Category Archives: কৃষি

কৃষি গুরুকুলের “কৃষি” সেকশন হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার যেখানে কৃষির ইতিহাস, ঐতিহ্য, আধুনিক গবেষণা ও কৃষি বিষয়ক অথরিটি প্রবন্ধসমূহ প্রকাশিত হয়। এখানে পাঠকরা কৃষি সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য, উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ও সমৃদ্ধ কনটেন্ট খুঁজে পাবেন।

খিরা চাষ পদ্ধতি

আজ আমাদের আলোচনার বিষয় খিরা চাষ পদ্ধতি। খিরার রস উপকারী। শরীরের পিএইচ সমতা বজায় রাখে খিরা। সুস্থ থাকে বৃক্ক :বৃক্ক(কিডনি), ইউরিনারি ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যায় ডায়েটে খিরা রাখতে পারেন।

খিরা চাষ পদ্ধতি

শসা শুধুমাত্র একটি সতেজ ও বহুমুখী সবজিই নয়, এটি একটি পুষ্টির শক্তিও বটে। হাইড্রেশন প্রচার করা এবং ওজন ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করা থেকে শুরু করে অসংখ্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করা, শসা একটি সুষম খাদ্যের একটি মূল্যবান সংযোজন। শসা সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য অসংখ্য সুবিধা প্রদান করে, তা নাস্তা হিসাবে খাওয়া হোক, সালাদে যোগ করা হোক বা ত্বকের যত্নের রুটিনে ব্যবহার করা হোক। সুতরাং, পরের বার যখন আপনি একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য পৌঁছাবেন, নম্র শসা বিবেচনা করুন এবং এর পুষ্টিগত সুবিধাগুলি কাটান।

খিরা / শসার ১২ স্বাস্থ্য উপকারিতা:

খিরা বা শসা খাওয়ার কিছু উপকারিতা নিচে দেওয়া হল:

  • হাইড্রেশন এবং ওজন ম্যানেজমেন্ট: স্বাস্থ্যের জন্য শসা একটি প্রাচীন প্রবাদ। তাদের উচ্চ জল শতাংশ এবং কম ক্যালোরি গণনার কারণে, শসা হাইড্রেটেড থাকার জন্য এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য একটি চমৎকার পছন্দ। এগুলি কম ক্যালোরি থাকাকালীন পূর্ণতার অনুভূতি প্রদান করে, যা এগুলিকে একটি সুষম খাদ্যের জন্য একটি দুর্দান্ত সংযোজন করে তোলে।
  • হজমশক্তি বাড়ায়: শসায় প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর হজমকে উৎসাহিত করে। ফাইবার মলের জন্য প্রচুর পরিমাণে যোগ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং নিয়মিত মলত্যাগের প্রচার করে। আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করা একটি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র.
  • ত্বকের স্বাস্থ্য: শসার উচ্চ জল উপাদান এবং শীতল বৈশিষ্ট্য ত্বকের স্বাস্থ্য উপকার করে. শসার টুকরো বা শসা-মিশ্রিত পণ্য প্রয়োগ করা রোদে পোড়া ভাব প্রশমিত করতে পারে, ফোলাভাব কমাতে পারে এবং ত্বককে হাইড্রেট করতে পারে। উপরন্তু, শসাতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ত্বকের বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং তারুণ্যের চেহারা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্য: শসাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। পর্যাপ্ত ভিটামিন কে গ্রহণ ক্যালসিয়াম শোষণ উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ফ্র্যাকচার এবং অস্টিওপরোসিসের সম্ভাবনা কমায়। তাই মজবুত ও সুস্থ হাড়ের জন্য আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • হার্টের স্বাস্থ্য: শসাতে পটাসিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। উপরন্তু, শসায় উদ্ভিদ যৌগ কিউকারবিটাসিনের প্রদাহ-বিরোধী প্রভাব রয়েছে, যা হৃদরোগকে আরও সমর্থন করতে পারে।
    ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা: শসার গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে, যা এগুলিকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। শসায় থাকা
  • ফাইবার উপাদান হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি রোধ করে। ডায়াবেটিক ডায়েটে শসা অন্তর্ভুক্ত করা রক্তে শর্করার আরও ভাল নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখতে পারে।
  • চোখের মঙ্গল: শসায় রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেমন বিটা-ক্যারোটিন এবং লুটিন, যা চোখের জন্য উপকারী। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলি সঞ্চালনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে চোখকে রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় এবং ছানি পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে।
  • অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য: শসাতে কিউকারবিটাসিনের উপস্থিতি তাদের শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য দেয়। শসা নিয়মিত সেবন শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, বিভিন্ন অবস্থার উপসর্গ যেমন আর্থ্রাইটিস এবং হাঁপানি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ: শসায় বিভিন্ন যৌগ রয়েছে, যেমন কিউকারবিটাসিন এবং লিগন্যান, যা গবেষণায় ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই যৌগগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং স্তন, জরায়ু এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার সহ নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: শসায় উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বাড়ায় এবং সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় স্নায়ুজনিত রোগ, যেমন আলঝাইমার রোগ। আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করা একটি সুস্থ মস্তিষ্ক বজায় রাখতে অবদান রাখতে পারে।
  • মৌখিক স্বাস্থ্য: শসা চিবানো লালা উত্পাদনকে উদ্দীপিত করে, যা মুখের অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে। উপরন্তু, শসার উচ্চ জল শতাংশ মুখ হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং শুষ্ক মুখের ঝুঁকি কমায়।
  • নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে: মুখের মধ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বা হ্যালিটোসিসের কারণ হতে পারে। শসায় ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা অপ্রীতিকর গন্ধের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করা সতেজ শ্বাসে অবদান রাখতে পারে।

 

খিরার জাত নির্বাচন:

প্রথমে খিরার ভালো জাতের বীজ বেছে নিতে হবে। যেমন ধরুণ শতাব্দী জাত, যেটা খুব উন্নত জাতের বীজ। শতাব্দী, তাজ ৩৬৫, নওগাঁ গ্রিন, নওগাঁ ৫, ইত্যাদি জাতের মধ্যে হাইব্রিড জাতের যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে।

খিরার বীজ জর্মিনেশন:

খিরার বীজগুলো অবশ্যই ৬ ঘণ্টা জলের মধ্যে সুতির কাপড় পেঁচিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপরে জল থেকে আলাদা করে, আরও ছয় ঘণ্টা যদি ওই অবস্থায় রেখে দিতে হবে। এমনটি না করলে সবগুলো বীজের অঙ্কুরোদগম না হবার সম্ভাবনা থাকে।

খিরার জমি তৈরি ও বীজ বপন:

প্রথমত জমির মধ্যে এক ফুট গভীর মাদা তৈরি করতে হবে। মাদার মধ্যে ২-৫ কেজি পরিমানে গোবর দিতে হবে। প্রত্যেকটা মাদার মাটি অবশ্যই ভালোভাবে ঝুরি করতে হবে। জমিতে দুই থেকে তিনবার চাষ দিতে হবে এবং এক থেকে দুইবার মই দিতে হবে।

প্রত্যেকটা মাদার দূরত্ব রাখতে হবে তিন ফুট এবং প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে তিন ৩-৪ টি বীজ বপন করতে হবে। বীজগুলো বপন করার ৪ থেকে ৫ দিন পরে বীজ থেকে সব চারা উঠে যাবে। যখন গাছ উঠে যাবে, তখন নিয়মিত জল দিতে হবে। জল বেশি দেয়া হলে চারা মারা যেতে পারে, এটা মনে রাখা খুবই জরুরী।

খিরার গাছে সার প্রয়োগ:

গাছের বয়স যখন ২০-২৫ দিন হবে, তখন রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে।

  • খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় যাতে সার না পড়ে।
  • গাছের চতুর্দিকে দুই ইঞ্চি বরাবর গর্ত করে রাসায়নিক সার দিতে হবে।
  • গাছের চতুর্দিকে আগাছাগুলো পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
  • প্রথমে যে সার দিতে হবে তা হলো – DAP সার ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম।
  • তারপরে দিতে হবে ইউরিয়া সার ৫০ গ্রাম, প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে।
  • প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে পটাশ সারটা ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম হারে দিতে হবে।
  • তারপর একটা কীটনাশক দিতে হবে, সেটা হচ্ছে- ফুরাডান। প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে পাঁচ গ্রাম করে দিতে হবে।

সার দেওয়ার পর মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং গোড়াটা একটু উঁচু করে রাখতে হবে। এছাড়া সারগুলো দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি দেয়া যাবে না, ১-২ দিন পরে আপনারা জল দিতে হবে। এইভাবে সার প্রয়োগ করলে, খুব দ্রুত গাছে মধ্যে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। চাষে আগ্রহীদের ডিসেম্বর সামনে রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। শীতকালে খিরার বাম্পার ফলন ফলে।

খিরার পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য:

শসায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতায় অবদান রাখে। এগুলি জল, পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং ক্যালোরি, চর্বি এবং সোডিয়াম কম। নিচে শসা সম্পর্কে কিছু মূল পুষ্টির তথ্য দেওয়া হল:

  • ভিটামিন এবং খনিজ: শসা ভিটামিন কে এবং সি এর একটি চমৎকার উৎস। ভিটামিন কে রক্ত ​​জমাট বাঁধার জন্য অপরিহার্য এবং হাড়ের স্বাস্থ্য সমর্থন করে. বিপরীতে, ভিটামিন সি কোলাজেন সংশ্লেষণে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উপরন্তু, শসা পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ সরবরাহ করে, যা সঠিক শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • হাইড্রেশন এবং ডিটক্সিফিকেশন: শসায় প্রায় 96% জল থাকে, যা তাদের একটি চমৎকার হাইড্রেটিং খাবার পছন্দ করে। হজম, বিপাক এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য ভাল-হাইড্রেটেড থাকা অত্যাবশ্যক। অধিকন্তু, শসা একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এবং কিডনির স্বাস্থ্যকর কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস: শসাতে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ট্যানিন সহ বেশ কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের সম্ভাবনা হ্রাস করে, যেমন কার্ডিওভাসকুলার ডিজঅর্ডার এবং কিছু কিছু ক্যান্সার ধরণের.

উপরন্তু, শসাতে রয়েছে কিউকারবিটাসিন, শক্তিশালী যৌগগুলির একটি গ্রুপ যা প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।

বারমাসী হাইব্রিড খিরা শতাব্দী-২:

জাত এর নামঃ
বারমাসী হাইব্রিড খিরা শতাব্দী-২

আঞ্চলিক নামঃ
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানঃ
Chia Thai Seed Company, Thailand

জীবনকালঃ
০ দিন

সিরিজ সংখ্যাঃ

উৎপাদন ( সেচ সহ ) / প্রতি হেক্টরঃ
০ কেজি

উৎপাদন ( সেচ ছাড়া ) / প্রতি হেক্টরঃ
০ কেজি

জাত এর বৈশিষ্টঃ

  • সারা বৎসর চাষ করা যায়।
  • ফলের রং সবুজ, লম্বা ৫ ইঞ্চি, ওজন ২০০-৩০০ গ্রাম।
  • বীজ বপনের মাত্র ৩০-৩৫ দিন পর থেকে খিরা উঠানো শুরু করা যায়।

চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

  • বীজের পরিমাণ : একর প্রতি ১৫০ গ্রাম ( প্রতি শতাংশে ১.৫ গ্রাম)
  • বীজ বপন : ৩ ফুট দূরে লাইন করে ২ ফুট দূরে দূরে একটি করে বীজ বপন করতে হবে। এক জায়গায় একটির বেশি গাছ থাকলে ফলন কম হয়।
  • প্রথম জালি কর্তন : প্রতিটি গাছের প্রথম ২-৩ টি জালি ফুল অবস্থায় ছিড়ে দিতে হবে, এতে গাছের বাড় বাড়তির সুযোগ হবে এবং অনেক বেশী ফলন পাওয়া যাবে। গাছের শাখা প্রশাখা কাটবেন না, কাটলে ফলন কমে যাবে।
  • খুঁটি বা মাচা : খিরা শুকনা মৌসুমে খড় বা নাড়া বিছিয়ে মাটিতে চাষ করা যায় তবে বর্ষা মৌসুমে A টাইপের মাচায় চাষ করতে হবে।
  • সার ব্যবস্থাপনা : শেষ চাষের সময় একর প্রতি প্রচুর পরিমাণে গোবর, ইউরিয়া ৮০ কেজি, টিএসপি ৬০ কেজি, এমওপি ৮০ কেজি, জিপসাম ৫০ কেজি, জিংক সালফেট ৪ কেজি ও বোরাক্স ৪ কেজি।

গুচি মাছ চাষ পদ্ধতি

আমরা আজ গুচি মাছ চাষ পদ্ধতি বা বাইম মাছের প্রজনন ও চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। প্রাকৃতিক জলাশয়ের যত মাছ আছে এর মধ্যে গুচি বা বাইম মাছের কদর অনেক বেশি। বাইম মাছ আগে শুধু প্রাকৃতিক ভাবে জলাশ্বয়ে উৎপাদিত হতো। তবে কৃত্রিম উপায়ে বাইম মাছের প্রজনন ও চাষ আজ সফল।

গুচি মাছ চাষ পদ্ধতি

বাংলা মানুষের প্রিয় মাছের তালিকাতে রয়েছে অন্যন্য বাহারি মাছ(Ornamental) যেমন টেংরা, গুলসা, রাণি ও খলিসা মাছের মত তারা বাইম। প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত তারা বাইম মাছের কদর রয়েছে বাংলা ভাষা ভাষী মানুষের খাদ্য তালিকা তে সে জন্য এ মাছ রপ্তানি করে আসে বৈদাশিক মুদ্র্যা। গুচি মাছ, স্টার বাইম বা তারা বাইম (Macrognathus aculeatus) মাছটি Mastacembelidae পরিবারের আওতাভূক্ত।

দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বাইম বা গুচি মাছের উপকারিতা ও গুরুত্ব অনেক। তারা বাইম মাছে মানুষের দেহ গঠনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রোটিন, ভিটামিন–এ, ক্যালসিয়াম ও আয়রন রয়েছে। ফিস প্রোটিন রক্তে কোলেস্টেরল জমতে দেয় না। মাছে উচ্চমানের প্রোটিন ছাড়াও লাইসিন, থিয়োনিন ও ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে যা মানবদেহ গঠন, সুস্থ ও সবল রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গুচি মাছ বা তারা বাইমের বৈশিষ্ট্যঃ

লম্বা, হলুদাভ, সর্পিলাকার এ মাছের লেজের দিকে গোলাকার তারারমত কালো দাগ থাকায় মাছটি তারাবাইম নামে পরিচিত। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল ও মায়ানমারে পাওয়া যায় ভারতের আসামে এটি পিকক ইল, টোরা, মাড্ ইল নামে পরিচিত। স্টার বাইম মাছটি দেখতে খুবই সুন্দর, বাহারি, খেলোয়াড় মাছ হিসাবে (Playful behavior) এ্যাকুরিয়ামের শোভা বর্ধক মাছ হিসাবে বহুল প্রচলন রয়েছে।

গুচি মাছ বা তারা বাইম মাছের স্বভাব ও বাসস্থানঃ

তারা বাইম মাছ কাদার তলা তে এবং অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা পরিবেশে বাস করতে পছন্দ করে। সুদূর অতীত থেকেই পৃথিবীর প্রাকৃতিক জলাশয়ে খাপ খেয়ে টিকে আছে বহু প্রজাতির মৎস্য কুল। এছাড়া তারা বাইম আবহমান কাল থেকে এ দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও সমাজে প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় এবং পুষ্টি যোগানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। প্রাচীন কাল থেকেই বাংলাদেশের নদ–নদী, খাল–বিল, ডোবা, পুকুর, দিঘি এবং প্লাবন ভূমিতে ছোট দেশিয় প্রজাতির মাছ প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত।

দেশিয় প্রজাতির মাছ এদেশের সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যগতভাবে মিশে আছে। মানুষের চাহিদার সাথে সাথে কালের পরিক্রমায় বিরূপ প্রকৃতি আর প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মানুষের অত্যাচার, জুলুমের ফলে আমাদের সমৃদ্ধ মৎস্য ভান্ডার এখন হুমকির মুখে। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে জলজ পরিবেশের বিপর্যয়, নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, ডুবন্ত জলজ উদ্ভিদ ও শ্যাওলা কমে যাওয়ার কারণেও তারা বাইম মাছটি এখন বিলুপ্তির পথে

স্বাদু পানিতে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা লেখা টি পড়লে আপনার স্বাদু পানির মাছ চাষ বিষয়ক কিছু টেকনিক্যাল বিষয় জানা হবে যা মাছ চাষে সাহায্য করবে।

গুচি মাছ বা তারাবাইম মাছের প্রণোদিত প্রজননঃ

প্রনোদনার মাধ্যমে প্রজনন করাকে প্রণোদিত প্রজনন বলা হয়। প্রাকৃতিক ভাবে মাছের প্রজনন ব্যাঘাত ঘটলে মাছের প্রজনন ও বংশ বিস্তার বাধার সম্মুখিন হ্য় এবং মাছ বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হয়। তারাবাইম মাছের প্রণোদিত প্রজননের ক্ষেত্রে ব্রুড মাছ (মা ও বাবা মাছ) ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্রুড মাছ লালন করার জন্য সাধারণত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পুকুরেই লালন করা ভাল। তবে একটু বড় পুকুর হলেও সমস্য হয় না।

গুচি মাছ বা তারা বাইম মাছের জন্য পুকুর প্রস্তুতিঃ

পুকুর প্রস্তুতির জন্য নিমোক্ত কাজ পর্যায়ক্রমে করতে হবে।

  • নার্সারি পুকুরে আয়তন ১০ থকে ৫০ শতক এবং পানির গভিরতা ৪ থেকে ৫ ফিট হলে ভাল।
  • পুকুর হতে অবঞ্ছিত ও রাক্ষুসে মাছ এবং আগাছা দুর করতে হবে।
  • পুকুরে শুকিয়ে অবঞ্ছিত ও রাক্ষুসে মাছ এবং আগাছা দুর করা উত্তম। তবে পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে প্রতি শতাংশে ১ ফুট পানির জন্য ২৫-৩০ গ্রাম রোটেনন পাউডার অথবা ফোসটক্সিন ট্যাবলেট দিয়ে রাক্ষুসে মাছ দুর করা যায়।
  • রোটেনন দেবার ৩-৪ দিন পর পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
  • চুন প্রয়োগের ৩/৪ দিন পর প্রতি শতাংশে ৫-৭ কেজি গোবর, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৭৫ গ্রাম টিএস পি প্রয়োগ করতে হবে।
  • নার্সারি পুকুরে ৩-৪ ফিট উচু মশারি জালের বেষ্টনি দিতে হবে যাতে সাপ ও ব্যাঙ পুকুরের ভিতরে ঢুকে রেনু ও পোনার ক্ষতি সাধন করতে না পারে।
  • হাস পোকা দমনের জন্য রেনু পোনা মজুদের ২৪ ঘন্টা পূর্বে সুমিথিয়ন দিতে। সুমিথিয়নের ব্যবহারের পরিমান প্যাকের গায়ে লেখা অনুসরণ করা ভাল।
  • পানির রং স্থির রাখতে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম ব্রাইট গোল্ড (দানাদার) প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  • সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর রেনু অথবা ২-৩ ইঞ্ছি সাইজের পোনা মজুদ করা যেতে পারে।
  • পুকুরের তলায় যদি গ্যাস থাকে তাহলে গ্যাস উত্তোলন করার জন্য “গ্যাস টপ” ঔষধ দিতে হবে ।
  • মাছ মজুদ করার পর সরিষার খৈল,অটোচালের কুড়া, আটারভুষি, ফিসমিল, ভিটামিন প্রি–মিক্স ও ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট (২০:৩৩:২৫:২০:১:১) অনুপাতে মিশিয়ে মাছের ওজনের ৪–৫% হারে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ও ভোরে খাবার প্রয়োগ করতে হবে। খাবার মাটির প্লেট অথবা ট্রেতেও দেয়া যেতে পারে।
  • তাছাড়া বাজারের ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ প্যাকেজ ফিড্ও দেয়া যেতে পারে। এভাবে সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগ ও পরিচর্যার মাধ্যমে তারাবাইম (পুরুষ ও স্ত্রী) মাছ ৩–৫ মাসের মধ্যে প্রজননক্ষম ও পরিপক্ক হয়ে থাকে।
  • তারাবাইম (M. aculeatus) মাছ নিশাচর (Nocturnal feeding habits)। এরা রাতে ও ভোরে খাবার খায়। দিনের বেলায় নিজেদের এরা গর্তে আবর্জনার নিচে ডুবন্ত উদ্ভিদের নিচে লুকিয়ে (hide habits) রাখে। এজন্য এদের আশ্রয়ের জন্য পুকুরে মাটির ভাংগা চাড়ি, ছোট ছোট বাঁশের পুল, প্লাস্টিক পাইপ ইত্যাদি দিয়ে রাখতে হবে।
  • প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় তারাবাইম মাছ পুরুষ ও স্ত্রী চেনা কষ্টসাধ্য। তবে একই বয়সের স্ত্রী মাছ পুরুষ মাছ অপেক্ষা একটু বড় হয়ে থাকে। প্রজনন মৌসুমে পরিপক্ক স্ত্রী মাছে পেট বড় নরম ও ওভারি গোলাকার নীলাভ বর্ণের হয়ে থাকে এবং পুরুষ মাছের পেট সমান শক্ত লম্বাটে ও চাপ দিলে বিন্দু বিন্দু সাদা শুক্র (Sperm) বের হয়ে থাকে প্রজননের জন্য সাধারণত ১৫–২০ সে.মি. সাইজের অথবা ১৫–২৫ গ্রাম ওজনের মাছ ব্যবহার করাই ভাল।

 

 

গুচি মাছ বা তারাবাইম মাছের কৃত্রিম প্রজনন

উন্নত ব্রুড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাছ প্রজননের জন্য পরিপক্ক হলে প্রণোদিত প্রজননের জন্য ২টি পদ্ধতি প্রথম চাপ পদ্ধতি ও দ্বিতীয় কচুরিপানা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রজনন করা যায়।

গুচি মাছ বা তারাবাইম মাছের প্রণোদিত প্রজননের চাপ পদ্ধতি (Striping method):

প্রজনন মৌসুমঃ প্রজননের জন্য মে–জুন হচ্ছে উৎকৃষ্ট সময়। তবে তারাবাইমের মে থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রজনন মৌসুম।

ব্রুড মাছের খাপ খাওয়ানোঃ প্রথমে ব্রড মাছের পুকুর থেকে পরিপক্ক প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ নির্বাচন পূর্বক হ্যাচারীতে ঝর্ণার সাওয়ারের পানিতে ৮-/১০ ঘন্টা রেখে খাপ খাওয়াতে হবে।

পিজি ইঞ্জেকশনঃ প্রথমে স্ত্রী মাছকে পিজি (পিটুইটারি গ্ল্যান্ড) ৪০ মি. গ্রাম/কেজি ডোজ দিয়ে ৬ ঘন্টা ব্যবধানে ২য় মাত্রা ৫০ মি.গ্রাম/কেজি প্রয়োগ পূর্বক পুরুষ মাছকে একক মাত্রায় ৪০ মি.গ্রাম/কেজি দিয়ে সিসর্টানে ঝর্ণার নিচে রাখতে হবে। ২য় ডোজের ৭–৮ ঘন্টা পর (২৭–৩৩০ সে. তাপমাত্রায়) মাছ যখন কোর্টসীপ আচরণে জোড়ায় জোড়ায় দৌড়াদৌড়ি করতে থাকবে, আলিঙ্গন করতে থাকবে, তখন স্ত্রী মাছকে নরম টাওয়েল দিয়ে ধরে চাপ পদ্ধতিতে ছোট প্লেটে ডিম সংগ্রহ পূর্বক পুরুষ মাছ হতে একই নিয়মে শুক্রানু বের করে পালকের সাহায্যে মিশিয়ে ডিমকে নিষিক্ত পূর্বক ট্রেতে ছড়িয়ে দিতে হবে।

নিষিক্ত ডিম গুলোকে ট্রেতে রেখে পাইপ লাইনে ফোঁটা ফোঁটা পানি সরবরাহ পূর্বক এরেশন দিয়ে রাখতে হবে। ট্রেতে পানির গভীরতা হবে ১০–১২ সে.মি.। পানি হতে হবে সর্ম্পূণ আয়রন মুক্ত। এভাবে ২০–৩৩ সে. তাপমাত্রায় ৩৬–৪০ ঘন্টা পর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়।

গুচি মাছ বা তারাবাইম মাছের প্রণোদিত প্রজননের কচুরিপানায় প্রজনন পদ্ধতি:

চাপ পদ্ধতির মত একই নিয়মে পিজি ১ম ও ২য় মাত্রা প্রয়োগ করে এ পদ্ধতিতে পরিস্কার কচুরিপানা যুক্ত হাপার পানিতে রেখে ঝর্ণার সাওয়ার দিতে হয়। ঝর্ণার সাওয়ারে ৮–১০ ঘন্টা পর স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ার পর পুরুষ মাছ শুক্রানু ছাড়ার মাধ্যমে নিষিক্ত করে থাকে। কচুরিপানায় প্রজনন পদ্ধতিতে ৩৬–৪০ ঘন্টার মধ্যে ডিম ফোটা শুরু হয়। ডিম ফোটা শেষ হলে কচুরিপানা গুলো হাপা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতিতে পোনা মৃত্যু হার কম, স্বাস্থ্য ভাল থাকে ও বৃদ্ধি হারও বেশি। তারাবাইমের ডিম আঠালো এবং ডিম গুলো দেখতে গোলাকার ও সবুজ রংয়ের হয়। আঠালো ডিম কচুরিপানার মূলে লেগে থাকে।

 

 

গুচি মাছ বা তারা বাইম লার্ভাল অবস্থায় লালন ও পালনঃ

লার্ভাল অবস্থায় থেকে তারা বাইম নিজেদের দিনের বেলায় লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসে। মাটির ভাংগা অথবা চাড়ি জীবাণুমুক্ত করে পুকুরে দিয়ে রাখতে হবে। তাদের দিনের বেলায় লুকানোর জন্য যায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।

লার্ভাল অবস্থায় খাবারঃ সিদ্ধ ডিমের কুসুম, আটা, জুপ্লাংক্টন দিতে হবে। পুকুরে খড় প্রয়োগ করলে টিউবেফেক্স তৈরি হয় যা তারা বাইমের প্রিয় খাবার। প্রাকৃতিক খাবার ও টিউবেফেক্স খাবার

লার্ভাল অবস্থায় রোগ ব্যবস্থাপনাঃ লার্ভাল অবস্থায় বেশি ব্যাকটেরিয়া ও ফ্যাঙ্গাস বেশি আক্রান্ত করে এবং মাছের মৃত্যু হার বাড়িয়ে দেয়। এ জন্য নিয়মিত পুকুরে জীবাণুনাশক ব্যবহার এবং দিনে দুইবার মিথিলিন ব্লু দিতে হবে।

গুচি মাছ বা তারা বাইম নার্সারী পুকুর ব্যবস্থাপনাঃ

প্রাকৃতিক খাবার তৈরি করে তারা বাইম কে নার্সারী পুকুরে দিতে হবে। নার্সারী পুকুর কাদা কম এবং ছোট ৮-১০ শতাংশ এর ছোট পুকুর হলে ভাল হয়। নার্সারী তে বাজার প্রাপ্ত নার্সারী খাবার ৩০-৩৫ শতাংশ প্রোটিন যুক্ত খাবার দেয়া ভাল। বাজারে শিং মাগুর ও গুলসা মাছের খাবার তারা বাইম মাছ খায়।

তারা বাইম মাছ কে রাতে খাবার দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া প্রতি মাসে পুকুরে জীবাণুনাশক, চুন এবং সার প্রয়োগ করতে হবে।

গুচি মাছ বা তারা বাইম মাছ চাষে আয় ও ব্যায়ঃ

তারা বাইম মাছ ৭-৮ মাসে ১০০ গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম হয়। ১০০ গ্রাম -১২০ গ্রাম ওজনের হলে তারা বাইম বিক্রির উপযোগী হয়। বাজার এ মাছের দাম ৪৫০ -৫০০ টাকা কেজি। প্রতি শতাংশে ৪০ থেকে ৫০ কেজি তারা বাইম চাষ করা যায়। প্রতি বিঘা পুকুরে ১২০০ কেজি চাষ করলে ৫৪০,০০০ টাকার মাছ বিক্রি সম্ভব। প্রতি বিঘা থেকে ৩০০,০০০ থেকে ৩৫০,০০০ টাকা নেট আয় করা সম্ভব।

 

ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি

ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি যা ২০৫০ সাল নাগাদ ২২ কোটিতে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হয়। বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি জমি হ্রাস, ক্রমাবনতিশীল কৃষি বৈচিত্র ইত্যাদি পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা যোগানে ছাদ ও বাড়ীর আঙ্গিনা, খালি জায়গায় ব্যাপক ভিত্তিতে সবজি বাগান করে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি তথা জনগণের পুষ্টির চাহিদা মিটান সম্ভব।

ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি

 

 

ছাদের উপর সবজি চাষ নতুন কিছু নয়। এটি সাধারণ সবজি চাষেরই প্রতিরূপ যা একটি সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করা হয়। বিশেষ করে শহুরে লোকজন তাদের বাড়ির ছাদে টব, বালতি, ড্রাম বা ট্রেতে সীমিত আকারে সবজি চাষ করেন। বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অবশ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ছাদে যেসব বাগান দেখা যায় তার অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে
উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যে কোন শাকসবজি ফলানো সম্ভব।

টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, ঢেঁড়শ, ডাটা, পুঁইশাক, লাল শাক, কলমী শাক, মুলা, শালগম, পুদিনা পাতা, বিলাতি ধনিয়া, মরিচ (সারা বছর), লাউ, করলা, শসা, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, সীম, বরবটি ইত্যাদি নানা ধরনের মৌসুমী সবজি ছাড়াও কচু, সজনে, লেবু, পেঁপে ইত্যাদি অনায়াসে উৎপাদন করা যায়।

 

 

ছাদে সবজি বাগানের উদ্দেশ্য

  • ছাদ বাগান সবজি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
  • নিরাপদ সবজি উৎপাদনের সহজ উপায়।
  • বাড়ির ছাদ ঠাÐা রাখতে সহায়তা করে।
  • জীববৈচিত্র সংরক্ষিত হয় ও পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে।

 

 

ছাদে বাগান করার জন্য আবশ্যিক বিবেচ্য বিষয়:

  • ছাদে বাগান করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নিয়মিত পানি সেচ দেয়া।
  • ছাদে বাগানের জন্য গোবর, জৈব সার (কম্পোস্ট), কেঁচো সার (ভার্মিকম্পোস্ট), ট্রাইকোকম্পোস্ট ও কোকোডাস্ট (নারিকেলের ছোবড়ার গুড়া) ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সহজে তিন ভাগ দোয়াশ মাটি, পাঁচ ভাগ গোবর, এক ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট সার এবং এক ভাগ কোকোডাস্ট দিয়ে মাটির মিশ্রণ তৈরি করা যায়।
  • বছরে একবার কম্পোস্টযুক্ত নতুন মাটি দিয়ে পুরাতন মাটি বদলিয়ে দিতে হবে।
  • টবে/পাত্রের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরী। কয়েকটি ভাঙ্গা চাড়ির টুকরা ছিদ্রের মুখের উপর রেখে টবে মাটি ভরতে হবে।
  • টবে/ড্রামে সবজির ধরণ ও জাত নির্বাচনের পর যৌক্তিকভাবে সাজাতে হয়। ছোট গাছকে সামনে, বড়/লতানো সবজি গাছকে পিছনে রাখতে হবে। যেমন বড় লতান গাছ উত্তর ও পশ্চিম দিকে দিতে হবে।
  • ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি চারা ব্যবহার বেশি ফলদায়ক।
  • ছাদে চাষের একটা জরুরী বিষয় হল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। এ জন্য পুরাতন রোগাক্রান্ত, বয়স্ক ডালপালা, পাতা সাবধানতার সাথে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে। এতে গাছপালা রোগমুক্ত থাকবে, মানসম্পন্ন ফলন পাওয়া যাবে।
  • আমাদের দেশের আবহাওয়ায় যে কোন ফল জাতীয় সবজিতে পোকা বা রোগের আক্রমণ অহরহ ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে কমপক্ষে ২/৩ বার ছাদের বাগান পরিদর্শন করে আক্রান্ত ফল বা ডগা ছেটে ফেলে দিলে পোকা বা রোগের আক্রমণ কমে যাবে এবং ফলনও ভাল পাওয়া যাবে।
  • সহজে পোকামাকড় ব্যবস্থাপনার জন্য আঠালো হলুদ ফাঁদ, আঠালো সাদা ফাঁদ ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘরের ভেতরে, সিড়ি, ব্যালকনি, বারান্দা, কার্নিশ এসব জায়গায় অনায়াসে পাতা জাতীয় সবজি গাছ লাগিয়ে ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে।

 

 

বাড়ির ছাদে সবজি চাষে বিবেচ্য বিষয়সমূহ:

  • ছাদে স্থান নির্বাচন
  • ছাদের আকার
  • সূর্যালোক
  • পানির ব্যবস্থা
  • ছাদের গঠন
  • ছাদের ব্যবহার ইত্যাদি

 

 

ছাদ বাগানে সবজি চাষের জন্য মাধ্যম বা গ্রোয়িং মিডিয়া:

ভাল ফলন পাওয়ার প্রথম শর্ত হল উন্নতমানের গ্রোয়িং মিডিয়া ব্যবহার করা। ছাদে বাগানের জন্য উন্নতমানের কম্পোস্ট সমৃদ্ধ হালকা বুনটের মাটি ব্যবহার করা উত্তম। আবার কিছু কিছু পটিং মিডিয়ার মিশ্রণ যেমন- পিটমস, ভার্মিকুলাইট ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে যেগুলো হালকা, রোগজীবাণু মুক্ত, আগাছা বীজ মুক্ত এবং সুনিষ্কাশন ক্ষমতাসম্পন্ন।

 

ছাদ বাগানে চাষের জন্য আদর্শ গ্রোয়িং মিডিয়ার উদাহরণ:

  • ৫ ভাগ দোয়াশ মাটি + ৫ ভাগ কম্পোস্ট
  • ৩ ভাগ দোয়াশ মাটি + ৫ ভাগ গোবর + ১ ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট + ১ ভাগ কোকোডাস্ট
  • ১০০% মাটি ছাড়া মিশ্রণ, যেমন- স্ফ্যাগনাম মশ, ভার্মিকুলাইট, ককোডাস্ট ইত্যাদি।

 

 

 

ছাদ বাগানের জন্য পট বা কনটেইনার:

ছাদ বাগানের জন্য বিভিন্ন ধরনের ও আকারের টব, প্লাস্টিকের/কাঠের বক্স, হাফ ড্রাম বা কনটেইনার ব্যবহার করা যায়। ফসলের আকার আকৃতির উপর ভিত্তি করে কনটেইনারও বিভিন্ন আকারের হতে পারে। নিচে কিছু পটের নামসহ উল্লেখ করা হল।

ছাদ বাগানে টবে সবজি চাষ:

টব বিভিন্ন আকার এবং বিভিন্ন পদার্থের তৈরি হতে পারে। টব মাটির, প্লাষ্টিক বা সিমেন্টের তৈরি হতে পারে। সাধারণত সবজি চাষাবাদের জন্য ১২-১৮ ইঞ্চি ব্যাস এবং ১২-১৮ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট টব ব্যবহার করা যেতে পারে। টবগুলো স্থানান্তর যোগ্য এবং পাতলা বিধায় টবে সবজি চাষ জনপ্রিয়। এসব টবে টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, কুমড়া জাতীয় সবজি (লাউ, করলা, শসা, মিষ্টি কুমড়া) ও সীমের চারা রোপণ করা উত্তম।

ছাদ বাগানে চৌবাচ্চাকৃতি প্লাস্টিক/কাঠ/স্টীল/ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাত্র বা বক্সে সবজি চাষ:

চৌবাচ্চাকৃত পাত্রগুলো প্লাস্টিক/কাঠ/স্টীল/ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হতে পারে। এ ধরনের পাত্রগুলো ১০-১২ ইঞ্চি গভীরতা, তিন ফুট প্রস্ত এবং পাঁচ/ছয় ফুট লম্বা আকারের হতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী পাত্রের আকার ছোট বা বড় হতে পারে। এ পাত্রগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী বানিয়ে নিতে হবে বা বাজার হতে ক্রয় করা যাবে।

পাত্রগুলো ছাদের ওপরে কয়েকটি ইট বা অন্য কোন অল্প উঁচু স্থাপনার ওপর রাখতে হবে যাতে পাত্রের নীচে ফাকা থাকে, এতে ছাদের কোন ক্ষতি হবে না। এসব পাত্রে শাক জাতীয় সবজির বীজ সরাসরি বপন ও টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, কুমড়া জাতীয় সবজি (লাউ, করলা, শসা, মিষ্টি কুমড়া) ও সীমের চারা রোপণ করা যেতে পারে।

ছাদ বাগানে হাফ ড্রামে সবজি চাষ:

বড় আকারের ড্রামের মাঝামাঝি কেটে দুই টুকরো করে বড় দুটি ড্রামের টব তৈরি করা যায়। সজনে, কচু চাষের জন্য হাফ ড্রাম ভালো। এগুলো সরাসরি ছাদের ওপর না বসিয়ে কয়েকটি ইটের ওপর বা স্টীলের ফ্রেমে বসানো দরকার।

ছাদ বাগানে মাল্টিলেয়ার বস্তায়/বক্সে সবজি চাষ:

মাল্টিলেয়ার বস্তায়/বক্সে সবজি চাষ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে খাটো শিকড়যুক্ত সবজি নির্বাচন করতে হবে। বিশেষ করে পাতা জাতীয়
সবজি গাছ লাগিয়ে ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে।

উপোরক্ত পাত্রগুলোর নিচে অবশ্যই ছিদ্র থাকা জরুরী। কয়েকটি ভাঙ্গা চাড়ির টুকরা বা নেট ছিদ্রের মুখে দিয়ে পাত্রগুলোতে মাটি ভরতে হবে।

 

 

ছাদে চাষের জন্য সবজি নির্বাচন:

সবজির মৌসুম ও ভোক্তার রুচি অনুযায়ী ছাদে চাষ উপযোগি সবজি নির্বাচন করতে হবে। একটি ভবনের উচ্চতার প্রতি দশ তলা পরপর বাতাসের গতিবেগ দ্বিগুণ হয়। বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রোয়িং মিডিয়া ও পাতা থেকে পানি উবে যাওয়ার হারও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং এ বিষয়টি লক্ষ্য রেখে সবজি নির্বাচন করা উচিৎ।

 

 

ছাদ বাগানে চাষের জন্য চারা উৎপাদন:

গুণগত মানের বীজ সংগ্রহ করার পর সবজি ভেদে বীজ সরাসরি জমিতে বপন বা টবে চারা গজিয়ে তারপর রোপন করতে হবে।

  • সরাসরি বীজ বপন: সাধারণত শাক জাতীয় সবজির ক্ষেত্রে সরাসরি বীজ বপন করতে হয়। যেমন: ডাটা, লাল শাক, কলমী শাক, পালং শাক, পুই শাক, লেটুস, মুলা, গাজর, ধনিয়া। তাছাড়া ঢেঁড়শ চাষেও সরাসরি বীজ বপন করতে হয়।
  • চারা গজিয়ে তারপর রোপন: টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, লাউ, করলা, শসা, মিষ্টিকুমড়া, সীম।
  • চারা উৎপাদন ছায়াবিহীন, পরিষ্কার এবং বাতাস চলাচলের উপযোগী স্থানে করা প্রয়োজন।
  • চারা উৎপাদনের মাটি বেলে দো-আঁশ এবং উর্বর হওয়া উচিত।
  • চারা উৎপাদন পলিথিনের ব্যাগে বা মাটির টবে উৎপাদন করা যায়।
  • আবহাওয়া এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতে হবে যেন বৃষ্টির পানি ও অতিরিক্ত সূর্যতাপ থেকে চারাকে রক্ষা করা যায়।

 

ছাদ বাগান ব্যবস্থাপনার যন্ত্রপাতি:

ছুড়ি/চাকু, কাঁচি, খুরপি, নিড়ানী, সিক্যাচার, হ্যান্ডি-শাবল, শাবল, বেলচা, কোদাল, হ্যান্ড স্প্রেয়ার, পানির পাইপ, পানির ঝাঝড়ি, ঝাড়–, চালুনী, ট্রলী, ওজন যন্ত্র ছাদের বাগানে কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা আবশ্যক।

 

 

ছাদ বাগানে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা:

  • ছাদে সেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা মাটির আর্দ্রতার জন্য সহজেই গাছপালা নেতিয়ে যাবে তেমনি অতি পানি বা পানির আর্দ্রতার জন্যও গাছ নেতিয়ে মরা যেতে পারে। তাই অবশ্যই ছাদের বাগানে পরিমিত সেচের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
  • ছাদ বাগানে সেচের জন্য স্প্রিংকলার অর্থাৎ ঝাঁঝরি দিয়ে সেচ দেয়া ভালো।
  • পাত্রে চারা লাগানোর পরপরই গোড়ায় পানি দিতে হবে এবং কয়েকদিন পর্যন্ত পরিমিত সেচ দিতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে ফুল, ফল ধারণ ব্যাহত হয় এবং যেসব ফুল, ফল ধরেছে সেগুলোও আস্তে আস্তে ঝরে যায়। কাজেই প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার জন্য নীচের নিকাশ ছিদ্র ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানে বাউনি/জাংলা/মাচা দেওয়া:

লতানো গাছে কাংখিত ফলন পেতে হলে অবশ্যই সুন্দরভাবে বাঁশ/ পিলার দিয়ে জাংলা বা মাচা বানিয়ে টব/প্লাস্টিকের পাত্রে লতানো সবজি আবাদ করা যেতে পারে। মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে যায়, পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কমে যায়। ফলে ফলনও কমে যায়।

 

 

ছাদ বাগানে মালচিং:

সেচের পর মাটিতে চটা বাঁধে। চটা বাঁধলে গাছের শিকড়াঞ্চলে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। কাজেই প্রত্যেক সেচের পর হালকা মালচ্ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানে আগাছা দমন:

গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়। গাছে খাদ্যোপাদানের অভাব পড়ে। ফলে কাংখিত ফলন পাওয়া যায় না। তাই সবসময়ই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানের অপ্রয়োজনীয়, বয়স্ক, মড়া শাখা অপসারণ:

গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট ডালপালা হয়। সেগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। তাছাড়া এগুলো ছাড়াও বয়স্ক, মড়া ডালপালা গাছের ফলনে এবং যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই গাছের গোড়ার দিকে ডালপালাগুলো ধারালো বেøড বা কাঁচি দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানে পোকামাকড় দমন:

পোকামাকড় ব্যবস্থাপনার জন্য আঠালো হলুদ ফাঁদ, আঠালো সাদা ফাঁদ, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া কিছু পোকা হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলা যায়।

 

ছাদ বাগানে ফল ধারণ বৃদ্ধিতে কৃত্রিম পরাগায়ন:

লাউ, কুমড়া, করলা, ধুনধুল, ঝিঙ্গাতে পরাগায়ন প্রধাণতঃ মৌমাছির দ্বারা স¤পন্ন হয়। উঁচু বিল্ডিং এর ছাদে চাষ করলে মৌমাছির আনাগোনা কমে যায়। সব ফুলে প্রাকৃতিক পরাগায়ন ঘটে না এবং এতে ফলন কমে যায়। তাই হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে ফলন শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

 

 

ছাদ বাগানে ফসল সংগ্রহ:

সবজি বাগানে যত সবজি ফল হিসেবে আহরণ/সংগ্রহ করা যাবে ততই সবজি-ফল ধারণ বৃদ্ধি পাবে। তাই কচি অবস্থায় সবজি-ফল সংগ্রহ করা উচিত।

 

 

বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত জনবহুল দেশ। এখানে জনসংখ্যার তুলনায় চাষের জমি খুবই কম। প্রতি বছর এদেশের জনসংখ্যা, আবাসনের জন্য ঘর-বাড়ি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা এবং কলকারখানা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দিনদিন কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। বাংলাদেশ এই বাড়তি জনসংখ্যার চাপ মোকাবেলার জন্য শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করলে চলবে না। এ পরিস্থিতিতে বিল্ডিং এর ছাদ চাষের আওতায় আনা যেতে পারে।

পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যে কোন শাক-সবজি ফলানো সম্ভব। টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, ঢেঁড়শ, ডাটা, পুইশাক, লাল শাক, কলমী শাক, মুলা, শালগম, পুদিনা পাতা, বিলাতি ধনিয়া, মরিচ (সারা বছর), লাউ, করলা, শসা, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, সীম, বরবটি ইত্যাদি নানা ধরনের মৌসুমী সবজি ছাড়াও কচু, সজনে, লেবু, পেঁপে ইত্যাদি অনায়াসে উৎপাদন করা যায়। ছাদে সবজি বাগানের বর্ণিত মডেল অনুসরণ করে সারা বছরই সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।

তদুপরি উৎপাদনকালে জৈব সার ব্যবহার করা হয় ও কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বিধায় এসব সবজি নিরাপদ। তাছাড়া বাড়ির ছাদ ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে এবং জীব বৈচিত্র সংরক্ষিত হয় ও পরিবেশ দূষণ মুক্ত থাকে।

 

ছাদে সবজি বাগানের মডেল:

 

 

সবজির ছাদ বাগান:

 

 

চুই ঝাল চাষ পদ্ধতি

চুই ঝাল চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। চুই ঝাল, বা চই ঝাল হচ্ছে পিপারাসি পরিবারের সপুষ্পক লতা। পান ও চুই ঝাল একই পরিবারের। চুই ঝাল গাছ দেখতে পানের লতার মতো। পাতা কিছুটা লম্বা ও পুরু। পাতায় ঝাল নেই।বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা বিভাগের রন্ধনশৈলীতে চুইঝালের ব্যবহার ব্যাপক।এর কাণ্ড বা লতা কেটে ছোট টুকরো করে মূলত-মাংস রান্নায় ব্যবহার করা হয়। রান্নার পর এই টুকরো চুষে বা চিবিয়ে খাওয়া হয়। ঝাল স্বাদের এই চুইয়ের রয়েছে নিজস্ব আলাদা স্বাদ ও ঘ্রাণ।

 

চুই ঝাল চাষ পদ্ধতি

 

 

জমি ও মাটিঃ দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও ছায়াময় উঁচু জমিতে সাধারণত চুই চাষ করা হয়। সাধারণ ফলবাগান বা বৃক্ষ বাগানের মাটি চুই চাষের জন্য উপযোগী। রোপণের সময়ঃ বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) এবং আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাস এ দুইবার হলো চুইঝালের লতা রোপণের উপযুক্ত সময়। বংশবিস্তারঃ বীজ ও অঙ্গজ প্রজনন বা লতা কাটিং পদ্ধতিতে চুইঝালের বংশবিস্তার করা যায়।

 

 

কাটিং পদ্ধতিতে এর কাণ্ড বা শাখা ৫০ থেকে ৭৫ সেমি লম্বা করে কেটে সরাসরি মাটিতে রোপণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে কাটিং বা শাখাকে পোড় বলা হয়। একটি পোড়ে কমপক্ষে ৪/৫ টি পর্বসন্ধি থাকে। বাণ্যিজিকভাবে পলিব্যাগে চারা তৈরি করা যায়। পরে পলিব্যাগ থেকে চারা নিয়ে মূল জমিতে রোপণ করা যায়। লতা কাটিংয়ে গাছ দ্রুত বড় হয় এবং ফলন তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। বীজ থেকে বংশবিস্তার জটিল, সময়সাপেক্ষ বলে আমাদের দেশে শুধু লতা থেকে বংশবিস্তার করা হয়। কাটিং শোধনঃ চুইঝালের কাটিং চারা রোপণের আগে অবশ্যই শোধন করে নেওয়া ভালো।

 

 

১ লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম প্রোভ্যাক্স/নোইন/অটোস্টিন মিশিয়ে কাটিং ৩০ মিনিট চুবিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে কাটিং রোপণ করতে হবে। ফলে পরবর্তীতে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়।সার ও সেচ ব্যবস্থাপনাঃ চুই চাষে চাষিরা সাধারণত পোড় বা শাখা রোপণের পূর্বে গর্তে পচা আবর্জনা বা ছাই ব্যবহার করেন। তাছাড়া কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণ হারে ইউরিইয়া, টিএসপি, এমওপি বর্ষার আগে ও পরে গাছের গোড়া থেকে ১ হাত দূরে প্রয়োগ করে থাকেন। সপ্তাহে ১ বার গাছের গোড়ায় সেচ দিলে গাছের বাড়বাড়তি স্বাভাবিক থাকে। বর্ষাকালে চুইঝালের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। চুইঝাল গাছ লাগানোর পদ্ধতিঃ সাধারণত আম, সুপারিসহ কাঠ জাতীয় গাছের গোড়া থেকে ১২-১৫ ইঞ্চি দূরে গর্ত করে চুই গাছের কাটিং লাগাতে হয়।

গর্তের মধ্যে কিছু গোবর, বর্জ্য, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম টি এস পি, ৫০ গ্রাম পটাশ দিয়ে গর্তে ও মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ৭ দিন রেখে কাটিং লাগাতে হবে। গর্তে একটি খুঁটি কাত করে বড় গাছের সাথে বেঁধে দিলে ৩০-৪০ দিনের মাঝে তা গাছের কাণ্ডের সাহায্যে উপরে উঠে যাবে। এভাবে চুই গাছ বাড়তে থাকবে। বাউনি দেওয়াঃ চুইঝাল যেহেতু লতা জাতীয় তাই এর জন্য আরোহণের অন্য গাছের সাপোর্ট লাগে।

 

 

আম, জাম, সুপারি, নারিকেল ও কাফলা গাছ বাউনি হিসেবে চুই চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাউনি না দিলেও মাটিতে বৃদ্ধি পায়। তবে এক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে গাছের ক্ষতি হয়। কৃষকদের মতে আম ও কাফলা গাছে চাষকৃত চুই খুব সুস্বাদু হয়। ফসল সংগ্রহঃ চুই রোপণের ১ বছরের মাথায় খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে ভাল ফলনের জন্য ৫/৬ বছরের গাছই উত্তম। ফলনঃ হেক্টর প্রতি প্রায় ২.০ থেকে ২.৫ মেঃ টন ফলন পাওয়া যায়। ৫/৬ বছরের একটি গাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

 

স্কোয়াশ চাষ পদ্ধতি

স্কোয়াশ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজ আলোচনা করবো। স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন সবজি। এটি বিদেশি জনপ্রিয় সবজি। দেখতে বাঙ্গির মতো লম্বা ও সবুজ। মিষ্টি কুমড়ার মতো এক ধরনের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। এটি সবুজ ও হলুদ দুই ধরনের রঙের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে নতুনভাবে এটি চাষ শুরু হয়েছে।

স্কোয়াশ চাষ পদ্ধতি

বিদেশি সবজি স্কোয়াশ বিগত কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। এটি দেখতে অনেকটা শশার মত মনে হয় কিন্তু আকার-আকৃতি একটা বড় মিষ্টি কুমড়ার সমান পর্যন্ত হতে পারে । বারি স্কোয়াশ-১ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। এ জাতের জীবনকাল ৮০-৯০ দিন।

স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। বসতবাড়ি ও চরেও এর আবাদ সম্ভব। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়। শতক প্রতি ১০ গ্রাম বীজ লাগতে পারে।

স্কোয়াশের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার :

স্কোয়াশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ আছে। এর পাতা ও কাণ্ড সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। সামার স্কোয়াশ তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। সামার স্কোয়াশ চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব।

 

স্কোয়াসের জাত :

বারি স্কোয়াশ-১ জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক অবমুক্ত হয়েছে। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। এ জাতের জীবনকাল ৮০-৯০ দিন। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৪৫-৫০ টন।

 

স্কোয়াস চাষের জন্য জলবায়ু ও মাটি :

স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মিষ্টি কুমড়া জন্মায়। অতএব সেসব জায়গায় স্কোয়াশ চাষ করা যাবে।

 

স্কোয়াশ চাষের জমি তৈরি :

ভালো ফলন পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে। মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে। শীতকালীন চাষের সময় জমিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে প্রয়োজনে জমি চাষের আগে সেচ দিয়ে নিতে হবে।

 

স্কোয়াস বীজ বপনের সময় :

শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য ভাদ্র মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে আশ্বিন মাসে (আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে) জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়।

 

স্কোয়াস চাষের জন্য বীজের হার :

এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ছোট সাইজের বীজ হলে ৩০০ গ্রাম/২৪০০-২৫০০টি বীজ লাগবে। বড় সাইজের বীজ হলে ৫০০ গ্রামের মতো লাগতে পারে। শতক প্রতি ১০ গ্রাম বীজ লাগতে পারে। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি স্কোয়াসের বীজ বাজারজাত করছে।

 

স্কোয়াস সবজির ওজন :

সাধারণত স্কোয়াশের ওজন ৭০০-৮০০ গ্রাম বা লম্বায় ৭/৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। বেশি বড় সাইজ করলে সবজি হিসেবে স্বাদ ও মান পরিবর্তন হয়ে যায়। এছাড়াও ২-৩টি স্কোয়াশের ওজন প্রায় ১ কেজি। প্রতিটি স্কোয়াশ বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকায়।

 

স্কোয়াস এর ফুল ও ফল আসার সময় :

বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে এবং রোপণের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হবে। বীজ লাগানো থেকে ফল তুলতে সময় লাগে দুই আড়াই মাস। ফুল ও ফল দেখতে অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। ৫৫-৬০ দিনের ভিতর স্কোয়াশ বাজারজাত করা যায়।

 

 

স্কোয়াস চাষের জন্য সার ব্যবস্থাপনা :

জমি তৈরির সময় গোবর ২০ কেজি, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ২০০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৫০ গ্রাম, বোরাক্স ৪০ গ্রাম, দস্তা ৫০ গ্রাম শতাংশ প্রতি প্রয়োগ করতে হবে।

  • চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে মাদা প্রতি গোবর ১০ কেজি, টিএসপি ৬০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৮ গ্রাম দিতে হবে।
  • চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর মাদা প্রতি ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হবে।
  • চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
  • জমিতে কেঁচোর চলাচল বেশি হলে দানাদার বিষ ব্যবহার করতে হবে জৈমি তৈরির আগে।

 

স্কোয়াস চাষের জন্য শতাংশ প্রতি সারের হিসাব:
সারের নাম পরিমাণ
গোবর ৮০ কেজি
ইউরিয়া ৭০০ গ্রাম
টিএসপি ৭০০ গ্রাম
এমওপি ৬০০ গ্রাম
জিপসাম ৪০০ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৫০ গ্রাম
বোরাক্স ৪০ গ্রাম
দস্তা ৫০ গ্রাম

 

 

স্কোয়াশের বপন এবং রোপণ প্রযুক্তি :

স্কোয়াশ বীজ সরাসরি জমিতে রোপণ করা যায়। তবে ছোট আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে বা প্লাস্টিক ট্রেতে করে তা জমিতে রোপণ করলে ভালো হয়। এছাড়াও স্কোয়াশের বীজ মাদায় বপন করা যায়। প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে একটি মাদায় ২-৩ টি বীজ বপন করা হয়। বীজ বোপন বা চারা রোপণ করার সময় গাছ থেকে গাছে দূরত্ব ১.৫ ফুট এবং একটি গাছের লাইন থেকে অন্য গাছের লাইনের দূরত্ব হলো ৩ ফুট । বীজ মাটির প্রায় ১ ইঞ্চি গভীরে বপন করতে হবে। চারা গজানোর পর মাটি তুলে ৬-১২ ইঞ্চি উঁচু করে দিতে হবে এবং ১-২ ফুট প্রশ্বস্ত করতে হবে।

বীজ বপনের ৪-৬ সপ্তাহ পরে ফল ধরা আরম্ভ হবে। স্কোয়াশ চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে রাখতে হবে। জৈব সার বলতে পুরানো পচা গোবর সার হতে পারে বা কেঁচো জৈব বা ভার্মি জৈব সার হতে পারে। বীজ বপন করার ১০-১৫ দিনের ভিতর চারা বের হয়ে গাছ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাবে।

 

স্কোয়াস চাষের জন্য সেচ ও নিষ্কাশন পদ্ধতি :

সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। স্কোয়াশ গাছ সপ্তাহে ২ ইঞ্চি পানি শোষণ করে থাকে। তাই প্রয়োজনে সেচ প্রদান করতে হবে।শীতকালীন চাষের জন্য এক মাস পর পর জমিতে সেচ দিতে হবে। স্কোয়াশ চাষের সময় জমিতে পানি বেশি সময় জমতে দেওয়া যাবে না।

 

স্কোয়াস চাষে মালচিং :

স্কোয়াশ চাষে মালচিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চারা টিকে গেলেই গোড়ার চারপাশে মালচিং করলে তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং মাটি আর্দ্রতা ধরে রাখে। বিষয়টি স্কোয়াশের ফলন আগাম ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

 

স্কোয়াশ চাষের সময় অন্যান্য পরিচর্যা ও করণীয় :

চাষের সময় মাটির ঢেলা ভেঙে ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। গাছের বাউনি ও অন্যান্য যত্ন করতে হবে। জমিতে আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আগাছা জন্মালে তা নিড়ানির সাহায্যে তুলে ফেলতে হবে। কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের উপর ছড়িয়ে দিলে উৎপাদন বাড়বে। গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা বের হয়। এগুলোকে শোষক শাখা বলে। শোষক শাখা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও ফলন কমিয়ে দেয়। তাই এই গুলোকে ভেঙে দিতে হবে।

 

 

স্কোয়াশের রোগবালাই ও পোকামাকড় :

স্কোয়াশে মাছিপোকা :

এই পোকা স্কোয়াশের কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় যার ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনা :

আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে।জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার করতে হবে। মাছির আক্রমণ বেশি হলে এসিমিক্স ৫৫ ইসি ১ মিলি/লিটার অথবা পাইরাজিন ৭০ ডব্লিউ ডি জি ০.৪ গ্রাম/ লিটার অথবা টিডো ১ মিলি/লিটার অথবা নাইট্রো/সবিক্রন ১মিলি/লিটার বা ইমিটাফ ২০ এস এল ১ মিলি/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 

সেক্স ফেরোমন ফাঁদ
স্কোয়াশে রেড পামকিন বিটল পোকা :

পামকিন বিটলের পূর্ণবয়স্কপোকা চারা গাছের পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে। এ পোকা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে।

দমন ব্যবস্থাপনা :

চারা আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলে। ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। চারা রক্ষার জন্য পাতায় ছাই ছিটাতে হবে। চারা অবস্থায় ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমণ থেকে গাছ বেঁচে যায়। সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলি অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলি) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে অথবা রেলোথ্রিন/ রিপকট ১ মিলি/লিটার পানিতে ১০-১২ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে

স্কোয়াশে জাবপোকা :

জাবপোকার আক্রমণে স্কোয়াশের বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়। মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় জাবপোকার বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনা :

প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিম বীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়। আক্রমণ বেশি হলে সবিক্রন/টিডো/ইমিটাফ ১মিলি/লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।

 

 

 

স্কোয়াস চাষে প্রয়োজনীয় সর্তকতা :

চারা বের হওয়া থেকে ৫ দিন পর পর সাদা মাছি বা জাব পোকা দমনে কমপক্ষে ভালো কোম্পানির ২/৩টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ ব্যবহার করুন। সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করতে হবে। ওষুধ ব্যবহার করলে অবশ্যই ভালো কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করা উচিত। ভাইরাস আক্রান্ত গাছকে কোন প্রকার ট্রিটমেন্ট না করে সরাসরি তুলে ফেলে গাছটি মাটি চাপা দিতে হবে।

 

স্কোয়াশ ফসল সংগ্রহ :

স্কোয়াশ পরিণত হলে গাছ থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত বীজ বপন বা চারা রোপণের ৩০ দিন থেকে ৪০ দিনের ভিতর গাছ থেকে ফুল এসে ফল ধরা শুরু হয়। গাছে ফল ধরার ১৫-২০ দিনের মধ্যে স্কোয়াশ সংগ্রহ করা যায়। এছাড়াও ফলের বোঁটা খয়েরী রঙ ধারণ করে ধীরে ধীরে গাছ মরতে শুরু করলে ফসল সংগ্রহ করা যায়।

 

স্কোয়াসের ফলন :

হেক্টর প্রতি স্কোয়াশের গড় ফলন ৪৫-৫০ টন। জাত ভেদে সময় কম বেশি হতে পারে। ১ বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি থেকে এক মৌসুমে ২২০০টি সামার স্কোয়াশ গাছ পাওয়া যায়। একটি গাছে গড়ে ১২-১৬ কেজি ফল হয় যায় এক বিঘা জমিতে প্রায় ২৪,০০০ কেজি। কোনো কোনো সময় ফলের সাইজে উপর মোট উৎপাদন কম বেশি হতে পারে। প্রতি বিঘা জমিতে স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য খরচ হয় ৯-১০ হাজার টাকা। কিন্তু ১ বিঘা জমি থাকে মুনাফা হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা।

 

স্কোয়াস বাজারজাতকরণ :

স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুপার শপ-এর চাহিদা ব্যাপক। এছাড়া রেস্তোরাঁতেও স্কোয়াশ সরবরাহ করা যায়।

 

 

চরাঞ্চলে নিরাপদ স্কোয়াশ উৎপাদন:

স্কোয়াশ একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি হিসেবে বিদেশিদের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। এ দেশে স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের সবজি ফসল। কয়েক বছর ধরে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষাবাদের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে কম উর্বর জমিতে এবং চরাঞ্চলে স্কোয়াশের চাষাবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় স্কোয়াশের চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও মাদারীপুর জেলার চাষিরা।

দেশের অন্য অঞ্চলে রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের সম্ভাবনা। গবেষকরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে বারি স্কোয়াশ-১ নামে একটি জাত রবি মৌসুমে চাষাবাদের জন্য মুক্তায়ন করা হয়েছে। বারি স্কোয়াশ-১ একটি উচ্চফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৪৫ টন।

 

চরাঞ্চলে স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য উৎপাদন প্রযুক্তি, মাটি ও আবহাওয়া:

স্কোয়াশের জন্য উষ্ণ, প্রচুর সূর্যালোক এবং নি¤œ আর্দ্রতা উত্তম। চাষকালীন অনুক‚ল তাপমাত্রা হলো ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চাষকালীন উচ্চতাপমাত্রা ও লম্বা দিন হলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যায়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ বা এঁটেল দো-আঁশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম তবে চরাঞ্চলে পলিমাটিতে স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়।

 

চরে স্কোয়াশ চাষে বীজের হার

প্রতি হেক্টরে ২-৪ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

 

চরে স্কোয়াশ চাষে বীজ বপন ও চারা উৎপাদন

শীতকালে চাষের জন্য অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে বীজ বপন করা যায়। চারা নার্সারিতে পলিব্যাগে উৎপাদন করে নিলে ভালো হয়। বীজ বপনের জন্য ৮ ী ১০ সেমি. বা তার থেকে কিছুটা বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়। প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে পলিব্যাগে ভরতে হবে।

সহজ অঙ্কুরোদগমের জন্য পরিষ্কার পানিতে ১৫-২০ ঘণ্টা অথবা শতকরা এক ভাগ পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে বীজ এক রাত ভিজিয়ে অতঃপর পলিব্যাগে বপন করতে হবে। প্রতি ব্যাগে দুটি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে। বীজ সরাসরি মাদায়ও বপন করা হয়। সেক্ষেত্রে সার প্রয়োগ ও মাদা তৈরির ৪-৫ দিন পর প্রতি মাদায় ২-৩টি করে বীজ বপন করা যেতে পারে। চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর ১টি সুস্থ ও সবল চার রেখে বাকিগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে। চারার বয়স ১৬-১৭ দিন হলে তা মাঠে প্রস্তুত মাদায় লাগাতে হবে।

 

চরে স্কোয়াশ চাষের জন্য বেড তৈরি

বেডের উচচতা ১৫-২০ সেমি. ও প্রস্থ ১-১.২৫ মি. এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামতো নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৭০ সেমি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে।

 

চরে স্কোয়াশ চাষের জন্য মাদা তৈরি

মাদার ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি. গভীরতা ৫০-৫৫ সেমি. এবং তলদেশ ৪৫-৫০ সেমি. প্রশস্ত হবে। ৬০ সেমি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা সংলগ্ন বেডের কিনারা থেকে ৫০ সেমি. বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতি বেডে এক সারিতে চারা লাগাতে হবে।

 

চরে স্কোয়াশের জন্য সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি

ভালো ফলন পেতে মাটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ করতে হবে। তবে মাটির অবস্থা বুঝে সারের পরিমাণ কম/বেশিও হতে পারে।
সমস্ত গোবর সার, ফসফরাস সার ও পটাশ সারের ৩ ভাগের দুইভাগ শেষ জমি প্রস্তুতের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট এক ভাগ পটাশ সার বীজ বপনের ৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। তবে নাইট্রোজেন সার তিনটি সমান ভাগে বীজ বপনের ২৫, ৪০ ও ৬০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

 

চরে স্কোয়াশ চারার বয়স ও চারা রোপণ

বীজ গজানোর পর ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম। মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলটপালট করে এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। অতঃপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর বেøড দিয়ে কোটি পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি ওই জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে।

 

চরে স্কোয়াশ চাষের জন্য পরবর্তী পরিচর্যা

সেচ দেওয়া :

স্কোয়াস ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। সেচ নালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। জমিতে কখনও সব জমি ভেজানো বা প্লাবন সেচ দেয়া যাবে না। শুধু সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নেবে। প্রয়োজনে সেচনালা হতে ছোট কোনো পাত্র দিয়ে কিছু পানি গাছের গোড়ায় দেয়া যাবো। শুষ্ক মৌসুমে ৫-৭ দিন অন্তর সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।

মালচিং :

প্রত্যেক সেচের পর হালকা খড়ের মালচ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। আগাছা অনেক রোগের আবাসস্থল। এ ছাড়াও আগাছা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়। কাজেই চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ : ফলে মাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এটি থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ এবং পরাগায়নের পর ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করে মাছি পোকা দমন করা যায়। এ ছাড়াও ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রæপের কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ১০-১২ দিন পরপর ব্যবহার করে এই পোকার আক্রমণ কমানো যায়। রোগবালাইয়ের আক্রমণ তেমনটি চোখে পড়ে না।

বিশেষ পরিচর্যা : সাধারণত স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য ১৬-২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৭-২১ ডিগ্রি সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল ঝরে পড়ে ও ফলন কমে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একবারেই ফলন হয় না। অক্টোবর মাসে বীজ বপন করে নভেম্বরে লাগালে দেখা যায় যে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে জানুয়ারি পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায়, ফলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন ছাউনি বা গøাস হাউসে গাছ লাগালে রাতে ভেতরের তাপমাত্রা বাইরে অপেক্ষা বেশি থাকে।

ফসল সংগ্রহ : ফল পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। তখনও ফলে সবুজ রঙ থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। নখ দিয়ে ফলের গায়ে চাপ দিলে নখ সহজেই ভেতরে ঢুকে যাবে।

এ দেশে সবজির উৎপাদন বাড়াতে নতুন এই সুস্বাদু সবজি ফসলটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে এমনটিই প্রত্যাশা সবার।

 

 

মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজ আলাপ করবো। মিষ্টি কুমড়া বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। কচি মিষ্টি কুমড়া সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। পরিপক্ক ফল শুষ্ক ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় প্রায় ৪-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়। শুধু সবজি হিসেবে নয় মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ওষুধি গুণ।

মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

 

 

মিষ্টি কুমড়ার জাত :

আমাদের দেশে সাধারণত সুপ্রিমা, সুইটি, ড্রিমগোল্ড, সলিড গোল্ডসহ বেশ কিছু জাতের মিষ্টি কুমড়োর চাষ হয়।

মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য মাটি তৈরি এবং চাষের সময় :

প্রায় সারা বছরই কুমড়ো চাষ করা যায় । কুমড়ার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যায়। সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ বা এঁটেল দোঁআশ মাটি মিষ্টি  কুমড়ো চাষাবাদের জন্য ভালো।

মিষ্টি কুমড়ার চারা  উৎপাদন :

চারা সাধারণত পলিব্যাগে চারা তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিতে চারা তৈরি করা ভাল। পলিব্যাগের আকার ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি হতে হবে। ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর কুমড়োর বীজ বপন করতে হবে। অন্যদিকে ৬:৪ অনুপাতে দোআঁশ মাটির সঙ্গে গোবর-ছাই মিশিয়ে নিয়ে বীজতলা তৈরি করে নিতে হবে।

 

 

মিষ্টি কুমড়ার বীজের হার :

মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য সাধারনত এক বিঘা জমিতে ৬৫০-৮০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। এক হেক্টর জমিতে ৫-৬ কেজি বীজ লাগে।

মিষ্টি কুমড়া চাষের জণ্য জমি তৈরি ও বীজ বপন :

পারিবারিকভাবে আঙিনায় চাষ করতে হলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মাদা তৈরি করে তাতে বীজ বপন করতে হবে। তারপর চারা বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে বা কোন গাছের সাথে তুলে দিতে হবে।জমিতে চাষ করতে হলে বীজ বপন করার আগে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। এরপর মাটি সমান করে মাদা তৈরি পর বীজ বপন করতে হবে।

মিষ্টি কুমড়ার পরিচর্যা :

জমিতে আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে চারা গাছের গোড়ায় কিছুটা মাটি তুলে দিতে হবে। মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে। কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের ওপর ছড়িয়ে দিলে উৎপাদন বাড়বে। গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা বের হয়। এগুলোকে শোষক শাখা বলে। শোষক শাখা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও ফলন কমিয়ে দেয়।

 

 

মিষ্টি কুমড়ার সার প্রয়োগ পদ্ধতি :

মূল জমি তৈরির সময় জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিডের অর্ধেক অংশ প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিড মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সমান তিনভাগে ভাগ করে বীজ বপনের সময় প্রথম ভাগ, ১৫-২০ দিন পর দ্বিতীয় ভাগ এবং ৩৫-৪০ দিন পর তৃতীয়ভাগ প্রয়োগ করতে হবে।

জমির উর্বতা বিবেচনা করে সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি (কেজি শতাংশ):

সার কম উর্বর মধ্যম উর্বর বেশি উর্বর
পচাগোবর/কম্পোষ্ট ৩২ ২৪ ২৬
ইউরিয়া ০.৫২ ০.৪৪ ০.৩৬
টিএসপি ০.৮ ০.৭ ০.৬
এমওপি ০.৬০ ০.৫২ ০.৪৪
জ্সিাম ০.৪৪ ০.৩২ ০.২৪
দস্তা ০.০৫ ০.০৩ ০.০২
বোরিক এসিড ০.০৪ ০.০৩ ০.০২
ম‌্যাগনেশিয়াম ০.২ ০.১ ০.০৮
খৈল ২.০ ১.৬ ১.২

 

মিষ্টি কুমড়াতে সেচ প্রদান :

কুমড়া গাছের বৃদ্ধি, ফুল ও ফল ধারণের জন্য মাটিতে রস থাকার প্রয়োজন। শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে ৫-৬ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে। তবে ফল তোলার তিন সপ্তাহ আগেই সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। অপরদিকে বর্ষা বা বৃষ্টির পানি যেন বেশি দিন গাছের গোড়ায় জমে না থাকে সে ব‌্যবস্থা করতে হবে।

 

 

মিষ্টি কুমড়ার আগাছা দমন :

জমিতে আগাছা জমলে তা দমন করে দিতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং মাটি থেকে পুষ্টি শোষন করে নেয়। তাই জমিতে আগাছা দমন করতে হবে।

মিষ্টি কুমড়ার পোকা ও রোগ দমন :

কুমড়া জাতীয় গাছের বিভিন্ন পোকার মধ্যে লাল পোকা, কাঁটালে পোকা এবং ফলের মাছি উল্লেখ্যযোগ্য। এ পোকা দমনের জন্য সেভিন। ডায়াজিনন প্রয়োগ করা যেতে পারে। আর এ জাতীয় সবজির রোগের মধ্যে পাউডারি মিলডিও, ডাউনি মিলডিউ ও এনথ্রাকনোজ প্রধান। এসব রোগে দুই সপ্তাহ পর পর ডায়াথেন প্রয়োগ করতে হবে। মিষ্টি কুমড়ায় জাবপোকার আক্রমণে কুমড়ার বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিমবীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।

 

 

মিষ্টি কুমড়ার ফসল সংগ্রহ:

বীজ বপণের দুই মাসের মধ্যে কুমড়ার গাছ ফল ধরতে শুরু করে এবং রোগাক্রান্ত না হলে আড়াই মাসব্যাপী ফল দিয়ে থাকে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়। কুমড়ার ফল সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট কোনো পর্যায় নেই। ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী অপক্ক ও পরিপক্ক ফল পাড়া হয়। ফল যত বেশি পাড়া হয়, ফলন তত বেশি হয়। সবজি হিসেবে ব্যবহার করতে হলে ওজন আধা কেজি হলেও ফল সংগ্রহ যায়। ফল পরিপক্ক হলে হালকা হলুদ রং ধারণ করে। ফল পাকাতে চাইলে শেষের দিকে গাছে দিতে হবে। ফল পাকালে হেক্টর প্রতি ফলন কমে যায়। তবে সবজি হিসেবে ফল সংগ্রহ করলে হেক্টর প্রতি ২০ টন ফলন পাওয়া যায়।

 

 

মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা :

ফাইবারজাতীয় হওয়ায় মিষ্টি কুমড়া সহজেই হজম হয়। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে এটি। এছাড়া ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালীর খাদ্য সঠিক উপায়ে সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই সবজি। মিষ্টি কুমড়া ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে মিষ্টি কুমড়া। শরীরে শক্তি ও পুষ্টি জোগায়, ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়া শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে তাই ফলে লিভারও ভালো থাকে।

মিষ্টি কুমড়া রোগ প্রতিরোধ করে

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মিষ্টি কুমড়া একটি অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিন এই খাবারটি খেলে রোগ ব্যাধির সংক্রমণ কমে যায়। এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন ই মানবদেহে ক্যানসার ও আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। মিষ্টি কুমড়ায় থাকা ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

মিষ্টি কুমড়া হাই প্রেসার কমায়

যাদের হাই প্রেসার রয়েছে তারা নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন। কারণ মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। আর এটি আমাদের শরীরে হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তা ছাড়া মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

মিষ্টি কুমড়া চোখ ভালো রাখে

মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বা বিটাক্যারোটিন রয়েছে। যেটি চোখের জন্য খুবই ভালো। আমাদের চোখের রেটিনার বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু চোখের অসুখ নয়, ভিটামিন এ এর অভাবজনিত অন্যান্য রোগেও মিষ্টি কুমড়া উপকারী। তাই চোখ সুস্থ ও সচল রাখতে খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন মিষ্টি কুমড়া রাখতে পারেন।

মিষ্টি কুমড়া ত্বক উজ্বল করে

মিষ্টি কুমড়া ত্বক উজ্বল করতেও সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান ভিটামিন এ ও সি চুল এবং ত্বক ভালো রাখে। নিয়মিত এই সবজি খেলে উজ্জ্বল চুল ও চকচকে ত্বকের জন্য উপকারী। তা ছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

মিষ্টি কুমড়া খাদ্য হজমে সাহায্য করে

মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার আছে যা সহজেই হজম হয়। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালীর খাদ্য সঠিক উপায়ে সরবরাহে এই সবজির তুলনা হয় না।

মিষ্টি কুমড়া ডায়াবেটিসেও উপকারী

শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ কমায়। এ ছাড়া হজমে সাহায্য করে এমন প্রোটিনও সরবরাহ করে কুমড়োর বিচি। ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মিষ্টি কুমড়া বয়সের ছাপ কমায়

এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড। জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে।

 

 

কুল চাষ পদ্ধতি

কুল চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। বাংলাদেশে কুল একটি ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমি ফল। স্বাদ ও পুষ্টিমান বিচারে কুল অত‌্যন্ত উৎকৃষ্টমানের ফল। বিশেষ করে ভিটামিন সি-এর দিক থেকে আমলকী ও পেয়ারার পরই এর স্থান। কুল শুধু ফল হিসেবেই নয়, এ থেকে আচার, চাটনি ইত্যাদি মুখরোচক খাবারও তৈরি হয়।

কুল চাষ পদ্ধতি

 

আপেল কুল

 

কুলের বংশবিস্তার :

বীজ এবং কলমের মাধ্য , মে কুলের বংশবিস্তার করা যায়। কলমের চারার বংশগত গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। বীজ থেকে চারা পেতে বীজকে ভেজা গরম বালির ভেতর দেড়-দুই মাস রেখে দিলে তাড়াতাড়ি চারা গজায়। না হলে ৬-৮ সপ্তাহ সময় লেগে যায়। কলমের চারা পেতে নির্বাচিত স্থানে বীজ বপণ ও চারা তৈরি করে তার ওপর বাডিংয়ের মাধ্যমে কলম করে নেওয়া ভালো।

 

কাশ্মীরি আপেল কুল

 

কুলের জাত পরিচিতি :

বারি কুল-১ :

এটি নারিকেলী জাত নামে পরিচিত। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষত রাজশাহী ও খুলনা এলাকায় চাষাবাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত জাত। ফল আকারে বড়, ওজন গড়ে ২৩ গ্রাম ও লম্বা।

বারি কুল-২ :

জাতটি উত্তারাঞ্চলে চাষাবাদের জন্য ভাল হলেও দেশের অন্যত্রও চাষ করা যায়। ফল আকারে বড় ও ডিম্বাকৃতি।

বারি কুল-৩ :

জাতটি সারা দেশেই চাষ করা যায়। ফল বড়, প্রায় গোল আকারের ও হলুদাভ সবুজ রঙের। ফলন প্রতি হেক্টরে ২২-২৫ টন।

আপেল কুল :

আপেল কুল বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মোফাজ্জল হোসেন কর্তৃক উদ্ভাবিত এবং জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে অনুমোদিত। আপেল এর মতো রঙ হওয়ার জন্যে কুলটির নাম দেওয়া হয়েছে আপেল কুল। মিষ্টি স্বাদের জন্য অন্য কুলের চেয়ে এটি অনেক ভালো।

বাউকুল-১ :

ফল আকারে অনেক বড় হয় (গড়ে ৯০ গ্রাম)। মিষ্টতার পরিমানও অনেক বেশি। আগাম পরিপক্ক হয়। সারা দেশেই চাষ করা যায়।

কাশ্মীরি আপেল কুল :

কাশ্মীরি আপেল কুল দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রং আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। স্বাদ হালকা মিষ্টি অনেকটা বাউকুলের মতো। প্রচলিত আপেল কুল ও বাউকুলের থেকে আকারে বেশ বড় এই কাশ্মীরি আপেল কুল।

বল সুন্দরী কুল :

বল সুন্দরী দেখতে ঠিক আপেলের মতো। উপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং। খেতে সুস্বাদু। ফলটি রসালো ও মিষ্টি।

 

বল সুন্দরী কুল

 

কুল চাষের জন্য মাটি :

যেকোনো ধরনের মাটিতেই কুলের সন্তোষজনক ফলন পাওয়া যায়। কুলগাছ লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। তবে ভারি ও সামান্য ক্ষারযুক্ত বেলে দো-আঁশ মাটিতে কুলের ভালো ফলন পাওয়া যায়।

জমি তৈরি : বাগান আকারে চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভালো। তাছাড়া বাড়ির আনাচে-কানাচে, পুকুর পাড়ে বা আঙিনায় পড়ে থাকা অনুর্বর মাটিতেও গর্ত করে চাষ করা যায়।

রোপণ : বাগান আকারে চাষের জন্য বর্গাকার রোপণ প্রণালি অনুসরণীয়। রোপণ দূরত্ব ৬-৭ মিটার। জাত ও স্থানভেদে দূরত্ব কম-বেশি হবে। চারা রোপণের মাসখানেক আগে ১ মি. x১ মি. x১ মি. আকারের গর্ত করতে হবে।

কুল চাষের সময় :

মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-চৈত্র এবং মধ্য-শ্রাবণ থেকে মধ্য-ভাদ্র রোপণ করা যায়।

 

বারি কুল

 

কুল চাষের সার ব্যবস্থাপনা :

চারা গাছ লাগানোর ১ মাস পর চারা গাছের চারদিকে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সার হিসেবে পচা গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্টা পচানো কম্পোস্ট সার, খৈল ইত্যাদি প্রয়োগ করা যেতে পারে।  রাসায়নিক সার ভিন্ন বয়সের গাছে ভিন্ন অনুপাতে দেওয়া হয়। কুলের উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি সুষ্ঠু বৃদ্ধি ও অধিক ফলনশীলতার জন্য গাছে নিয়মিত ও পরিমাণমতো সার দিতে হবে। সারের মাত্রা নির্ভর করে গাছের বয়স, আকার ও মাটির উর্বরতার ওপর।  নিম্নে বিভিন্ন বয়সের গাছে সারের মাত্রা দেওয়া হলো-

গাছের বয়স (বছর) পচা গোবর (কেজি) ইউরিয়া (গ্রাম) টিএসপি (গ্রাম) এমওপি (গ্রাম)
১-২ ১০ ২৫০-৩০০ ২০০-২৫০ ২০০-২৫০
৩-৪ ২০ ৩৫০-৫০০ ৩০০-৪৫০ ৩০০-৪৫০
৫-৬ ২৫ ৫৫০-৭৫০ ৫০০-৭০০ ৫০০-৭০০
৭-৮ ৩৫ ৮০০-১০০০ ৭৫০-৮৫০ ৭৫০-৮৫০
৯ বা তদূর্ধ্ব ৪০ ১১৫০-১২৫০ ৯০০-১০০০ ৯০০-১০০০

 

সার বছরে ২-৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। ফল ধরা, ফল সংগ্রহ ও বর্ষার পর সার প্রয়োগ করা ভালো। সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দেওয়া উচিত।

 

কুল গাছের পরিচর্যা :

শুষ্ক মৌসুমে বিশেষত ফুল ও ফল ধরার সময়ে মাসে একবার সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। চারাগাছ (বীজের বা কলমে) হলে প্রথম বছর গাছটির কাঠামো মজবুত করার জন্য গাছের গোড়া থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার উঁচু পর্যন্ত কোনো ডালপালা রাখা যাবে না। এর উপরে শক্ত-সামর্থ কিছু শাখা-প্রশাখা গাছের অবস্থা অনুযায়ী রাখতে হবে। যেন ডালপালা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

কুল গাছের ছাঁটাই :

ছাঁটাইয়ের সময় শক্ত-সামর্থ শাখাগুলোর গোড়া থেকে না কেটে কিছু অংশ রেখে অগ্রভাগ কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া দুর্বল, রোগ ও কীট দৃষ্ট ও ঘনভাবে বিন্যস্ত ডালগুলো গোড়া থেকে কেটে পাতলা করে দিতে হবে। নতুন যে ডালপালা গজাবে সেগুলোও বাছাই করে ভালো ডালগুলো রেখে দুর্বল ডাল কেটে ফেলে দিতে হবে।

 

 

কুলের রোগ বালাই ও পোকার আক্রমণ :

ফল ছিদ্রকারী উইভিল পোকা :

ফল ছিদ্রকারী উইভিল কুল গাছের মারাত্মক ক্ষতিকারক পোকা। কয়েক বছর থেকে  দেশের বিভিন্ন স্থানে কুলের উন্নত জাতে এ পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। পোকার সদ্যজাত লার্ভা হালকা হলুদ বর্ণের হয়। এদের পা থাকে না। পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাঢ় বাদামি থেকে কালো বর্ণের হয়। পূর্ণ বয়স্ক পোকা কচি ফলে ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে লার্ভা ও পিউপা থেকে পূর্ণ রূপ ধারণ করে।

সদ্য জাত লার্ভা  কচি ফলের বীজে আক্রমণ করে এবং সম্পূর্ণ বীজ খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত ফলের নিচে কাল দাগ পড়ে এবং বীজের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, ফল ছোট গোলাকার হয় এবং ফ্যাকাশে ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। আক্রান্ত ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে বা গাছ শুকিয়ে যায়।

পোকা দমনে করণীয় :

কুল বাগানের আশপাশের ঝোপ-জঙ্গল ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। কুল গাছে অসময়ে আসা ফুল ও কুড়ি নষ্ট করে ফেলতে হবে। গাছ ও মাটিতে পড়ে যাওয়া আক্রান্ত ফলগুলো সংগ্রহ করে লার্ভা বা পিউপা বা পূর্ণ বয়স্ক পোকাসহ ধ্বংস করতে হবে। বেশি আক্রান্ত এলাকায় ফুল ধরার আগেই সব বাগান ও এলাকা অনুমোদিত কার্বারাইল জাতীয় কীটনাশক বা ডাইমেথোয়েট জাতীয় কীটনাশক  সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। যেহেতু পোকাটি ফলে ডিম পাড়ে এবং লার্ভা ফলের ভেতর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় সেজন্য আক্রমণের আগেই পোকা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য পরাগায়নের পর ফল ধরা শুরু হলে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

জমি সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে যেন ডালপালায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়। ছায়াযুক্ত জায়গায় কুল চাষ না করাই উত্তম।

হাত বা শক্ত  লাঠি দিয়ে টিউবগুলো নিম্ফসহ ধ্বংস করতে হবে। যেহেতু ফুল ধরার সময় এ পোকার আক্রমণ দেখা যায় সেজন্য গাছে ফুল আসার সময়ে কা- বা শাখায় টিউব দেখামাত্র সাইপারমেথ্রিন বা ফেনভেলারেট জাতীয় কীটনাশক  প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 

উইভিল পোকা

 

টিউব স্পিটল বাগ :

এ পোকার নিম্ফগুলো  সরু, লম্বা চুন যুক্ত টিউবের মধ্যে অবস্থান করে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। নিম্ফগুলো টিউবের মধ্যে তাদের তৈরি ফ্লুয়িডে (fluid) নিজেকে লুকিয়ে রাখে এবং টিউবে এদের মাথা নিচে এবং পেট ওপরে রাখে। নিম্ফগুলোর পেটে একটি বর্ধিত প্লেট থাকে যা টিউবের খোলা প্রান্তে দরজা হিসাবে কাজ করে এবং টিউবকে বন্ধ করে দেয়।

পূর্ণ বয়স্ক পোকা এবং নিম্ফ ফুল থেকে রস চুষে খায়। আক্রান্ত ফুল সম্পূর্ণ রূপে শুকিয়ে যায় এবং ফল ধারণের অনুপযোগী হয়। অধিক আক্রান্ত গাছ সম্পূর্ণ রূপে ফল ধারণে ব্যর্থ হয়।

 

টিউব স্পিটল বাগ

 

পাউডারি মিলডিউ :

এটি ছত্রাকজনিত একটি রোগ। এর আক্রমণে ফলন অনেক কমে যায়। আক্রান্ত ফুল ও ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে। গাছের পরিত্যক্ত অংশে এবং অন্যান্য উদ্ভিদে এ রোগের জীবাণু বেঁচে থাকতে পারে। এটি বাতাসের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। উষ্ণ ও ভেজা আবহাওয়ায় বিশেষ করে মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। গাছে ফুল দেখা দেযার পর থিওভিট ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম বা টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি.লি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। পরবর্তী ১৫ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করতে হবে।

 

কুলের পাউডারি মিলডিউ রোগ

 

কুল ফল সংগ্রহ :

জাত অনুসারে মধ্য-পৌষ থেকে মধ্য-চৈত্র মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। ফলের রং হালকা সবুজ বা হলদে হলে সংগ্রহ করতে হয়। গাছপ্রতি ৫০-২০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।

 

ধনিয়া চাষ পদ্ধতি

ধনিয়া চাষ নিয়ে আজকের আলোচনা। ধনিয়া বা ধনে একটি সুগন্ধি ঔষধি গাছ। এটি একটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার স্থানীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Coriandrum sativum। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় ধনে চাষ হয়। এর পাতা ও বীজ খাবারের মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ধনের পাতা এশীয় চাটনি ও মেক্সিকান সালসাতে ব্যবহার করা হয়। এর পাতা ছোট, সবুজ, মসৃণ হয়। ধনিয়া রবি ফসল হলেও এখন প্রায় সারা বছরই এর চাষ হয়। ধনিয়ার কচিপাতা সালাদ ও তরকারিতে সুগন্ধি মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ধনিয়ার পুষ্ট বীজ বেঁটে বা গুঁড়া করে তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ধনিয়া চাষ পদ্ধতি

ধনিয়া পাতা

 

 

ধনিয়ার জাত :

পাতা উৎপাদনকারী জাতের মধ্যে বারি ধনিয়া-১ বেশ ভালো ফলন দেয়। এছাড়া সুগন্ধা, এলবি-৬০ ও এলবি-৬৫ জাতগুলো সারা বছরই চাষ করা যায়। এই জাতের ধনিয়ার পাতা উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের, সুগন্ধযুক্ত ও দেরিতে ফুল উৎপাদনকারী। অর্থাৎ অনেকদিন ধরে পাতা উৎপাদন করে। এছাড়াও বাংলাদেশে বিলাতী জাতের ধনিয়া এবং হাইব্রিড ধনিয়া চাষ করা হয়। এগুলো উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন।

 

ধনিয়া বপনের সময় :

স্থানীয় দেশি জাতের ধনিয়া রবি মৌসুম ছাড়া আগাম চাষ করা যায় না। রবি মৌসুমের জন্য আশ্বিন-কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে ধনিয়ার বীজ বপন করতে হয়। তবে বর্তমানে সারাবছরব‌্যাপী ধনে চাষ হচ্ছে।

 

ধনিয়া পাতা

 

ধনিয়া চাষের জন্য মাটি :

সব ধরনের মাটিতেই ধনে চাষ করা যায়। তবে বেলে দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি ধনে চাষের জন্য উপযোগী। ধনে আবাদের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকতে হবে।

 

ধনিয়া পাতা

 

ধনিয়া চাষের জন্য জমি তৈরি ও বীজ বপন :

মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৪ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিতে হয়। বীজ বপনের আগে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। এতে বীজ শোধন ও বীজের ত্বক নরম হয়ে অঙ্কুরোদ্গমে সহায়ক হয়।

জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে এবং সমান করার পর ১ মিটার প্রস্থের বেড তৈরি করতে হয়। বেডে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে বীজ ছিটিয়ে বুনে দিতে হয়। বেডে সারি বরাবর একটি রশি টেনে রশি ধরে হাতের আঙুল বা একটি কাঠি দিয়ে ২-৩ সেন্টিমিটার গভীর করে নালা করতে হয়। নালায় বীজ ফেলে হালকা মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।

প্রতি শতকে ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। এই পরিমাণ বীজে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ধনিয়া গাছ পাওয়া যায়। বীজ ছিটিয়ে বপন করলে হেক্টরপ্রতি ৮ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হয়। মিশ্র ফসল হিসেবে সার পদ্ধতিতে বপনের জন্য ৪-৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

 

বিলাতি ধনিয়া পাতা

 

ধনিয়া চাষে সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি :

ধনে চাষের জন্য জমি তৈরির সময় জমির পরিমাণ ও সারের মাপ অনুযায়ী অর্ধেক গোবর, টিএসপি ও এমপি সার মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর চারা রোপণের এক সপ্তাহ আগে মাদার দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হবে। এর পর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হয়। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমপি সার দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর ৮ থেকে ১০ দিন পর প্রথম কিস্তিতে এবং চারা লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর বাকি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

ধনিয়া চাষে সারের পরিমাণ :

সার এক শতকে হেক্টর প্রতি
পচা গোবর/কম্পোস্ট ২০ কেজি ৫ টন
ইউরিয়া ০.৬১-০.৭৩ কেজি ৭৫-৯০ কেজি
টিএসপি ০.৪৪-০.৫৩ কেজি ১১০-১৩০ কেজি
এমওপি/পটাশ ০.৩৬-০.৪৪ কেজি ৪৫-৫৫ কেজি

 

ধনিয়া পাতা

 

ধনিয়া চাষে সেচ :

পাতা সংগ্রহের জন্য ধনিয়ার চাষ করলে ৩/৪ দিন পর হালকাভাবে সেচ দিতে হবে। ধনিয়ার জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিবার সেচের পর ‘জো’ আসার পর মাটির চটা ভেঙে দিন। গ্রীষ্মকালে বীজ ফেলার পর বেডের ওপর হালকা করে খড় বিছিয়ে দিন। এতে সেচ বা বৃষ্টির পানিতে ভিজে পাতায় মাটি লাগার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

 

ধনিয়া পাতা

 

ধনিয়া চাষে পরিচর্যা :

পাতা ফসলের ক্ষেত্রে চারা গজানোর ১০ থেকে ১৫ দিন পর প্রতি সারিতে ৫ সেন্টিমিটার পরপর একটি চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। বীজ ফসলের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ সেন্টিমিটার পরপর একটি চারা রাখতে হবে। নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার এবং মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।

প্রতিবার সেচের পর জমির ‘জো’ আসামাত্র মাটির জটা ভেঙে দিলে গাছের শিকড় প্রচুর আলো-বাতাস পাবে। ফলে গাছ দ্রুত বাড়বে। ধনে গাছ জমির পানি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই জমাকৃত অতিরিক্ত সেচের পানি বা বৃষ্টির পানি এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই বের করে দিতে হবে।

 

ধনিয়া পাতা

 

ধনিয়ার রোগবালাই :

ধনিয়া পাতার দাগ রোগ :

ছত্রাকের আক্রমণে ধনিয়া পাতার বাড়ন্ত পর্যায়ে দাগ রোগ হয়। এতে প্রথমে পাতায় হলুদ রংয়ের দাগ পড়ে, পরে সাদা হয়ে যায়। দাগগুলো একত্র হলে সম্পূর্ণ পাতাটি নষ্ট হয়। রোগের জীবাণু বাতাসে ছড়ায়। দাগ রোগে পাতা আক্রান্ত হলে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় বালাইনাশক (এইমকোজিম/নোইন ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

 

ধনিয়ার জাবপোকা :

ধনিয়া গাছ একটু বড় হলে তাতে জাবপোকার আক্রমণ হতে পারে। জাবপোকার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে ডাইফেনথিউরন ০.৫ গ্রাম/লিটার, থায়মিথস্কাম ০.৫ গ্রাম/লিটার, ফিপ্রনিল ১ মিলি/লিটার, স্পাইরোমেসিফেন ০.৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 

ধনিয়া পাতা কাটা পোকা :

পাতা কাটা পোকার আক্রমণ থেকে ধনিয়ার ফসল রক্ষা করতে ইমিডাক্লপ্রিড ০.২৫ মিলি/লিটার, অ্যাসিটাপ্রিমিড ০.৫ মিলি/লিটার, অ্যাসিফেট ০.৭৫ গ্রাম/লিটার, কার্বোসালফান ২ মিলি/লিটার একক বা মিশ্রন পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

 

ধনিয়া পাতা মোড়ানো রোগ :

ধনিয়ার মোল্ড বা পাতা পাতা মোড়ানো রোগ থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য শস্য বের হওয়ার ২০ দিন পরে ২০০ গ্রাম/প্রতি একর জমিতে কার্বেন্ডাজিম স্প্রে করতে হবে।

 

ধনিয়ার শিকড় পচা রোগ :

ধনিয়ার শিকড় পচা থেকে রক্ষা করতে প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসেবে নিমের কেক ৬০ গ্রাম/একর প্রতি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া Carbendazim ৫ গ্রাম/লিটার পানিতে অথবা কপার অক্সি ক্লোরাইড ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে মাটিতে ঢালতে হবে।

 

ধনিয়ার ফসল সংগ্রহ :

বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর পাতা সংগ্রহ শুরু করা যায়। পরবর্তী প্রায় ১ মাস ধরে পাতা সংগ্রহ করা যায়। সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে ১ শতক জমিতে ১৫ থেকে ২০ কেজি পাতা পাওয়া যায়। তবে বীজ সংগ্রহের জন্য গাছ রেখে দিলে বীজ সম্পূর্ণভাবে পাকলে প্রতি শতকে ৮ থেকে ১০ কেজি বীজ পাওয়া যায়।

 

ধনিয়ার পুষ্টিগুণ :

ধনিয়ায় প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ধনিয়া পাতায় ৩.৩ গ্রাম আমিষ, ৪.১ গ্রাম শর্করাসহ ৬ হাজার ৭২ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন ‘বি২’ বা রিবোফ্লাভিন ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-‘বি’ ১৩৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ২০.১ মিলিগ্রাম ও ২৯০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়াও পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে ধনেপাতায়।

ধনেপাতা রক্তপ্রবাহ থেকে ক্যান্সার, হৃদরোগ, মস্তিষ্কের বিভ্রাট, মানসিক রোগ, কিডনি ও ফুসফুসের অসুখ এবং হাড়ের দুর্বলতা দূর করে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই উদ্ভিদ অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিফাংগাল এবং যে কোনো চুলকানি ও চামড়ার জ্বলনে অব্যর্থ ওষুধ।

তবে অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া ঠিক না। অতিরিক্ত ধনেপাতা লিভারের কার্যক্ষমতাকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত ধনেপাতা নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ধনেপাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

 

গ্রীষ্মকালীন কাঁচা মরিচ চাষ

গ্রীষ্মকালীন কাঁচা মরিচ চাষ , মরিচ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী মসলা ফসল। কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই এ ফসলে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। রান্নার রং, রুচি ও স্বাদে ভিন্নতা আনার জন্য মরিচ একটি অপরিহার্য উপাদান। পুষ্টির পাশাপাশি মরিচের ভেষজ গুণ রয়েছে। কাঁচা মরিচ ভিটামিন-এ ও সি সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচে ২-৩ গ্রাম আমিষ, ৬ গ্রাম শ্বেতসার, ০.৬ গ্রাম তেল, ৭ গ্রাম আঁশ, ১০০-থেকে ২০০০ আই.ইউ ভিটামিন-সি এবং ২০ থেকে ২৮ গ্রাম অন্যান্য ভিটামিন ও পানি রয়েছে। এটি ক্ষুধা বর্ধক, বায়ু নাশক ইত্যাদি গুণাবলি সম্পন্ন।

গ্রীষ্মকালীন কাঁচা মরিচ চাষ

বাংলাদেশে প্রায় ১৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ৩৭ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাঁচা মরিচ রপ্তানি হয়। রবিও খরিপ-১ মৌসুমে মরিচ সহজলভ্য হলেও খরিপ-২ মৌসুমে বাজারে স্বল্পতা দেখা দেয়। তাই বর্ষ ও শীত মৌসুমের পূর্বে মরিচের উৎপাদন অব্যাহত রাখার প্রয়াসে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীগণের নিরলস প্রচেষ্টায় বারি মরিচ -২ নামে একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয় এবং জাতীয় বীজবোর্ড কর্তৃক ২০১৩ সালে মুক্তায়িত করা হয়। জাতটি দেশে কাঁচা মরিচের মোট উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

জাতের বৈশিষ্ট্য:

এটি একটি গ্রীষ্মকালীন মরিচের জাত। গাছ বেশ লম্বা ও ঝোপালো। গাছের পাতার রং হালকা সবুজ। প্রতি গাছে ৪৫০ থেকে ৫০০টি মরিচ ধরে। এই জাতের মরিচের ত্বক পুরু। কাঁচা অবস্থায় মরিচের রং হালকা সবুজ এবং পাকা অবস্থায় লাল। এ জাতের মরিচের জীবনকাল প্রায় ২৪০ দিন।

মাটি:

উঁচু এবং মাঝারি উঁচু জমিতে এ জাতটি চাষ করা যায়। সুনিষ্কাশিত, উর্বরতা সমৃদ্ধ বেলে দোঁআশ এবং পলি দোঁআশ মাটি এ জাতের মরিচ চাষের জন্য উত্তম। বাংলাদেশের বগুড়া, পাবনা, লালমরিহাট, ময়মনসিংহ ও সমগ্র খুলনা অঞ্চল, মানিকগঞ্জ ঢাকা প্রভৃতি এলাকায় জাতটি চাষ করা যায়।

রোপণ মৌসুম:

এটি একটি গ্রীষ্মকালীন জাতের মরিচ। এপ্রিল মাসে জমিতে এ মরিচের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এ জাতের মরিচের চারা জমিতে রোপণ করা যায়।

চারা উৎপাদন:

অপেক্ষাকৃত উঁচু যেখানে বৃষ্টির পানি দাঁড়ায় না, যথেষ্ট আলো-বাতাস পায়, পানি সেচের উৎস আছে এরূপ জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করতে হবে। গ্রীষ্মকালীন মরিচের জন্য মার্চ মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। প্রতিটি বীজতলার আকৃতি ১ মিটার হওয়া উচিত। এ ধরনের প্রতিটি বীজতলায় ১৫ গ্রাম হারে বীজ সারিতে বপন করতে হবে। ভাল চারার জন্য প্রথমে বীজতলার মাটিতে প্রয়োজনীয় কম্পোস্ট সার এবং কাঠের ছাই মিশিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।

বীজ বপনের ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা আগে প্রতিকেজি বীজে ২ গ্রাম হারে প্রোভেক্স বা ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে। শোধিত বীজ বীজতলায় ৪ থেকে ৫ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ১ সে.মি. গভীরে সরু দাগ টেনে ঘন করে বপন করতে হবে। বীজ বপনের পর বীজতলায় যাতে পোকামাকড় দ্বারা চারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সেভিন পাউডার মিশিয়ে মাটিতে স্প্রে করতে হবে। অতিবৃষ্টি বা খরা থেকে চারা রক্ষার জন্য বাঁশের চাটাই, পলিথিন বা নেট দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে। বাঁশের চাটাই বা পলিথিন সকাল বিকাল বা রাতে সরিয়ে নিতে হবে।

নেট ব্যবহারে বিভিন্ন শোষক পোকা চারাকে আক্রমণ করতে পারে না এবং নেটের ওপর দিয়ে হালকা সেচ দিলে চারা ভাল থাকে। ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে বীজ গজায়। চারা ৩ থেকে ৪ সে.মি. হলে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা পাতলা করা হয়। খাট, মোটা কাণ্ড ও ৪ থেকে ৫ পাতা বিশিষ্ট ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সের উৎকৃষ্ট চারা মূল জমিতে রোপণ করার উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।

জমি প্রস্তুত ও বেড তৈরি: গ্রীষ্মকালীন মরিচ চাষের জন্য ৪ থেকে ৫টি আড়াআড়িভাবে চাষও মই দিয়ে গভীরভাবে চাষ করে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমি থেকে আগাছা ও পূর্ববর্তী ফসলের আবর্জনা ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। চারা রোপণের জন্য ১.২ মি. প্রস্থ বিশিষ্ট প্রয়োজন মতো লম্বা ৩০ সে.মি. উচ্চতার বেড তৈরি করতে হবে। পানি সেচ ও নিষ্কাশনের জন্য দুই বেডের মাঝখানে ৪০ থেকে ৫০ সে.মি. প্রশস্ত নালা রাখতে হবে।

বীজের পরিমাণ ও রোপণ দূরত্ব: বারি মরিচ-২ এর চারা তৈরি করার জন্য একর প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব দিতে হবে ৬০ সে.মি. এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব দিতে হবে ৫০ সে.মি.। এভাবে রোপণ করলে একর প্রতি ১৩ হাজার ৩৩৩টি গাছ পাওয়া যায়।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি:

মাটির প্রকৃতি, উর্বরতা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে সারের মাত্রা ভিন্ন হতে পারে। বারি মরিচ-২ এর জন্য একর প্রতি ২ টন কম্পোস্ট, ৮৪ কেজি ইউরিয়া,১৩২ কেজি টিএসপি, ৮০ কেজি এমওপি ৪৪ কেজি জিপসাম ৬০০ গ্রাম বোরন সারের প্রয়োজন হয়। শেষ চাষের সময় কম্পোস্ট, টিএসপি, জিপসাম, বোরন ও ১/৪ অংশ এমপি সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর চারা রোপণের ২৫, ৫০ ও ৭০ দিন পর পর্যায়ক্রমে ১ম ২য় ও ৩য় কিস্তিতে প্রতিবার ৭০ কেজি ইউরিয়া ও ৫০ কেজি এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ প্রয়োগ: চারা রোপণ করার পর অবস্থা বুঝে হালকা সেচ প্রয়োগ করতে হবে, যাতে চারা সতেজ থাকে এবং মাটিতে সহজে খাপ খাওয়াতে পারে। যেহেতু বারি-২ মরিচ খরিপ-২ মৌসুমে চাষ করা হয়, তাই অন্যান্য মরিচের মতো বেশি সেচ প্রয়োজন হয় না। তবে অবস্থাভেদে ৩ থেকে ৪টি সেচ প্রয়োজন হতে পারে।

আগাছা দমন:

ভাল ফলনের জন্য চারা রোপণের ১৫, ৩০, ৪৫ ও ৬০ দিন পর পর চার বার নিড়ানি দিয়ে আগাছা দমন করতে হবে।

মাটি তোলা: ভাল ফসলের জন্য ৩ থেকে ৪ বার দুই সারির মাঝের মাটি তুলে দিতে হবে। এতে গাছের গোঁড়া শক্ত হয় এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধা হয়।

খুঁটি প্রদান: অধিক উচ্চতা, ফলনের ভার , ঝড়-বাতাস বা অতিবৃষ্টির কারণে গাছ হেলে পড়ে। ফলে মরিচের গুণাগুণ হ্রাস পায়। তাই হেলে পড়া থেকে রক্ষার জন্য খুঁটির সাথে মরিচ গাছ বেঁধে দিতে হবে।

ফসল ও বীজ সংগ্রহ: চারা রোপণের ৭০ থেকে ৮০ দিন পর মরিচ ফল উত্তোলন করা হয়। বারি মরিচ-২ এর জীবনকাল দীর্ঘ হওয়াতে প্রায় ৮ থেকে ১০ বার ফসল উত্তোলন করা যায়। উত্তম বীজের জন্য বড়, পুষ্ট ও সম্পূর্ণ পাকা মরিচ নির্বাচন করতে হবে। বর্ষাকালে মরিচ শুকানো বেশ কষ্টকর। এজন্য পাকা মরিচ দুই ফালি করে কেটে বীজ বের করে নিয়ে শুকাতে হবে।

বীজ সংরক্ষণ: মরিচের বীজ বিভিন্ন ধরনের বায়ুরোধী পাত্র, পলিথিন বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল প্যাকেটে সংরক্ষণ করা যায়। বীজ শোধনের জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির বায়ুরোধী পাত্র বা পলিথিন প্যাকেট ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত।

রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা: বারি মরিচ-২ জাতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। তবে মাঝে মধ্যে আগা মরা রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। এ ছাড়া বীজের জন্য রাখা পাকা মরিচে ফল পচা রোগ দেখা দিতে পারে।

আগা মরা রোগ:

সারা বছর এই রোগ হয়ে তাকে। তবে সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার পর তাপমাত্রাও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে এ রোগের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়।

রোগের লক্ষণ:

১। এই ছত্রাকের আক্রমণে নতুন আগায় ক্ষত দেখা দেয়।ফলে আগা মরতে মরতে পিছনের দিকে অগ্রসর হয়। এজন্যই এই রোগকে আগা মরা রোগ বলা হয়।

২। গাছে যখন ফুল ধরা শুরু করে তখনই এই রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। আক্রান্ত গাছের ফুল শুকিয়ে যায়।

৩। রোগ ফুল থেকে কা-ে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে এটি শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ডে ডাইব্যাক রোগের সৃষ্টি করে। শাখা- প্রশাখাগুলো নেতিয়ে শুকিয়ে যায়।

৪। মরা আগা পানি ভেজা বাদামি রং এর হয়ে থাকে ও চূড়ান্ত পর্যায়ে ধূসর সাদা বা খড়ের রঙয়ের মতো ধারণ করে। আক্রান্ত আগা, কাণ্ড বা মরিচের ফলে অত্যধিক পরিমাণে কালো রঙয়ের ছোট ছোট ছত্রাকের অণুবীজ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, যা খালি চোখে দেখা যায় না।

দমন ব্যবস্থাপনা:

১। রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।

২। বীজ বপনের পূর্বে প্রোভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজের সাথে ২ গ্রাম বা কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক এক গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করে কিছুক্ষণ ছায়ায় রাখার পর বপন করতে হবে।

৩। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানির সাথে ৩ গ্রাম হারে কুপ্রাভিট মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

ফল পচা রোগ:

এটি একটি বীজবাহিত রোগ। এ রোগের কারণে মরিচের ফলন শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।

রোগের লক্ষণ:

১।এই রোগের জীবাণু সাধারণত পাকা মরিচকে আক্রমণ করে থাকে।

২। আক্রান্ত ফলের ত্বকের উপর ছোট ছোট কালো গোলাকার স্পষ্ট দাগ দেখতে পাওয়া যায়।

৩। ফলের বিবর্ণ এলাকায় কালো ছত্রাকের অণুবীজ দেখতে পাওয়া যায়।

৪। আক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে ছত্রাক দ্বারা বীজ ঢেকে যায়।

৫। ফলে আক্রান্ত অংশ কালো হয়ে কুঁচকে যায়। আক্রান্ত ফল শুকিয়ে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনা:

১। রোগমুক্ত গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

২। রোগাক্রান্ত শুকনা কা- কেটে আগুনে পুড়য়ে ফেলতে হবে।

৩। ফসলের ক্ষেত সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

৪। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানির সাথে ৩ গ্রাম হারে কুপ্রাভিট মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর পর ৩ থেকে ৪ বার স্প্রে করতে হবে।

ফলন: ভালভাবে যত্ন নিলে বারি-২ জাতের মরিচে একর প্রতি ৮ থেকে ১০ টন ফলন পাওয়া যেতে পারে।

আরও দেখুন:

ঘরে বসে মাশরুম চাষ

ঘরে বসে মাশরুম চাষ , ঘরে বসে মাশরুম চাষ করা যায় খুব সহজেই। করোনাকালে যারা ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছেন তারা এটি চাষ করতে পারেন। মাশরুম অনেক পুষ্টিকর খবার। এই সময়ে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন হাই প্রোটিনযুক্ত ডায়েটের। মাশরুম হাই প্রোটিনযুক্ত। হজম হয় তাড়াতাড়ি। প্রোটিন ছাড়াও এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজপদার্থ।

ঘরে বসে মাশরুম চাষ

বিশ্বজুড়ে চাষ করা হয় নানা জাতের মাশরুম। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এবং তুলনামূলক সহজ পদ্ধতিতে ঘরে ফলানোর জন্য উপযুক্ত অয়েস্টার, মিল্কি, প্যাডি স্ট্র জাতীয় মাশরুম। অয়েস্টার মাশরুম ফলানোর পক্ষে আবার শীতকাল উপযুক্ত। বাকি দুটোর উপযুক্ত সময় মার্চের পর থেকে, যখন ঠান্ডা কমে যায়।

অয়েস্টার মাশরুম চাষের উপকরণ: প্রধানত তিনটি উপকরণ দরকার এই ধরনের মাশরুম চাষ করার জন্য। এগুলো হচ্ছে,- স্পন বা মাশরুমের বীজ, খড় ও পলিথিনের ব্যাগ। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায় এমন দোকানে, মাশরুম প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এবং অনলাইন শপিং সাইট থেকে মাশরুমের বীজ কিনতে পাওয়া যাবে। বাকি উপকরণগুলো সহজে জোগাড় করা যায়।

পদ্ধতি: চাষের জন্য প্রথমে আধ থেকে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত গরম পানিতে প্রায় ২০ মিনিট ফুটিয়ে নিন অথবা ব্লিচিং পাউডার ও চুন মেশানো পরিষ্কার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। ফোটানো বা ভেজানোর পরে পানি এমনভাবে ঝরিয়ে নেবেন, যাতে হাত দিয়ে খড় চাপলে পানি না পড়ে অথচ হাতে একটা ভেজা ভাব থাকবে। এরপর একটি পলিব্যাগের মধ্যে দু’ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে তার উপর ব্যাগের ধার ঘেঁষে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে।

বীজের উপরে আবার খড় ও খড়ের উপর আবার বীজ, এইভাবে প্রায় সাত-আটটা স্তর তৈরি করে পলিব্যাগের মুখ কয়েকটা প্যাঁচ দিয়ে কষে বন্ধ করে দিন। খড় বিছানোর সময় প্রতিবার হাত দিয়ে ভালো করে চেপে দিন, যাতে খড়ের ভিতর হাওয়া জমে না থাকে।

এরপরে প্যাকেটে দশ থেকে বারোটা ছোট ছোট ছিদ্র করে তুলা দিয়ে ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিলে স্বাভাবিক হাওয়া চলাচল বজায় থাকবে, আবার তুলা থাকায় ধুলাও ঢুকতে পারবে না। প্যাকেটটি সাত থেকে দশ দিনের জন্য কোনও অন্ধকার জায়গায় রেখে দিন।

খেয়াল রাখবেন, অন্ধকার হলেও জায়গাটিতে যেন হাওয়া চলাচল করে। জায়গাটি যাতে পরিষ্কার ও পোকা-মাকড়মুক্ত থাকে, সে খেয়ালও রাখতে হবে। মাছি কিন্তু মাশরুম চাষে ভয়ানক ক্ষতি করে।

কয়েক দিনের মধ্যেই সেই প্যাকেটে বীজের জায়গায় সাদা আস্তরণ দেখা দেবে, যাকে মাইসেলিয়াম বলে। অল্প কয়দিনের মধ্যে পুরো ব্যাগটাই মাইসেলিয়ামে ভরে গেলে তুলো সরিয়ে ফেলে আরও কয়েকটি ছিদ্র করে ব্যাগটিকে কিছুটা আলোর মধ্যে রাখতে হবে।

তবে সরাসরি রোদে নয়, ঘরের ভিতর যেটুকু আলোয় বই পড়া যায়, তেমন আলোয়। বাতাসে আর্দ্রতা বুঝে প্রয়োজন মাফিক প্যাকেটের উপরে মাঝে মাঝে জল স্প্রে করবেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ছিদ্র দিয়ে মাশরুমের পিনহেড উঁকি দেবে। সাধারণত পঁচিশ থেকে তিরিশ দিনের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার মতো পরিণত হয়ে যায়। একটি ব্যাগ থেকে তিনবার ফলন পাওয়া যায়।