে পোনা মজুদ করতে হবে। পোনাকে অবশ্যই পুকুরের পানির সাথে কন্ডিশনিং (অভ্যস্তকরণ) করে তারপর ছাড়তে হবে। নিম্নের সারণি অনুসারে পোনার সংখ্যা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

 

পাঙ্গাশ মাছের একক চাষে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ:

পাঙ্গাসের একক চাষ সম্পূর্ণভাবে সম্পূরক খাদ্য নির্ভর। তাই পাঙ্গাসকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার সরবরাহ করতে হবে। খাদ্য প্রয়োগে ব্যাঘাত ঘটলে উৎপাদনে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। পাঙ্গাসের খাবারে ২৫—৩০% আমিষ থাকা বাঞ্চনীয়। ইদানিং বাজারে বিভিন্ন ধরনের (ভাসমান, ডুবন্ত ইত্যাদি) পিলেট খাদ্য বিক্রি হয়। তবে এসব খাদ্যের আমিষের মাত্রা জেনে তারপার কেনা উচিত। তাছাড়া খৈল, চাউলের কঁুড়া, গমের ভূষি, ফিসমিল, ময়দা/আটা, ভিটামিন প্রিমিক্স ইত্যাদি সমম্বয়ে ৩০% আমিষ সমৃদ্ধ খাবার খামারেই তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে খাদ্যের খরচ কিছুটা কমে যায়। এ ধরনের খাদ্যকে। নিম্নোক্ত হারে উপাদানগুলো ব্যবহার করে সহজেই ৩০% আমিষ নিশ্চিত করা যাবে—

(বি:দ্র: উপাদানগুলোর ব্যবহার মাত্রা যৎসামান্য পরিবর্তন করা যেতে পারে। তবে বেশি পরিমাণ হেরফের করলে কাঙ্খিত আমিষ নিশ্চিত করা যাবে না।) মাছের দেহের ওজনের ৩—৮% হারে খাবার দিতে হবে। চাষের শুরুতে মজুদকৃত পোনার জন্য বেশি হারে খাবার দিতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে ওজন বাড়ার সাথে সাথে তা হ্রাস করতে হবে। সারণিতে বর্ণিত নিয়মে খাদ্য দিলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।

দিনে দুই বার খাবার দিতে হবে। পিলেট খাদ্য পুকুরের বিভিন্ন জায়গায় ছিটিয়ে দিতে হবে। খামারে তৈরি ভিজা খাদ্য পুকুরে স্থাপিত ট্রে—তে দেয়া বাঞ্ছনীয়। আহরণ ও বাজারজাতকরণ : পাঙ্গাসের ওজন ৫০০ গ্রামের ওপর হলে আহরণ করে বাজারজাতকরণ করা যেতে পারে। বেড় জাল, ঝাঁকি জাল ব্যবহার করে অথবা পুকুর শুকিয়ে সমস্ত মাছ একবারে আহরণ করা যেতে পারে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পারিপারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে মাছের চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সারা দেশের প্রায় আড়াই লক্ষ হেক্টর পুকুর, দীঘি ইত্যাদিসহ প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ হেক্টর জলাশয়ে পরিকল্পিতভাবে পাঙ্গাস মাছের চাষ করলে দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যাবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এদেশের বিপুল সংখ্যক বেকার যুব ও যুব মহিলাদের। প্রায় হারিয়ে যাওয়া আমাদের ঐতিহ্য ’মাছে ভাতে বাঙ্গালী’-কে পুনরুদ্ধার করতে তাই পাঙ্গাস মাছের চাষ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

 

লাভজনক উপায়ে মাছ চাষ

লাভজনক উপায়ে মাছ চাষ: বিগত কয়েক দশকে দেশে চাষের অধীনে মাছের উৎপাদনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশ মাছ চাষে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। অধিক ঘনবসতির দেশ হওয়ায় দেশের বাজারে যেমন মাছের ক্রমবর্ধমান চাহিদা আছে তেমনি গ্রামীণ বেকার যুবকের আত্মকর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম পুকুরে মৎস চাষ। অনুকূল আবহাওয়া, মাছ চাষের সহজ প্রযুক্তি, উপকরণের প্রাচুর্যতা গ্রাম পর্যায়ে মৎস চাষের সম্প্রসারণ ঘটছে প্রতিনিয়ত।

লাভজনক উপায়ে মাছ চাষ

অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে আগামী দিনে বাজারে মাছের চাহিদাও বৃদ্ধিপাবে এটাই স্বাভাবিক। উন্নত দেশের মাথাপিছু মাছ গ্রহণের হার আমাদের চেয়েও অনেক বেশি। আমাদের দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রাকৃতিক নানাবিধ কারণে মাছের উৎপাদন কমে আসছে এবং এর বিপরীতে দেশে বাৎসরিক মাথাপিছু মাছ গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি (২০১৪-১৫ সালে ১৫ কেজি, ২০১৯-২০ সালে ২৩ কেজিতে উন্নীত) পাচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ের মাছ চাষিদের সাথে মতবিনিময়ে প্রাপ্ত তথ্য ও নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বিদ্যমান অবস্থার মাঝে কী উপায়ে লাভজনকভাবে মাছ চাষ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো।

চাষ প্রযুক্তি নির্বাচন:

লাভজনক মাছ চাষের জন্য সঠিক চাষ পদ্ধতি নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চাষিপর্যায়ে অনেক ধরনের চাষ প্রচলিত আছে। বিদ্যমান সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এখানে কয়েকটি লাভজনক মাছ চাষের পদ্ধতি উপস্থাপন করা হলোঃ

বড় আকারের পোনা মজুদ করে কার্প মিশ্রচাষ : সাধারণত ৫-৬ ইঞ্চি আকারের শতকে ৫০-৬০ কার্পজাতীয় মাছের পোনা মজুদ করে মাছ চাষের প্রচলন আছে। কিন্তু বর্তমান এর চেয়ে ভাল পদ্ধতি ৫০০ গ্রাম এর বড় পোনা কম ঘনত্বে (শতকে ১০-১২টি; যাতে ২টি হবে উপরের স্তরের মাছ, ৭টি মধ্যস্তরের রুই এবং নিচের স্তরের ১টি মৃগেল ও ১টি কার্পও এবং সর্বস্তরের ১টি গ্রাসকার্প) ছেড়ে অধিক বড় আকারের মাছ উৎপাদন। যত বড় আকারের পোনা মজুদ করা যাবে তত বেশি বড় আকারের দামি মাছ উৎপাদন করা যাবে।

তেলাপিয়ার সাথে কার্প মিশ্র চাষ : একক মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষে অনেকে শতকে ২০০-৩০০ পোনা মজুদ করে চাষ করে থাকেন এটা এখন আর লাভজনক হচ্ছে না। তেলাপিয়া মজুদ কমিয়ে শতকে ১৫০টি (১০ গ্রাম আকারের পোনা) এবং তার সাথে বড় আকারের কাতল ২টি, রুই ৭টি পোনা মজুদ (২৫০-৪০০ গ্রাম ওজনের) করে ৩-৪ মাস চাষ করে যখন তেলাপিয়ার ৩-৪টিতে কেজি হবে তখন ১/৩ ভাগ তেলাপিয়া বিক্রয় করে দিয়ে আবার কয়েক মাস পরে যখন ২টিতে কেজি হবে তখন বাকি ২/৩ ভাগ হতে অর্ধেক তেলাপিয়া মাছ বিক্রয় করে দিতে হবে এবং পরিশেষে অবশিষ্ট তেলাপিয়া প্রত্যেকটি যখন ১ কেজি হবে তখন সম্পূর্ণ মাছ বিক্রয় করে অধিক লাভবান হওয়া যেতে পারে।

শিং, পাবদা এবং গুলসার সাথে কার্প মিশ্রচাষ : শিং, পাবদা ও গুলশা একক চাষে শতকে ১০০০-১৫০০ পোনা মজুদ করে পুকুরে মাছ চাষ প্রচলন আছে । এ ক্ষেত্রে মূল প্রজাতির (ধরুন পাবদা) মাছ কিছুটা কম মজুদ করে (শতকে ৬০০-৭০০টি) সাথে ৩০০-৫০০টি শিং বা গুলসা এবং তার সাথে ১টি কাতল, ৩টি রুই ও ১টি মৃগেল এবং ১৫-২০টি তেলাপিয়া মজুদ করে চাষে সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। চাষের সময় ৬-৭ মাসে রুইজাতীয় মাছ ১.৫-২ কেজি হচ্ছে এবং তেলাপিয়া ১ কেজির উপরে বড় হচ্ছে। অনেকে বছরের শুরুতে ৩ মাসে একক কৈ মাছ চাষ করে একটি ফলন তুলে পুকুর পুনরায় প্রস্তুত করে এ পদ্ধতিতে চাষে যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন।

পাংগাস মাছের সাথে অন্য প্রজাতির মাছের মিশ্রচাষ : শতকে ২০০-৩০০টি পোনা মজুদ করে একক পাংগাস চাষ এখন আর নাই বললেই চলে। অনেকেই পাংগাস চাষ সম্পূর্ণ ছেড়েও দিয়েছেন। আবার অনেকে সমস্যার মধ্যে থেকেও চাষ চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা একক চাষের পরিবর্তে পাংগাসের সংখ্যা শতকে ৭০-১২০টিতে নামিয়ে সাথে ৫০-১০০টি তেলাপিয়া এবং ৮-১২টি বড় আকারের রুইজাতীয় মাছের পোনা মজুদ করে চাষ করছেন এবং লাভবান হচ্ছেন।

এখানে পাংগাস মাছকে লক্ষ করে গরম কালে ডুবন্ত বা ভাসমান এবং শীতে ভাসমান খাবার প্রয়োগ করে বছরে একটি ফসল চাষ করছেন। এক্ষেত্রে একক পাংগাস চাষের থেকে বিনিয়োগ কমে আসছে এবং মোট উৎপাদন কম হলেও চাষি লোকসানের হাত থেকে মুক্ত হয়ে লাভজনকভাবে মাছ চাষ করতে পারছেন। পাংগাস মাছ বিক্রয়ে বিনিয়োগ উঠছে এবং অন্য প্রজাতির মাছসমূহ বিক্রয়ের অর্থ সম্পূর্ণটা লাভ হচ্ছে।

কার্পজাতীয় মাছের সাথে অন্যান্য মাছের মিশ্রচাষ : প্রথমে কার্পজাতীয় মিশ্র চাষের সাথে শিং অথবা পাবদা অথবা গুলসা শতকে ৫০০-৭০০টি মজুদ করে সান্ধ্যকালীন এ মাছের জন্য নির্ধারিত পৃথক খাবার প্রয়োগ করেও সফলভাবে মাছ চাষ করা যেতে পারে।

গলদা চিংড়ি ও কার্প মিশ্রচাষ : কার্প মাছের সাথী ফসল হিসাবে গলদা চিংড়ি চাষ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কার্পজাতীয় মাছ মজুদের আগে শতক প্রতি ৭০-১০০টি হারে গলদা চিংড়ির পিএল ছেড়ে একমাস নার্সারিং করার পরে কার্পজাতীয় মাছ মজুদ করতে হবে। বাজারে এ মাছের ব্যাপক চাহিদার কারণে দাম পাওয়া যায় ভাল।

মাছ চাষ সম্পর্কে সঠিক ধারণা গ্রহণ:

মাছ চাষের একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা গ্রহণ করে চাষে নামতে হবে। শুরুতে স্বল্প পরিসরে মাছ চাষ করে বাস্তব অভিজ্ঞতা গ্রহণ করে বড় পরিসরে যেতে হবে।

 

উপযুক্ত পুকুর নির্বাচন:

যে প্রজাতির মাছ চাষ করা হবে তার জন্য উপযুক্ত পুকুর নির্বাচন করতে হবে। সব পুকুরে সব ধরনের মাছ চাষ করা যায় না। যেমন কৈ মাছ চাষের জন্য নিয়মিত পুকুরের পানি বের করে দেবার ব্যবস্থা থাকতে হবে। পর্যাপ্ত আলো বাতাস সমৃদ্ধ উন্মুক্ত জায়গাতে কার্পজাতীয় মাছসহ পাবদা, গুলসা, চিংড়ি চাষ করলে ভাল হবে। কিছুটা ছায়াযুক্ত জায়গা হলেও শিং, তেলাপিয়া বা শোল মাছের চাষ করা যায়। পুকুরে পানির গভীরতা সব সময় ৬-৭ ফুট হতে হবে। কম গভীরতার পুকুরে মাছের চাষ হয় তবে রোগ-ব্যাধিসহ অন্যান্য সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বেশি গভীর পুকুরে পাংগাস মাছ ভাল হলেও অন্যান্য মাছের ফলন ভাল হয় না।

মাছ চাষের সময় নির্বাচন:

বছরের সব সময় বাজারে মাছের দাম একই রূপ থাকে না। এজন্য মাছ কখন চাষ শুরু করতে হবে কখন বিক্রয় করতে হবে সে বিষয়ে আগেই হিসাব করে মাছের চাষ করতে হবে। সাধারণত মার্চ মাসের দিকে মাছের দাম বাড়তে থাকে এবং আগস্ট পর্যন্ত দাম ভাল থাকে এসময় মাছ বিক্রয় করা যাবে এভাবে হিসাব করে মাছ চাষ করতে হবে।

 

পুকুরে মাছ চাষের ঘনত্ব:

মাছ চাষে একেক প্রজাতির মাছ একেক ঘনত্বে মজুদ করতে হয়। তবে চাষের পুকুরে মাছের ঘনত্ব, মাছের উৎপাদন এবং প্রয়োগকৃত খাদ্যের খাদ্য রূপান্তর হারের (ঋঈজ) একটি সম্পর্ক আছে। মাছের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে মাছের মোট উৎপাদন বেশি করা সম্ভব কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রয়োগকৃত খাদ্যের রূপান্তর হার ভাল হয় না, ফলে চাষে লাভ কমে যেতে পারে। মাছ চাষে উপযুক্ত ঘনত্বের বেশি মাছ ছাড়লে পুকুরের পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ে এবং পরিবেশ ভাল রাখার জন্য নানা প্রকার ব্যবস্থাপনার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় এর ফলে চাষ ব্যবস্থাপনার খরচ বেড়ে যায়, মাছের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতেও পারে।

মাছের খাদ্য ব্যবস্থাপনা:

মাছ চাষে মোট বিনিয়োগের ৭০% অধিক খাদ্য খরচ হয়। সে জন্য কোন খাদ্য প্রয়োগ করলে চাষে লাভ করা যাবে তা মাছের বাজার দর, মাছের প্রজাতি ও চাষ পদ্ধতি বিবেচনায় রেখে নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমান সময়ে মাছের বাজার দর বিষয়টিকে আরো কঠিন করে তুলেছে। বিদ্যমান অবস্থার মাঝে চাষিকে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে মাছের খাদ্য নির্বাচন করতে হবে।

মাছ চাষের পুকুরের পানি পরিবর্তন:

আধুনিক মাছ চাষ সম্পূর্ণভাবে, পুকুরের পানি ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল। চাষের পুকুরে প্রতিদিন খাবার প্রয়োগ করতে হয়। মাছ পুকুরের পানিতেই পায়খানা করে। অবশিষ্ট খাবার এবং মাছের পায়খানার (ঊীপৎবঃধ) কারণে পুকুরের পানি সহজে ভারী হয়ে দূষিত হয়ে যায়। পানি পরিবর্তন করলে পুকুরের এ সমস্যাসহ অনেক সমস্যাই সহজে সমাধান করা যায়। মাছের যে কোন রোগ দেখা দিলে পানি পরিবর্তন সর্বোত্তম সমাধান। শীতের সময় পুকুরে পানি দিতে পারলে মাছ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং খাবার গ্রহণ হার বৃদ্ধি পায়। পুকুরের পানির অক্সিজেন মাত্রা বাড়াবার সহজ উপায় পুকুরে পানি সরবরাহ। তবে সরবরাহকৃত পানি অবশ্যই আয়রন মুক্ত হতে হবে।

 

মাছ চাষের পুকুরে এ্যারেটর স্থাপন:

মাছ চাষের পুকুরে এ্যারেটর সংযোজন করতে পারলে নিরাপদ চাষে কয়েকধাপ এগিয়ে যাওয়া যায়। চাষের পুকুরে দ্রবণীয় অক্সিজেনের অভাব একটি সাধারণ সমস্যা। যান্ত্রিক এ্যারেটর এ সমস্যা দূর করা ছাড়াও পুকুরের সাধারণ অক্সিজেনের মাত্রা (৫ পিপিএম) বাড়িয়ে দেয় ফলে মাছের খাদ্য গ্রহণ হারসহ খাদ্যের হজম হার বৃদ্ধি পায়। মাছের শরীরে খাদ্যের আত্ত্বীকরণ (অংংরসরষধঃরড়হ) বৃদ্ধি পায় ফলে সার্বিকভাবে খাদ্যের ঋঈজ এর মান ভাল হয়। ফলে কম খাবারে মাছের অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়।

নিয়মিত প্রবায়োটিক্স ব্যবহার:

বর্তমান মাছ চাষে প্রবায়োটিক্সের ব্যবহার মাছের পুকুরের পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। প্রবায়োটিক্স হচ্ছে পুকুরে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধির উপকরণ। চাষের পুকুরের তলদেশে প্রতিনিয়ত জৈব পচনশীল দ্রব্য জমতে থাকে। এই জৈব পদার্থ পুকুরের তলদেশে পচে ক্ষতিকর গ্যাসের সৃষ্টি হয় এবং পুকুরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হতে পারে। প্রবায়োটিক্স প্রয়োগের ফলে পুকুরে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার পর্যাপ্ত সৃষ্টি হওয়ার কারণে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া উৎপাদন প্রতিহত হয়।

পুকুরের পরিবেশ উন্নয়ন এবং মাছ চাষকে নিরাপদ রাখার জন্য বাজারে প্রাপ্ত যে কোন প্রবায়োটিক্স ২০-২৫ দিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে। প্রবায়োটিক্স বাজারে দুই ধরনের আছে, কিছু আছে ব্যবহারের আগে চিনির পানিতে ২৪ ঘণ্টা প্রতিপালন করে ব্যবহার করতে হয়। আর কিছু আছে পুকুরে সরাসরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রবায়োটিক্স প্রয়োগের পর পুকুরে কোন প্রকার ব্যাক্টেরিয়া নাশক (ঝধহরঃরুবৎ) প্রয়োগ করা যাবে না।

বর্তমান সময়ে একটু চিন্তাভাবনা করে মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে চাষের প্রযুক্তি নির্ধারণ করে একনিষ্ঠভাবে ধৈর্যসহকারে এগিয়ে গেলে যে কেউ মাছ চাষে সফলতা লাভ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

লেখক : মোঃ তোফাজউদ্দীন আহমেদ, বিভাগীয় উপপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর, রাজশাহী বিভাগ, রাজশাহী।

 

মুগ ডাল চাষ পদ্ধতি

মুগ ডাল চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। মুগ ডালের চাষ পদ্ধতি আমাদের অনেকেরই জানা নেই। মুগ ডাল আমাদের আমিষের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করে থাকে। ডাল একটি আমিষ জাতীয় অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশে প্রায় সব লোকই ডাল খেতে ভালবাসে। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকারের ডালের চাষ করা হয়ে থাকে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মুগডাল। আসুন জেনে নেই মুগ ডালের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে-

মুগ ডাল চাষ পদ্ধতি

মুগ ডালের জাত নির্বাচন:

আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি জাতের মুগডাল চাষ করা হয়ে থাকে। সেগুলো হল- বিনামুগ-১, বিনামুগ-৩, বিনামুগ-৪ ও বিনামুগ-৫ ইত্যাদি।

মুগ ডাল চাষের জন্য মাটির গুণাগুণ:

আমাদের দেশে প্রায় সব ধরনের মাটিতেই মুগডাল চাষ করা যায়। তবে সুনিষ্কাশিত দোআঁশ মাটিতে এই ফসল ভাল জন্মে। জমিতে যদি পানি জমে না থাকে, তবে এঁটেল মাটিতেও এর চাষ করা যায়। বেলে দোঁ-আশ ও দোআঁশ মাটিতে এই জাত চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়।

মুগ ডাল চাষের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ:

মুগ ডাল চাষ করার জন্য জমি ভাল করে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিলে ভাল হয়। এতে বীজের অঙ্কুরোদগমের হার বেড়ে যায় এবং ফসলের ফলনও ভালো হয়।

মুগ ডালের বীজের পরিমাণ:

প্রত্যেক একর জমিতে ১৮ থেকে ২০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

মুগ ডালের বীজ বপন:

দুইভাবে মুগ ডালের বীজ বপন করা যায়। একটি হল ছিটিয়ে বীজ বোনা, অপরটি সারিবদ্ধভাবে। তবে এই দুই পদ্ধতির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে বোনা সবচেয়ে ভাল। কারণ, লাইন বা সারি করে মুগ চাষ করলে ফলন ছিটানো পদ্ধতির চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া যায়। সারিতে বীজ বপন করলে প্রতিটি গাছ সমানভাবে বেড়ে উঠতে পারে। গাছের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য- সূর্যালোক, খাদ্য উৎপাদন ও পানি সমানভাবে পেতে পারে বলে ফলনও বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া সারি করে বুনলে মাঠে অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা করা সহজ হয়।

মুগ ডালের পরিচর্যা:

নিয়মিত পরিচর্যা করলে মুগ ডাল চাষে ভাল ফলন পাওয়া যায়। তবে ছিটানো পদ্ধতিতে বপন করা মুগে আগাছা পরিষ্কার করা বেশ কঠিন। তবুও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে যাতে করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। আর ভালো ফলন পেতে হলে অঙ্কুরোদগমের ১৫-২৫ দিনের মধ্যে কমপক্ষে একবার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

মুগ ডালে সার প্রয়োগ:

  • প্রতি একর জমিতে টিএসপি সার ৩৫ থেকে ৪০ কেজি।
  • প্রতি একর জমিতে বোরিকন এসিড ২.৫-৩ কেজি।
  • প্রতি একর জমিতে ইউরিয়া সার ১৬ থেকে ২০ কেজি।
  • প্রতি একর জমিতে এমওপি ১২ থেকে ১৫ কেজি।

চাষ শেষে সব সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য ২-৩ কেজি/একর অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

মুগ ডাল চাষে সেচ পদ্ধতি:

জমিতে সেচ দেওয়ার সময় মাটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। অতিরিক্ত খরা ও জলাবদ্ধতা উভয়ই এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর৷

মুগ ডাল সংগ্রহ:

মুগ ডাল পরিপক্ব হলেই তা সংগ্রহ করতে হবে। মুগ ডালের বীজ বপনের পর ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে মুগ ডাল সংগ্রহের উপযোগী হয়। সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহ করলে বেশি ফলন পাওয়া যায় ৷ মুগ ডাল সংগ্রহ করতে বেশি দেরি করলে এর ভেতরের দানা ঝরে পড়ে যায়।

 

কুল চাষের সহজ নিয়ম

কুল চাষের সহজ নিয়ম নিয়ে আজকের আলোচনা। কুল একটি সুস্বাদু ফল। কোনো কোনো অঞ্চলে একে ‘বরই’ বলা হয়। এটি বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায়, সব ধরনের মাটিতেই জন্মে। আসুন জেনে নেই কুল চাষের নিয়ম-কানুন।

কুল চাষের সহজ নিয়ম

 

 

কুল এর বংশবিস্তার

বীজ এবং কলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা যায়। কলমের চারার বংশগত গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। বীজ থেকে চারা পেতে বীজকে ভেজা গরম বালির ভেতর দেড়-দুই মাস রেখে দিলে তাড়াতাড়ি গজায়। না হলে ৬-৮ সপ্তাহ সময় লেগে যায়। কলমের চারা পেতে নির্বাচিত স্থানে বীজ বপণ ও চারা তৈরি করে তার উপর বাডিংয়ের মাধ্যমে কলম করে নেওয়া ভালো। বলয়, তালি অথবা টি-বাডিং যেকোনো পদ্ধতিতেই বাডিং করা যায়। তালি, চোখ কলমের চেয়ে সহজ।

বাডিং করার জন্য বীজের চারার রুটস্টক বয়স ৯ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হতে পারে। জাত, স্থান ও জলবায়ুভেদে মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুনে শুরু করে মধ্য-আষাঢ় থেকে মধ্য-ভাদ্র মাস পর্যন্ত বাডিং করা যায়। তবে মধ্য-বৈশাখ থেকে মধ্য-আষাঢ় উপযুক্ত সময়। এক্ষেত্রে সায়ন সংগ্রহের উদ্দেশে নির্বাচিত জাত এবং রুটস্টক উভয়েরই পুরনো ডালপালা মধ্য-ফাল্গুন থেকে মধ্য-বৈশাখ মাসে ছাঁটাই করে দিতে হয়। এরপর নতুন শাখাকে বাডিংয়ের কাজে লাগাতে হয়।

কুল চাষের মাটি:

যেকোনো ধরনের মাটিতেই কুলের সন্তোষজনক ফলন পাওয়া যায়। কুলগাছ লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। তবে ভারি ও সামান্য ক্ষারযুক্ত বেলে দো-আঁশ মাটিতে কুলের ভালো ফলন পাওয়া যায়।

 

কুল চাষের জমি তৈরি:

বাগান আকারে চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভালো। তাছাড়া বাড়ির আনাচে-কানাচে, পুকুর পাড়ে বা আঙিনায় পড়ে থাকা অনুর্বর মাটিতেও গর্ত করে চাষ করা যায়।

 

কুল রোপণ:

বাগান আকারে চাষের জন্য বর্গাকার রোপণ প্রণালি অনুসরণীয়। রোপণ দূরত্ব ৬-৭ মিটার। জাত ও স্থানভেদে দূরত্ব কম-বেশি হবে। চারা রোপণের মাসখানেক আগে ১*১*১ মি আকারের গর্ত তৈরি করে নিতে হবে।

 

কুল রোপণের সময়

মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-চৈত্র এবং মধ্য-শ্রাবণ থেকে মধ্য-ভাদ্র রোপণ করা যায়।

 

কুল চাষের সার ব্যবস্থাপনা:

চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে ইউরিয়া ২০০-২৫০ গ্রাম, টিএসপি ২০০-২৫০ গ্রাম, এমপি ২৪৫-২৫৫ গ্রাম, পচা গোবর ২০-২৫ কেজি হারে সার প্রয়োগ করতে হবে। বয়স বাড়র সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি গাছের জন্য সার দিতে হবে-

কুল চাষে সারের প্রয়োগ:

সার বছরে ২-৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। ফল ধরা, ফল সংগ্রহ ও বর্ষার পর সার প্রয়োগ করা ভালো। সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দেওয়া উচিত।

কুল চাষে পরিচর্যা:

শুষ্ক মৌসুমে বিশেষত ফুল ও ফল ধরার সময়ে মাসে একবার সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। চারাগাছ (বীজের বা কলমে) হলে প্রথম বছর গাছটির কাঠামো মজবুত করার জন্য গাছের গোড়া থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার উঁচু পর্যন্ত কোনো ডালপালা রাখা যাবে না। এর উপরে শক্ত-সামর্থ কিছু শাখা-প্রশাখা গাছের অবস্থা অনুযায়ী রাখতে হবে। যেন ডালপালা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

 

কুল গাছ ছাঁটাই:

ছাঁটাইয়ের সময় শক্ত-সামর্থ শাখাগুলোর গোড়া থেকে না কেটে কিছু অংশ রেখে অগ্রভাগ কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া দুর্বল, রোগ ও কীট দৃষ্ট ও ঘনভাবে বিন্যস্ত ডালগুলো গোড়া থেকে কেটে পাতলা করে দিতে হবে। নতুন যে ডালপালা গজাবে সেগুলোও বাছাই করে ভালো ডালগুলো রেখে দুর্বল ডাল কেটে ফেলে দিতে হবে।

 

কুল চাষে ফল সংগ্রহ:

জাত অনুসারে মধ্য-পৌষ থেকে মধ্য-চৈত্র মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। ফলের রং হালকা সবুজ বা হলদে হলে সংগ্রহ করতে হয়। গাছপ্রতি ৫০-২০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।

 

কুল চাষে রোগ বালাই দমন:

কুলের পাউডারি মিলডিউ একটি মারাত্মক রোগ। এতে ফলন হ্রাস পায়। ওইডিয়াম প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। গাছের পাতা, ফুল ও কচি ফল এ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ফুল ও ফল গাছ থেকে ঝরে যায়। গাছের পরিত্যক্ত অংশ এবং অন্যান্য পোষক উদ্ভিদে এ রোগের জীবাণু বেঁচে এবং বাতাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। উষ্ণ ও ভেজা আবহাওয়ায় বিশেষ করে মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

কুল চাষে রোগের প্রতিকার

গাছে ফুল দেখা দেওয়ার পর থিওভিট নামক ছত্রাকনাশক প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। পরবর্তীতে ১৫ দিন পর পর দু’বার স্প্রে করতে হবে।