Category Archives: পাঠ্যক্রম

পাঠ্যক্রম

এইচএসসি বাউবি ২৮৮৯ কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র সূচিপত্র

কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র বিষয় টি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একটি বিষয়। এর বিষয় কোড কোড ২৮৮৯। এই বিষয়ে মৎস্য চাষ, চিংড়ি চাষ, মাছ ও চিংড়ির খাদ্য, মাছ ও চিংড়ির রোগ ও রোগ ব্যবস্থাপনা, মাছ ও চিংড়ি সংরক্ষণ, পোলট্রির বিভিন্ন জাতি এবং জাত, পোলট্রি খামারের পরিকল্পনা, পোলট্রির ডিম ফোটানো ও বাচ্চা উৎপাদন, মুরগি পালন, কোয়েল, হাঁস, রাজহাঁস ও কবুতর পালন পদ্ধতি, প্রাণি সম্পদ, গবাদি প্রাণি পালন, গবাদি প্রাণির রোগ ব্যবস্থাপনা, দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনা, বনায়ন, কৃষি ও বৃক্ষ মেলা, কৃষি অর্থনীতি, কৃষি ঋণ ও সমবায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

 

সকল ইউনিটের পিডিএফ ডাউনলোড:

 

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবহমানকাল থেকেই এদেশের মানুষের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে মাছ। আর এজন্যই বলা হয় “মাছে ভাতে বাঙালী। বিপুল জলসম্পদের এই দেশে অগনিত মানুষ মৎস্য আহরণ, চাষ ও বেচা—বিক্রিসহ এ সংক্রান্ত নানা কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে প্রাণীজ আমিষের উত্তম উৎস হিসেবে মাছের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বৈদেশিক মুদ্রার্জনের পাশাপাশি মৎস্য চাষ করে অনেক বেকার যুবকযুবতী স্বাবলম্বী হচ্ছে।

দেশের আর্থ—সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ত্বরাম্বিত হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার মৎস্য খাতের সার্বিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনাগত উৎকর্ষতা সাধনের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। সময়োপযোগী ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছসহ অন্যান্য জলসম্পদের উৎপাদন বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নানা কার্যকর উদ্যোগ। ফলে দেশের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪—১৫ অর্থবছরে ৩৬ লক্ষ ৮৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা সরকারের সুযোগ্য নেতৃত্বে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার মালিকানা অর্জন করেছে। এখন জাতিসংঘ ঘোষিত “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এস.ডি.জি)” অর্জনে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পাশাপাশি সামুদ্রিক বিশাল জলজসম্পদকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে।

 

ইউনিট ১ : মৎস্য চাষ

পাঠ — ১.১ : মাছ চাষ পদ্ধতির ধারণা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পাঠ — ১.২ : মাছের আবাসস্থল

পাঠ — ১.৩ : রাজপুটির চাষ পদ্ধতি .

পাঠ — ১.৪ : নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি

পাঠ — ১.৫ : কই মাছ চাষ পদ্ধতি

পাঠ — ১.৬ : পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি

পাঠ — ১.৭ : ব্যবহারিক : প্রদর্শিত মাছ (রাজাপুটি, নাইলোটিকা, কই ও পাঙ্গাস) শনাক্তকরণ।

 

ইউনিট ২ : চিংড়ি চাষ

পাঠ — ২.১ : বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা

পাঠ — ২.২ : পুকুরে ও ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ

পাঠ — ২.৩ : ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ

পাঠ — ২.৪ : উপকূলীয় এলাকায় ও লবনক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষ

পাঠ — ২.৫ : ব্যবহারিক : প্রদর্শিত চিংড়ি (গলদা ও বাগদা) শনাক্তকরণ

 

ইউনিট ৩ : মাছ ও চিংড়ির খাদ্য

পাঠ — ৩.১ : মাছের খাদ্য : প্রাকৃতিক ও সম্পূরক

পাঠ — ৩.২ : চিংড়ি খাদ্য

পাঠ — ৩.৩ : মাছ ও চিংড়ি খাদ্র প্রস্তুতকরণ

পাঠ — ৩.৪ : চাষের পুকুর/ ঘেরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ

পাঠ — ৩.৫ : ব্যবহারিক : মাছের সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরি ও প্রয়োগ পদ্ধতি

 

ইউনিট ৪ : মাছ ও চিংড়ির রোগ ও রোগ ব্যবস্থাপনা

পাঠ — ৪.১ : মাছের রোগ সৃষ্টিকারী নিয়ামক সমূহ ও তাদের আন্ত:ক্রিয়া

পাঠ — ৪.২ : মাছের রোগ ও তার প্রতিকার

পাঠ — ৪.৩ : চিংড়ির রোগ ও তার ব্যবস্থাপনা

পাঠ — ৪.৪ : ব্যবহারিক : বাহ্যিক লক্ষণ দেখে সুস্থ ও রোগাক্রান্ত মাছ শনাক্তকরণ

 

 

ইউনিট ৫: মাছ ও চিংড়ি সংরক্ষণ

পাঠ — ৫.১ : মাছ পচনের কারণ ও সংরক্ষণের

পাঠ — ৫.২ : মাছ পরিবহন ও বাজারজাতকরণ

পাঠ — ৫.৩ : চিংড়ি পরিবহন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ

পাঠ — ৫.৪ : ব্যবহারিক : ফরমালিন শনাক্তকারী কিট দ্বারা ফরমালিন যুক্তইউনিট

 

ইউনিট ৬: পোলট্রির বিভিন্ন জাতি এবং জাত

পাঠ — ৬.১ : পোলট্রির ধারণা, বর্তমান অবস্থা, সমস্যা ও সম্ভাবনা

পাঠ — ৬.২ : মুরগির শ্রেণি, জাত ও বৈশিষ্ট্য

পাঠ — ৬.৩ : হাঁস, রাজহাঁস, কবুতর ও কোয়েলের জাত ও বৈশিষ্ট্য

 

ইউনিট ৭ : পোলট্রি খামারের পরিকল্পনা

পাঠ — ৭.১ : পোলট্রি খামারের পরিকল্পনা ও আয়—ব্যায়ের হিসাব

পাঠ — ৭.২ : ব্রয়লার মুরগির খামার স্থাপন

পাঠ — ৭.৩ : ডিমপাড়া মুরগির খামার স্থাপন

পাঠ — ৭.৪ : ব্যবহারিক: পোলট্রি খামার সরেজমিনে পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়ন ইউনিট

 

ইউনিট ৮ : পোলট্রির ডিম ফোটানো ও বাচ্চা উৎপাদন

পাঠ — ৮.১ : ডিম অনুর্বর হওয়ার কারণ, ডিমের যত্ন ও সংরক্ষণ

পাঠ — ৮.২ : বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি

পাঠ — ৮.৩ , পাঠ — ৮.৪ : ব্যবহারিক— উর্বর ডিম নির্বাচন , হ্যাচারি পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়

 

ইউনিট ৯ : মুরগি পালন

পাঠ — ৯.১ : মুরগি পালন পদ্ধতি

পাঠ — ৯.২ : মুরগি পালনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা

পাঠ — ৯.৩ ,পাঠ — ৯.৪ : মুরগির রোগ ব্যবস্থাপনা , ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির দানাদার খাদ্য তৈরি

 

ইউনিট ১০ : কোয়েল, হাঁস, রাজহাঁস ও কবুতর পালন পদ্ধতি

পাঠ — ১০.১ : কোয়েল পালন

পাঠ — ১০.২ : হাঁস পালন

পাঠ — ১০.৩,পাঠ — ১০.৪ : কবুতর পালন ,কোয়েলের দানাদার খাদ্য তৈরিকরণ (ব্যবহারিক)

ইউনিট ১১ : প্রাণি সম্পদ

পাঠ — ১১.১ : প্রাণি সম্পদের সমস্যা ও সম্ভাবণা

পাঠ — ১১.২ : গবাদি প্রাণির বয়স, লিঙ্গ ও ব্যবহার ভেদে নামকরণ

পাঠ — ১১.৩ : গরুর জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য

পাঠ — ১১.৪ : মহিষের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য

পাঠ — ১১.৫ : ছাগলের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য

 

ইউনিট ১২ : গবাদি প্রাণি পালন

পাঠ — ১২.১ : মহিষের বাসস্থান

পাঠ — ১২.২ : গবাদি প্রাণির খাদ্য ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা

পাঠ — ১২.৩ : সাইলেজ তৈরি

পাঠ — ১২.৪, পাঠ — ১২.৫ : ইউরিয়ার সাহায্যে খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ , ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরি

 

ইউনিট ১৩ : গবাদি প্রাণির রোগ ব্যবস্থাপনা

পাঠ — ১৩.১ : গবাদি প্রাণির রোগের সংজ্ঞা, শ্রেণীবিন্যাস ও বিস্তার

পাঠ — ১৩.২ : গবাদি প্রাণির ভাইরাসজনিত রোগ

পাঠ — ১৩.৩ : গবাদি প্রাণির ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

পাঠ — ১৩.৪ : গবাদি প্রাণির পরজীবী জনিত রোগ

পাঠ — ১৩.৫ : গবাদি প্রাণির অপুষ্টিজনিত রোগ

পাঠ — ১৩.৬ : ছাগলের রোগ ব্যবস্থাপনা

 

ইউনিট ১৪ : দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনা

পাঠ — ১৪.১ : দুগ্ধবতী গাভীর জাত নির্বাচন

পাঠ — ১৪.২ : গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন গাভীর যত্ন

পাঠ — ১৪.৩ : দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন ও খাদ্য

পাঠ — ১৪.৪ : নবজাতক বাছুরের যত্ন

পাঠ — ১৪.৫ : বিশুদ্ধ দুধ উৎপাদন ও সংরক্ষণ

পাঠ — ১৪.৬ : দুধ উৎপাদন প্রভাবক বিষয়সমূহ

পাঠ — ১৪.৭ ,পাঠ — ১৪.৮ : বাণিজ্যিক ডেইরি ফার্ম পরিদর্শণ ও প্রতিবেদন তৈরি , গর্ভবতী গাভী শনাক্তকরণ

 

ইউনিট ১৫ : বনায়ন

পাঠ — ১৫.১ : বন, বনায়নের ধারণা ও গুরুত্ব

পাঠ — ১৫.২ : বন ও বনায়নের প্রকারভেদ

পাঠ — ১৫.৩ : সামাজিক বনায়ন

পাঠ — ১৫.৪ : বনজ বৃক্ষের চারা রোপণের বিভিন্ন ধাপ

পাঠ — ১৫.৫ : কাষ্ঠল বৃক্ষের ট্রেনিং, প্রম্ননিং ও ক্ষতস্থান ডেসিং

পাঠ — ১৫.৬ : ব্যবহারিক— শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ ও পরিচর্যা

 

ইউনিট ১৬ : কৃষি ও বৃক্ষ মেলা

পাঠ — ১৬.১ : কৃষি ও বৃক্ষ মেলার

পাঠ — ১৬.২ : বৃক্ষ মেলার উপযোগী প্রজাতি নির্বাচন

পাঠ — ১৬.৩ : উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষ মেলা ও বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহ

পাঠ — ১৬.৪ : ব্যবহারিক —কৃষি ও বৃক্ষ মেলা পরিদর্শন ও প্রতিবেদন তৈরী

 

ইউনিট ১৭ : কৃষি অর্থনীতি

পাঠ — ১৭.১ : কৃষি অর্থনীতি

পাঠ — ১৭.২ : খামার ও খামারকরণ

পাঠ — ১৭.৩ : খামারের কার্যাবলী, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা

পাঠ — ১৭.৪ : খামার স্থাপনের পরিকল্পনা

পাঠ — ১৭.৫ : শস্য পরিকল্পনা, শস্য পঞ্জিকা ও শস্য আবর্তন

পাঠ — ১৭.৬ : ফসল বিন্যাস

 

ইউনিট ১৮ : কৃষি ঋণ ও সমবায়

পাঠ — ১৮.১ : কৃষি ঋণ ও সমবায়

পাঠ — ১৮.২ : কৃষি সমবায়ের ধারণা, উদ্দেশ্য ও প্রকারভেদ

পাঠ — ১৮.৩ : কৃষি উন্নয়নে সমবায়ের ভূমিকা ও সমবায় আইন

পাঠ — ১৮.৪ : কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণ

 

 

বাউবি বিএই ১২০১ – কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ সূচিপত্র

কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ সূচিপত্র । এই পাঠটি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর “কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল” এর “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” কোর্স যার কোড ১২০১।

কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ

কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ – বাউবি বিএই ১২০১ – বই PDF ডাউনলোড

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই এদেশের সমস্ত কর্মকান্ড ও উন্নয়ন কৃষিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি কৃষি উন্নয়নের সংগে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এদেশে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উত্তরাঞ্চল থেকে আগত নদ—নদীর ঢলে কোন কোন বছর বন্যা দেখা দেয়। বর্ষাকালে প্রতি বছর নদ—নদী বিধৌত অঞ্চলে প্রচুর পলি পরে। ফলে নদ—নদী বিধৌত অঞ্চলের মাটি স্বভাবতঃই বেশি উর্বর। বাংলাদেশের জলবায়ু সমভাবাপন্ন।

প্রায় সারা বছরই কোন না কোন ফসল জন্মে। বছরের কোন সময় কী ধরণের ফসল জন্মাবে তা জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ফসল উৎপাদনের জন্য জমি চাষ, বীজ বপন বা চারা রোপণ, নিড়ানী দেয়া, সেচ প্রয়োগ, আপদনাশক ছিটানো থেকে শুরু করে ফসল কর্তন, মাড়াই, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইত্যাদি কাজগুলোকে আবহাওয়া প্রভাবান্বিত করে। আবহাওয়ার তারতম্যের ভিত্তিতে ফসল উৎপাদন খরিপ—১, খরিপ—২ ও রবি — এই তিন মৌসুমে বিভক্ত করা হয়। খরিপ মৌসুমের সব ফসলই বৃষ্টি নির্ভর। রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে বোরো ধান ও গমের আবাদ করা হয়।

 

কৃষি পরিচিতি:

ইউনিট — ১ বাংলাদেশের কৃষি: ভূমি, জলবায়ু ও ফসল উৎপাদন 

পাঠ — ১.১ কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি
পাঠ — ১.২ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান
পাঠ — ১.৩ জীবজন্তু ও গাছপালার উপর জলবায়ুর প্রভাব
পাঠ — ১.৪ ভূমি ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান
পাঠ — ১.৫ কৃষি উপকরণ ব্যবহারের বর্তমান অবস্থা
পাঠ — ১.৬ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসলের অবদান

 

ইউনিট — ২ পশু—পাখি, মৎস্য ও বন সম্পদ 

পাঠ — ২.১ বাংলাদেশের পশুপাখির পরিচিতি, পশুপাখির পরিসংখ্যান
পাঠ — ২.২ পশুপাখির জাত পরিচিতি, জাতীয় অর্থনীতিতে পশুপাখির অবদান
পাঠ — ২.৩ বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের পরিচিতি ও পরিসংখ্যান
পাঠ — ২.৪ বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের অবদান
পাঠ — ২.৫ বাংলাদেশের বনজ সম্পদের গুরুত্ব

 

ইউনিট — ৩ কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, খাদ্য পরিচিতি, আমদানি ও রপ্তানি 

পাঠ — ৩.১ বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব
পাঠ — ৩.২ মাঠ ফসল, হাঁস—মুরগি, গবাদিপশু ও মৎস্য খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।
পাঠ — ৩.৩ বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা
পাঠ — ৩.৪ বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য কৃষি পণ্যের তালিকা ও পরিমাণ
পাঠ — ৩.৫ বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষি পণ্যের উৎপাদনের পরিমাণ

 

 

পরিবেশ :

ইউনিট — ১ পরিবেশ ও ইকোসিস্টেম 

পাঠ — ১.১ পরিবেশ সম্পর্কিত ধারণা, পরিবেশের উপাদান
পাঠ — ১.২ ইকোসিস্টেমের সংজ্ঞা, উদ্ভিদ, প্রাণী ও ইকোসিস্টেম
পাঠ — ১.৩ বিভিন্ন ধরনের ইকোসিস্টেম
পাঠ — ১.৪ পরিবেশের ওপর উদ্ভিদ ও বনায়নের প্রভাব
পাঠ — ১.৫ বাংলাদেশের পরিবেশ নীতি ও পরিবেশগত অবস্থা
পাঠ — ১.৬ বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশ অব্জলসমূহের পরিচিতি

 

ইউনিট — ২ পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার 

পাঠ — ২.১ পরিবেশ দূষণের ধারণা ও প্রকারভেদ
পাঠ — ২.২ বায়ু দূষণ
পাঠ — ২.৩ পানি দূষণ
পাঠ — ২.৪ জনসংখ্যা ও পরিবেশ দূষণ
পাঠ — ২.৫ মৃত্তিকা দূষণ

 

ইউনিট — ৩ গ্রীন হাউজ ইফেক্ট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

পাঠ — ৩.১ গ্রীন হাউজ ইফেক্ট
পাঠ — ৩.২ গ্রীন হাউজ গ্যাসসমূহ ও এদের উৎস
পাঠ — ৩.৩ জীব জগৎ ও গ্রীন হাউজ ইফেক্ট
পাঠ — ৩.৪ ওজোন স্তরের ক্ষয় এবং জীবজগতে এর প্রভাব
পাঠ — ৩.৫ বায়োগ্যাস ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

 

Bag Ed – ব্যাচেলর অব এগ্রিকালচারাল এডুকেশন

Bag Ed – ব্যাচেলর অব এগ্রিকালচারাল এডুকেশন। ১৯৯৭ সালে সার্ডে এ প্রোগ্রামটি চালু হয়। এ প্রোগ্রামের লেভেল হলো কৃষি শিক্ষায় স্নাতক ও বিএড সমমান। বিএজিএড ডিগ্রীধারীগণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়/ দাখিল মাদ্রাসায় কৃষি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করলে তারা বিএড ডিগ্রীধারীগণের ন্যায় সমান বেতন স্কেল এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

এছাড়া বিএজিএড ডিগ্রীধারীগণের এমএড করার এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট সরকারী/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার সুযোগ রয়েছে।

Bag Ed – ব্যাচেলর অব এগ্রিকালচারাল এডুকেশন

 

কোর্সের মেয়াদ:

বিএজিএড প্রোগ্রামটি ০৩ (তিন) শিক্ষাবর্ষ বা ০৬ (ছয়) সিমেস্টার মেয়াদী। প্রতিটি সিমেস্টারের ব্যাপ্তি ০৬ (ছয়) মাস। ভর্তিকৃত একজন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ০৬ (ছয়) শিক্ষাবর্ষ অর্থাৎ ভর্তির সিমেস্টার থেকে শুরু করে পরবর্তী ১২ (বার) সিমেস্টার পর্যন্ত্ বহাল থাকবে। তবে কোন শিক্ষার্থী ০৬ (ছয়) শিক্ষাবর্ষে প্রোগ্রামের সকল কোর্সে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার ২ বছরের মধ্যে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল পুনরায় ০২ (দুই) শিক্ষাবর্ষের জন্য তাকে ভর্তির অনুমতি দিবে। এ ধরনের ভর্তি রেজিস্ট্রেশনকে পুনঃরেজিস্ট্রেশন (De-novo Registration) হিসাবে গণ্য করা হবে এবং আবেদনকারীকে আবেদনের পূর্বে প্রোগ্রামের শতকরা সত্তর ভাগ (৭০%) কোর্স সফলভাবে সমাপ্ত করেছেন মর্মে স্কুলকে নিশ্চিত করতে হবে।

 

কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা:

এইচএসসি (বিজ্ঞান/কৃষি গ্রুপ অথবা কৃষি বিজ্ঞান বিষয়সহ যে কোন গ্রুপ) অথবা চার বা তিন বছর মেয়াদি কৃষি ডিপোমা/সমমানের সার্টিফিকেটধারী এবং ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ বা জিপিএ ২.০ (দুই) প্রাপ্ত হতে হবে। যে কোন পেশা ও বয়সের ব্যক্তি এ প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত প্রার্থীর বেলায় ৩য় বিভাগ গ্রহণযোগ্য। আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সংশিষ্ট ভর্তি কমিটির নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।

কোর্সের মোট ক্রেডিট:

সর্বমোট ক্রেডিট হলো ৯৫ (পঁচানব্বই)। প্রতি ক্রেডিট ১৫ ঘন্টার লেকচার + ১৫ ঘন্টার পাঠ বা ৩০ ঘন্টার শিক্ষা কার্যক্রমের সমতুল্য হবে।

 

প্রগ্রামের কোর্স সমুহ:

প্রথম সিমেস্টারের কোর্সসমূহ:

ক্রম কোর্স কোড বাংলা নাম ইংরেজী নাম   ক্রেডিট
বিএই ১২০১ কৃষি পরিচিতি পরিবেশ Introductory Agriculture & Environment
বিএই ১১০২ বীজ বীজ প্রযুক্তি Seed & Seed Technology
বিএই ১৩০৩ মাঠ ফসল উৎপাদনের মৌলনীতি খামার ব্যবস্থা Technology Basic Principles of Field Crop Production & Farming Systems
বিএই ১২০৪ মৃত্তিকা বিজ্ঞান Soil Science
বিএই ২৩০৩ খামার যন্ত্রপাতি Farm Machinaries
বিএই ১৩০৬ মাছের চাষ ব্যবস্থাপনা Aquaculture & Management
বিএই ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন Husbandry of Domestic Animals

 

মোট ক্রেডিট = ১৭

 

 

দ্বিতীয় সিমেস্টারের কোর্সসমূহ:

 

ক্রম কোর্স কোড বাংলা নাম ইংরেজী নাম   ক্রেডিট
বিএই ২৩০১ মাঠ ফসল উৎপাদনের কৌশল Techniques of Field Crop Production
বিএই ২২০২ উদ্ভিদ পুষ্টি সার Plant Nutrition & Fertilizer Management
বিএই ২১০৬ ব্যবস্থাপনা বন জীব বৈচিত্র্য Forest & Biodiversity Fish Feed & Nutrition
২২০৫ মাছের খাদ্য পুষ্টি Husbandry of Domestic Birds &
১৩০৫ গৃহপালিত পাখি পালন হাঁসমুরগির হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা Hatchery Management
বিএই ৫২০৭ পরিসংখ্যান Statistics
বিএই ৩২০৬ শিক্ষা মনোবিজ্ঞান Educational Psychology 1

 

মোট ক্রেডিট = ১৫

 

 

তৃতীয় সিমেস্টারের কোর্সসমূহ:

 

ক্রম কোর্স কোড বাংলা নাম ইংরেজী নাম   ক্রেডিট
বিএই ৫২০১ ফসলের রোগ আগাছা Crop Diseases & Weeds
বিএই ৬২০৪ ফুল সুদৃশ্য গাছের চাষাবাদ Cultivation of Ornamental Plants
বিএই ৪৩০১ ফল চাষ Fruit Culture
বিএই ৩২০২ সেচ পদ্ধতি ব্যবস্থাপনা Irrigation System & Management
বিএই ৩২০৩ বনায়ন Afforestation
বিএই ৪৩০৩ গৃহপালিত পশুর রোগ প্রতিকার Diseases & Remedies of Domestic Animals
বিএই ৪২০৭ শিক্ষা মনোবিজ্ঞান Educational Psychology 2

 

 

মোট ক্রেডিট ১৬

 

 

চতুর্থ সিমেস্টারের কোর্সসমূহ:

 

ক্রম কোর্স কোড বাংলা নাম ইংরেজী নাম   ক্রেডিট
বিএই ৪৩০২ ফসলের পোকা মাকড় ইঁদুর দমন Control of Crop Insects, Mites & Rats
বিএই ৬২০২ কৃষি অর্থনীতি Agricultural Economics
বিএই ৫২০৩ মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা Fish Health Care
বিএই ৫২০২ গৃহপালিত পাখির রোগ প্রতিকার Diseases & Remedies of Domestic Birds
বিএই ৩৩০৭ শিক্ষানীতি Principle of Education 1
বিএই ৪২০২ শিক্ষা মূল্যায়ন নির্দেশনা Educational Evaluation & Guidance 1
বিএই ৫২০৬ শিক্ষার ইতিহাস History of Education 1

 

মোট ক্রেডিট ১৬

 

 

পঞ্চম সিমেস্টারের কোর্সসমূহ:

 

ক্রম কোর্স কোড বাংলা নাম ইংরেজী নাম   ক্রেডিট
বিএই ৩৩০১ সবজি চাষ Vegetable Culture
বিএই ৩২০৪ বনজ নার্সারী Forest Nursery
বিএই ৬২০৩ মৎস্য আহরণ সংরক্ষণ Fish Harvesting and Preservation
বিএই ৪১০৪ গাভীর জাত উন্নয়ন দুগ্ধ খামার স্থাপন Dairy Breed  Improvement and Establishment of Dairy Farm
বিএই ১২০৭ মাতৃভাষা বাংলা Mother Tongue Bangla
বিএই ২২০৭ ইংলিশওর্যাল কম্যুনিকেশন এন্ড স্টাডি  স্কিলস English-Oral  Communication & Study Skills
বিএই ৪২০৫ শিক্ষানীতি Principle of Education 2
বিএই ৫২০৫ শিক্ষা মূল্যায়ন নির্দেশনা Educational Evaluation & Guidance 2

 

মোট ক্রেডিট ১৬

 

 

ষষ্ঠ সিমেস্টারের কোর্সসমূহ:

 

ক্রম কোর্স কোড বাংলা নাম ইংরেজী নাম   ক্রেডিট
বিএই ৬২০১ কৃষি সম্প্রসারণ Agricultural Extension
বিএই ৫২০৮ কম্পিউটার পরিচিতি ব্যবহার  Introduction to Computer and its uses
বিএই ৩২০৫ ইংলিশরিডিং এন্ড রাইটিং স্কিলস্ English-Reading & Writing Skills
বিএই ৫২০৪ শিক্ষানীতি Principle of Education 3
বিএই ৬২০৬ শিক্ষার ইতিহাস History of Education 2
বিএই ৬২০৫ শিক্ষা প্রশাসন ব্যবস্থাপনা Educational Administration and Management
বিএই ৬৩০৭ শিক্ষা মনোবিজ্ঞান Educational Psychology 3

 

মোট ক্রেডিট ১৫

CLP সার্টিফিকেট ইন লাইভস্টক এন্ড পোল্ট্রি (সিএলপি)

CLP সার্টিফিকেট ইন লাইভস্টক এন্ড পোল্ট্রি (সিএলপি) কোর্সটি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এর কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল এর আওতায় পরিচালিত একটি সার্টিফিকেট কোর্স।

CLP সার্টিফিকেট ইন লাইভস্টক এন্ড পোল্ট্রি (সিএলপি)

পরিবার তথা সমাজ বা দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য মাংস, দৃগ্ধ ও উপজাত দ্রব্যের প্রথাগত বা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পোল্ট্রি ও গবাদি পশুর খামার স্থাপনের লক্ষ্যে কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন জনবল তৈরি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই হলো এ প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য।

 

ভর্তির যোগ্যতা

ন্যূনতম এস.এস.সি. বা সমমান।

প্রোগ্রামের মেয়াদ

CLP প্রোগ্রামটি এক সিমেস্টার মেয়াদী (ছয় মাস)। বছরে দুই বার জানুয়ারি-জুন ও জুলাই-ডিসেম্বর সিমেস্টার অর্থাৎ প্রতি ছয় মাস পর পর এ প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যায় ।

রেজিস্ট্রেশন মেয়াদ

(ক) ভর্তিকৃত একজন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন মেয়াদ ০১ (এক) বছর ০৬ (ছয়) মাস, অর্থাৎ ভর্তিকৃত সিমেস্টারসহ তিন সিমেস্টার পর্যড় বহাল থাকবে।

(খ) কোন শিক্ষার্থী ৩ সিমেস্টারে প্রোগ্রামের সকল কোর্স সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার ২ বছরের মধ্যে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল পুনরায় ১ সিমেস্টারের জন্য তাকে ভর্তির অনুমতি দিবে। এ ধরণের ভর্তি রেজিস্ট্রেশনকে পুনঃরেজিস্ট্রেশন (De-novo Registration) হিসাবে গণ্য করা হবে এবং আবেদনকারীকে আবেদনের পূর্বে প্রোগ্রামের শতকরা ৭০ ভাগ কোর্স সফলভাবে সমাপ্ত করেছেন মর্মে স্কুলকে নিশ্চিত করতে হবে।

ক্রেডিট ও কোর্স সংখ্যা

CLP প্রোগ্রামের মোট ক্রেডিট হলো ১৬। প্রতি ক্রেডিট ১৫-২০টি পাঠ নিয়ে গঠিত এবং প্রতি পাঠ ৪৫ মিনিট থেকে ০১ ঘন্টার একটি লেকচারের সমতুল্য। সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য মোট ০৭টি কোর্স সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হতে হবে ।

প্রগ্রামের কোর্স সমুহ:

বিজ্ঞপ্তির নাম বাউবিতে সার্টিফিকেট ইন লাইভস্টক এন্ড পোল্ট্রি প্রোগ্রামে ভর্তি ২০২৩
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উন্মুক্ত বিশবিদ্যলয়ের অধীনে
মোট আসন সংখ্যা ৫০ টি
আবেদনের মাধ্যম অনলাইন
আবেদনের যোগ্যতা এসএসসি বা সমমান পাশ
আবেদন শুরু ১৫ নভেম্বর ২০২৩
আবেদনের শেষ তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৩
আবেদন সহ মোট ভর্তি ফি ৩৭৪০ টাকা
আবেদনের লিংক http://osapsnew.bou.ac.bd
প্রোগ্রাম মেয়াদ জানুয়ারি – জুন ২০২৩
টার্ম ২৩১
বাউবি ওয়েবসাইট bou.ac.bd

 

মৃত্তিকা পার্শচিত্র

মৃত্তিকা পার্শচিত্র নিয়ে আজকের আলোজনা। আমরা জানি, পঙ্গুলিকরণ, ল্যাটেরাইজিকরণ ও চুনীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। পুকুর খনন, খাল খনন কিংবা নির্মাণ কাজের জন্য ভূমি খনন আপনারা নিশ্চয় দেখে থাকবেন। এসব খন কাজের সময় লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, ভূপৃষ্ঠে উপর থেকে যতই গভীরে যাওয়া যায় মাটির বর্ণ ততই পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ উপরের স্তরের মাটির বর্ণ নিচের স্তরের মতো নয়। গভীরতার সাথে সাথে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন বর্ণের মাটি দেখা যায়। সূতরাং মাটিকে লম্বচ্ছেদ করলে উপর থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে নানা বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ সম্পন্ন বিভিন্ন গভীরতা বিশিষ্ট অনেকগুলো স্তর দেখা যায়। এ স্তরগুলোকে একত্রে মৃত্তিকা পার্শ্বচিত্র (Soil Profile) বলে।

 

 

মৃত্তিকা পার্শচিত্র

একটি মৃত্তিকা পার্শ্বচিত্রে সাধরণতঃ ২-৩ টি স্তর দেখা যায়। এরা ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে একটির পর একটি বিন্যস্ত থাকে। স্তরগুলো একটি হতে অপরটি এক বা একাধিক ধর্ম যেমনঃ বুনট, সংযুক্তি, বৰ্ণ, স্তরের পুরুত্ব ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে পৃথকীকৃত। বুনট হলো কোন মৃত্তিকায় অবস্থিত বালি, পলি ও কর্দম কণার আপেক্ষিক অনুপাত। আর মৃত্তিকার দলা গঠনের ক্ষমতাকে সংযুক্তি বলে। মৃত্তিকার বুনট ও সংযুক্তি নিয়ে পরবর্তী ইউনিটে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

মৃত্তিকার পার্শ্বচিত্রে বিভিন্ন স্তরের বুনট, গভীরতা, বর্ণ ও রাসায়নিক প্রকৃতি প্রভৃতি মৃত্তিকার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যাবলীর নিয়ন্ত্রণ করে। এসব বৈশিষ্ট্যাবলীর ওপর ভিত্তি করে কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মৃত্তিকার গুরুত্ব নির্ধারিত হয়। মৃত্তিকার পার্শ্বচিত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে মৃত্তিকা সম্পদের সুষ্টু ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

 

 

হরাইজন কী (What is Horizon):

মৃত্তিকাকে লম্বচ্ছেদ করলে নানা বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ সম্পন্ন এবং বিভিন্ন গভীরতাবিশিষ্ট কতগুলো স্তর দেখা যায় যারা ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে একটির পর একটি বিন্যস্ত থাকে, এ সকল স্তরের প্রত্যেকটিকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে হরাইজন (Horizon) বলে। নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে হরইজনগুলো একটি অন্যটি থেকে পৃথক থাকে।

ক) স্তরের বুনট

খ) সংযুক্তি

গ) বর্ণ

ঘ) স্তরের পুরুত্ব

একটি আদর্শ মৃত্তিকা প্রোফাইলের বিভিন্ন স্তরের বর্ণনা :

আলোচনা ও বর্ণনার সুবিধার্থে মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন স্তরগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ O, A, B ও C স্তর। নিম্নে এদের বর্ণনা করা হলো :

(১) o স্তর বা জৈব স্তর :

এটি খনিজ স্তরের উপরের স্তর। কোন কোন প্রোফাইলে এ স্তর দেখা যায়, আবার কোন কোন প্রোফাইলে দেখা যায় না। উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহের অবশেষ জমা হয়ে স্তর সৃষ্টি হয়। সাধারণতঃ বন অঞ্চলে এই স্তর দেখা যায়। কিন্তু তৃণ ভূমিতে তা দেখা যায় না। এ স্তরের আবার দু’টি উপস্তর আছে। উপস্তর গুলো নিম্নরূপ ঃ

(ক) 0, উপস্তর : একে Aoo স্তরও বলা হয়। এ জৈব স্তরে উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষের প্রকৃত গঠন খালি চোখে সহজেই শনাক্ত করা যায়।

(খ) O2 উপস্তর : একে Ao স্তরও বলা হয়। O স্তরের সংলগ্ন এবং কিছুটা নিচে অবস্থিত। এখানে প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহবাশেষের প্রকৃত গঠন ততটা আলাদাভাবে শনাক্ত করা যায় না।

(২) A স্তর :

একে ‘এলুভিয়েল স্তর’ ও (Eluvial layer) বলা হয়। একটি খনিজ স্তর যাহা ভূপৃষ্ঠে অথবা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি। অবস্থান করে। এ স্তর হতে বিভিন্ন প্রকার খনিজের চুয়ানী বা এলুভিয়েশন’ ঘটে। খনিজ স্তরের উপরের দিক হতে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে স্তরকে যথাক্রমে A1, A2, A3 ইত্যাদি উপস্তরএ বিভক্ত করা যায়। যেমনঃ

(ক) A উপস্তর :

খনিজ স্তরের সবচেয়ে উপরের স্তর। ইহা প্রচুর হিউমাস মিশ্রিত জৈব পদার্থ ধারণ করে। ফলে এই উপস্তর নিচের স্তরগুলো অপেক্ষা গাঢ় বর্ণ ধারণ করে।

 

 

(খ) A, উপস্তর ঃ

এই উপস্তর হতে কদম, লৌহ,, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ইত্যাদি সবচেয়ে বেশি। পরিমাণে চুয়ানী বা এলুভিয়েশন ঘটে। A2 উপস্তর সাধারণত Ar অপেক্ষা হালকা বর্ণের হয়।

(গ) A3 উপস্তর :

এটি A ও B স্তরের সংযোগকারী একটি স্তর। তথাপি ইহা B স্তর অপেক্ষা A ও A2 উপস্তরের ধর্মাবলী বেশি প্রদর্শন করে। কোন কোন প্রোফাইলে এই উপস্তরটি অনুপস্থিত থাকে।

 

(৩) B স্তর :

একে ইলুভিয়েল স্তর (Illuvial layer) ও বলা হয়। স্তরের Fe, A1 এর যৌগ কাদা ও হিউমাসের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। যৌগগুলো সাধারণত A স্তর হতে চুয়ানীর মাধ্যমে আসে। অনেক সময় শুকনো ও উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে CaCO3, CaSO ও অন্যান্য লবণ এ স্তরের নিচের দিকে জমতে দেখা যায়। স্তর আবার B1, B2 ও B3 উপস্তরে বিভক্ত।

(ক) B, উপস্তর :

এটি A ও B স্তরের সংযোগকারী স্তর এবং ধর্মাবলী A স্তরের এর তুলনায় B স্তরের সাথে বেশি সাদৃশ্য বহন করে। কোন কোন প্রোফাইলে এই স্তরটি অনুপস্থিত থাকে।

(খ) B2 উপস্তর :

A2 ও তার নিচের স্তর হতে নেমে আসা কর্দম কণা, লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের অধিকাংশই এ স্তরে জমা হয়। জৈব বস্তু ধারণ ক্ষমতা A2 স্তরের তুলনায় অধিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদের সংযুক্তি ব্লকী অথবা প্রিজমেটিক অথবা উভয়ই হয়ে থাকে।

(গ) B3 উপ স্তর : এ স্তর B এবং C স্তরের মাঝামাঝি। এর ধর্ম C স্তর অপেক্ষা অনেকটা B ও B2 স্তরের কাছাকাছি।

 

(8) C স্তর :

এটি বিকৃত শিলা দ্বারা গঠিত সোলামের (Solum) [ A ও B স্তর] নিচের স্তর। এটি উৎস বস্তুর অনুরূপ হতে অথবা নাও হতে পারে। এ স্তরে অণুজৈবিক কার্যাবলী অনুপস্থিত এবং আয়তনী ঘনত্ব বেশি। ইহার উপরের স্তর শিলাক্ষয় প্রক্রিয়ায় কালক্রমে সোলামের (প্রকৃত মাটি) অংশ তৈরি করে।

(৫) D স্তর / R স্তর :

একে ভূগর্ভস্থ শিলা স্তরও বলা হয়। এই স্তরের উৎস বস্তুর (Parent material) যেমন : বেলে পাথর, চুনা পাথর, গ্র্যানাইট প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত। সব মৃত্তিকা প্রোফাইলে সব স্তর নাও থাকতে পারে। কারণ ভূমিক্ষয়ের দরুন উপর হতে দু’একটি স্তর বা উপস্তর ক্ষয় হয়ে যেতে পারে।

 

সোলাম কী? (What is Solum):

উৎস দ্রব্যের (Parent material) উপরে অবস্থিত মৃত্তিকা প্রোফাইলের উপরের অংশ যেখানে মৃত্তিকা গঠনের প্রক্রিয়া গুলো সংঘটিত হয় তাকে সোলাম (Solum) বলে। উন্নত মাটিতে এটি A ও B স্তর নিয়ে গঠিত। একে প্রকৃত মাটিও বলা হয়। শিলাক্ষয় প্রক্রিয়ায় উৎস বস্তুর বা C স্তরের উপরের অংশ কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে এ সোলামের অংশ তৈরি হয়।

 

 

রিগোলিথ কী (What is regolith):

মৃত্তিকা পার্শ্বচিত্রে A, B ও C স্তর মিলে যে গঠন প্রাপ্ত হয় তাকে রিগোলিথ বলে। C স্তর সামান্য বিকৃত শিলা দ্বারা গঠিত বলে রিগোলিথে বিকৃত শিলা দেখা যায়। সেজন্য একে উৎসদ্রব্য বা আদি উপাদানের স্তরও বলা হয়৷
সোলাম ও রিগোলিথের মধ্যে পার্থক্য (Differences between solum and regolith) সোলাম ও রিগোলিথের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যগুলো পরিলক্ষিত হয়।

সূচি:

  • মৃত্তিকা পার্শচিত্র ,পাঠ ১.৬, ইউনিট ১ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

 

শিলা ও খনিজ

শিলা ও খনিজ নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি উন্মক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান ১২০৪ বই এর ১ নং ইউনিটের ১.৩ নম্বর পাঠ।

শিলা ও খনিজ

 

সিলিকন (খনিজ)

 

শিলা কী (What is Rocks) ?:

সিলেটের জাফলং বা শ্রীপুর থেকে আগত পাথর ভর্তি ট্রাক কিংবা আমাদের সড়ক ও রেলপথ তৈরির পাথর সবাই দেখে থাকবেন। বনভোজন কিংবা ভ্রমণের জন্য যারা জাফলং কিংবা শ্রীপুরে গিয়েছেন তারা পাহাড়ী ঝরণায় পাথরের আগমন দৃশ্য নিশ্চয় অবলোকন করেছেন। ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে, পাহাড়ী ঝরণা ধারায় নেমে আসা এ সব পাথরকে শিলা বলে। তাপ, চাপ ও রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এরা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে উঁচু পাহাড়ী এলাকা থেকে পানির স্রোতে গড়িয়ে নিচের দিকে নেমে আসে।

গড়িয়ে গড়িয়ে নিচের দিকে আসার ফলে ঘর্ষণের কারণে এরা মসৃন ও সুন্দর আকার প্রাপ্ত হয়। সুতরাং ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে, শিলা হলো দুই বা ততোধিক খনিজের সংমিশ্রণ বা দলা যা ভূত্বকের অপরিহার্য অংশসমূহ গঠন করেছে এবং যাদের ধর্ম ধারণকৃত খনিজের ভিত্তিতে পরিবর্তনশীল। যেমনঃ গ্র্যানাইট, চুনাপাথর ইত্যাদি। (According to the Geologists rock is a mixture or aggregate part of the earth’s crust, the properties of which will vary on the basis of minerals they contain. Such as granite, limestone etc.)।

 

শিলা

 

শিলার প্রকারভেদ (Classification of rocks):

গঠন ও উৎস অনুসারে শিলাকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় :

  • আগ্নেয় শিলা ( Igneous rocks)
  • পাললিক শিলা (Sedimentary rocks)
  • রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic rocks)

 

আগ্নেয় শিলা (Igneous rocks):

পৃথিবীর আদিম অবস্থার উত্তপ্ত ও গলিত লাভা কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সময় উত্থিত উত্তপ্ত গলিত লাভা ঠান্ডা হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে।

 

পাললিক শিলা (Sedimentary Rock)

 

আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য:
  • উত্তপ্ত গলিত অবস্থা হতে ঠান্ডা হয়ে এ জাতীয় শিলার উৎপত্তি হয় বলে আগ্নেয় শিলায় কোন স্তর থাকে না।
  • উত্তপ্ত গলিত পদার্থের মধ্যে জীব-জন্তুর অস্তিত্ব অসম্ভব। বৃক্ষলতাও তাতে জন্মে না। এ কারণে আগ্নেয়শিলার ভিতর জীবাশা দেখতে পাওয়া যায় না।
  • গলিত অবস্থা হতে তাপ বিকিরণ করে ক্ষেত্র বিশেষে এ জাতীয় শিলা কেলাসিত হয় বা নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে।
  • উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠে ঠান্ডা হলে তাকে বহিঃজ আগ্নেয় শিলা (Extrusive igneous rocks) বলে। অপর পক্ষে উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠে আসতে না পেরে পৃথিবীর অভ্যন্তরেই ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে। এ রূপে গঠিত আগ্নেয় শিলাকে অন্তঃজ (Intrusive) আগ্নেয় শিলা বলে।

ব্যাসল্ট, পিউমিকস্টোন, লাপিলি ইত্যাদি হলো বহিঃজ আগ্নেয় শিলা। অন্যদিকে গ্র্যানাইট, গ্যারো, সায়েনাইট, পরিফাইরি ইত্যাদি অন্তঃজ আগ্নেয় শিলা।

 

পাললিক শিলা (Sedimentary rocks):

তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, সাগরতরঙ্গ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে আগ্নেয় শিলা ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ছোট ছোট নুড়ি, কাকর ও বালিতে পরিণত হয়। অতঃপর অংশসমূহ উল্লিখিত প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা বাহিত হয়ে সমুদ্র, হ্রদ বা উপমহাদেশের তলদেশে পলল বা তলানীরূপে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। পরে তা বায়ুর চাপে জমে শক্ত ও দৃঢ় আকার প্রাপ্ত হয়। এ ধরনের শিলাকে পাললিক শিলা বলে। পলল বা তলানী হতে এ শিলা গঠিত হয় বলে একে পাললিক শিলা বলে। আবার স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে এ শিলাকে স্তরীভূত (Stratified) শিলা বলে। ইহা অকেলাসিত ।

 

পাললিক শিলা (Sedimentary Rock)

 

পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য:
  • এ শিলা মূল শিলার (Older rocks) ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ হতে সৃষ্টি হয়।
  • পাললিক শিলা স্তরে স্তরে সৃষ্টি হয় বলে এর মধ্যে স্তর থাকে।
  • এ শিলার মধ্যে জীবাশা দেখা যায়। ইহা উত্তপ্ত অবস্থা হতে সৃষ্ট নয় বলে অকেলাসিত ।
  • ইহা গৌণ বা মাধ্যমিক (Secondary) শিলা নামে পরিচিত।
  • ইহা ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ায় উন্নত (Developed ) হতে পারে। বালিপাথর (Sand stone), শেল (Shale), ডলোমাইট (Dolomite), সিল্ট স্টোন (Silt stone), চুনাপাথর (Lime. stone) ইত্যাদি পাললিক শিলার উদাহরণ।

 

রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic rocks):

প্রচন্ড তাপ ও চাপের যৌথ প্রভাবে মূল আগ্নেয় ও পাললিক শিলা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে অধিকতর কঠিন ও স্ফটিকাকার যে নতুন শিলার সৃষ্টি হয় তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। এ ভাবে চুনাপাথর (পাললিক শিলা) রূপান্তরিত হয়ে মার্বেলে, বেলেপাথর (পাললিক শিলা) পরিবর্তিত হয়ে কোয়ার্টজাইট, কাদা পরিবর্তিত হয়ে স্লেটে (Slate), গ্র্যানাইট (আগ্নেয় শিলা) পরিবর্তিত হয়ে নীসে ( Gneisses) পরিণত হয়।

আগ্নেয়শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় রূপান্তরিত হলে তাকে আগ্নেয় রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন : গ্র্যানাইট নীসে ( Gneisses ), পরিণত হওয়া। অনুরূপভাবে পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হলে তাকে পাললিক রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমনঃ বেলে পাথর পরিবর্তিত হয়ে কোয়ার্টজাইট পরিণত হওয়া।

 

কোয়ার্টজাইট, এক ধরনের রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)

 

রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য:

আগ্নেয় ও পাললিক শিলা উভয় শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ ইহা আগ্নেয় ও পাললিক শিলার জাতক। প্রচন্ড তাপ ও চাপের যৌথ প্রভাবে এ নতুন প্রকৃতির শিলার সৃষ্টি হয়। ইহা কেলাসিত হয় বলে ইহাকে পাললিক শিলা থেকে পৃথক করা যায়। এ জাতীয় শিলার খনিজ উপাদানগুলি সমান্তরাল থাকে বলে আগ্নেয় শিলা থেকে সহজে পৃথক করা যায়।

 

খনিজ (Minerals) কী?

প্রাকৃতিক অজৈব প্রক্রিয়ায় তৈরি সমসত্ব স্ফটিকাকার বস্তু যার সুনির্দিষ্ট আণবিক গঠন ও রাসায়নিক সংযুক্তি রয়েছে তাকে খনিজ বলে। দুই বা ততোধিক খনিজ একত্রিত হয়ে শিলা গঠন করে। সুতরাং খনিজ হলো শিলা গঠনের উপাদান।

 

খনিজ প্ৰধানত দু’প্রকার :

প্রাইমারী খনিজ (Primary minerals) : উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা শীতল ও কঠিন হওয়ার ফলে সৃষ্ট খনিজকে প্রাইমারী খনিজ বলে। যেমনঃ কোয়ার্টজ (SiO2) অর্থোক্লেজ ( KAISiO3) মাস্কোভাইট [KAl Si O 10 (OH)2], বায়োটাইট ( KAI (Mg-Fe), Si, O 10 (OH)2], ইত্যাদি প্রাইমারী খনিজ।

সেকেন্ডারী খনিজ (Secondary minerals) : তাপ, চাপ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাথমিক খনিজ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে খনিজ সৃষ্টি হয় তাকে সেকেন্ডারী খনিজ বলে। যেমনঃ ক্যালসাইট (CaCO3), জিপসাম (CaSO4, 2H2O), লিমোনাইট, (Fe2O3, 3H2O), ডলোমাইট [(CaMg (CO3)2] শিলা ও খনিজের মধ্যে পার্থক্য ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে শিলা ও খনিজ পদার্থে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। নিচে শিলা ও খনিজের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য তুলে ধরা হলো।

 

সালফার (খনিজ)

 

সূত্র:

  • শিলা ও খনিজ, পাঠ ১.৩, ইউনিট ১ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

 

 

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান নিয়ে আজকের আলোচনা। কঠিন শিলা থেকে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। শিলা থেকে প্রথমে খনিজের সৃষ্টি হয়। শিলা ও খনিজ থেকে মাটি সৃষ্টি হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ সময় ব্যাপিয়া শিলা ও খনিজের উপর বিভিন্ন ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক পরিবর্তন সাধিত হয়ে মৃত্তিকায় পরিণত হয়। বিশেষ করে তাপমাত্রা, বারিপাত (Precipitation), বিভিন্ন রকমের উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর চলমান ক্রিয়ায় শিলা ও খনিজ নির্দিষ্ট সময় পর মৃত্তিকায় পরিণত হয়।

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান

সুতরাং যেসব উপাদান নতুন মৃত্তিকা গঠনের জন্য দায়ী তাদেরকে মৃত্তিকা গঠনের উপাদান বলে। ঐসব উপাদানের যৌথ ক্রিয়ার ফলে মৃত্তিকা প্রোফাইল গঠিত হয়। ভূত্বকের কোন স্থানের মৃত্তিকা প্রধানত পাঁচটি উপাদানের যুগপৎ ক্রিয়ার ফলে গঠিত হয়। এ পাঁচটি উপাদান হলো ঃ

১। মৃত্তিকার উৎস বস্তু (Parent material)

২। জলবায়ু (Climate )

৩। জীবসত্ত্বা (Biosphere)

৪। ভূমির বন্ধুরতা (Topography)

৫। সময় (Time)

জেনীর সমীকরণ (Jenny’s equation):

মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানগুলোর প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন উপায় ও তীব্রতায় সংঘটিত হয়। সবগুলো উপাদানই আবশ্যকভাবে পরস্পর নির্ভরশীল। তবে নির্দিষ্টস্থানে বিশেষ কোন উপাদান মৃত্তিকা গঠনের কাজে অধিক সক্রিয় হতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য উপাদানগুলো অবশ্যই সক্রিয় থাকবে তবে তা তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয় হতে পারে। মৃত্তিকা গঠনকালে ভিন্ন ভিন্ন উপাদানের সক্রিয়তার তারতম্যের উপর মৃত্তিকার ধর্ম নির্ভরশীল। বিজ্ঞানী Jenny মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানসমূহ এবং মৃত্তিকার ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক দেখিয়ে একটি সাধারণ সমীকরণ প্রকাশ করেছেন। ইহা জেনীর সমীকরণ নামে পরিচিত। সমীকরণটি নিম্নরূপ ঃ

S=f (p, cl, b, r, t…………)।

এখানে ঃ
S =মৃত্তিকার ধর্ম (Any soil property)
f= ক্রিয়া (Function of )
P= উৎস বস্তু (Parent material)
cl =জলবায়ু (Climate)
b = জীবসত্ত্বা (Biosphere)
r= বন্ধুরতা (Relief)
t= সময় (Time)

 

মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানসমূহের শ্রেণিবিভাগ:

মৃত্তিকা বিজ্ঞানী Joffe মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :

  • সক্রিয় উপাদান (Active factor)
  • অক্রিয় উপাদান (Passive factor)

উৎস বস্তু শিলা (Parent material) এবং ভূনিম্নস্থ শিলার (Bed rock) উপর কাজ করে মৃত্তিকা গঠন করিবার জন্য যে সমস্ত উপাদান শক্তি সরবরাহ করে থাকে তাদেরকে সক্রিয় উপাদান (Active factor) বলে। মৃত্তিকা গঠনের পাঁচটি উপাদানের মধ্যে জলবায়ু (Climate) ও জীবসত্ত্বা (Biosphere) হলো সক্রিয় উপাদান। অপরপক্ষে, উৎস বস্তু, ভূমির বন্ধুরতা (Topography/relief) এবং সময় এরা মৃত্তিকা গঠনে সরাসরি কোন শক্তি সরবরাহ করে না বলে তাদেরকে অক্রিয় উপাদান বলে।

মৃত্তিকা গঠনে উৎস দ্রব্য (Parent material):

মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অঘনীভূত ও রাসায়নিকভাবে কম বেশি ক্ষয় প্রাপ্ত যে সকল খনিজ ও শিলা দ্রব্য থেকে মৃত্তিকা প্রোফাইল উৎপন্ন হয় তাকে মাটির উৎস দ্রব্য বলে।

মৃত্তিকা বিজ্ঞানী Jenny’র মতে, S = f(p) { cl, b, c, ….. }

এ সমীকরণে মাটির গুণের সহিত মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদান উৎস দ্রব্য (Parent material) বা P এর কাজের ফাংশন বুঝানো হয়েছে যখন cl. b. . . ……. স্থির থাকে। ভূতাত্বিক প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্টের বিভিন্ন উৎস দ্রব্য হতে মৃত্তিকার উৎপত্তি হয়। উৎস দ্রব্যের প্রকৃতির ওপর উদ্ভূত মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ মাটির বুনট উৎস দ্রব্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যা মৃত্তিকায় পানির নিম্নমূখী প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলশ্রুতিতে সূক্ষ্ম মৃত্তিকা কলা ও উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদানের সঞ্চায়ন (illuviation) এবং চুয়ীসরন (eluviation) প্রভাবিত হয়। শিলাক্ষয় (Weathering) প্রক্রিয়া ও এর গতি প্রকৃতি উৎস বস্তুর (Parent material) রাসায়নিক ও খনিজ উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে, যা উৎপন্ন উদ্ভিদরাজির প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।

উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, লাইম স্টোন সমৃদ্ধ উৎস বস্তু হতে সৃষ্ট মৃত্তিকার প্রোফাইল সৃষ্টি হতে দীর্ঘ সময় লাগে, যা আর্দ্র আবহাওয়া দ্বারা ত্বরান্বিত হয়। শক্ত বিশুদ্ধ চুনাপাথর হতে গভীর বালি প্রধান মাটি তৈরি হয়। অপরদিকে মিশ্রিত নরম চুনাপাথর হতে গভীর ও সূক্ষ্ম বুনট সম্পন্ন মাটি তৈরি হয়। উষ্ণ এশিয়ার অধিকাংশ মাটি গ্রানাইট, নীস, বেসন্ট, বালিপাথর, চুনাপাথর, শেইল ও পলিজ অধঃক্ষেপ হতে উৎপন্ন হয়েছে।

ক্লে কর্দমের গুণগত বৈশিষ্ট্যাবলী ও মৃত্তিকা পার্শ্বচিত্র সমভাবে উৎস বস্তু দ্বারা প্রভাবিত হয়। আগ্নেয় শিলা, স্থুল কোয়ার্টজ নুড়ি, বালিপাথর ইত্যাদি ধীর গতিতে ক্ষয় প্রাপ্ত হয় এবং সাধারণ অনুর্বর মাটি গঠন করে। ইহাতে কেওলিনাইট জাতীয় কর্দম কণা উপস্থিত থাকে এবং ক্ষারীয় দ্রবা কম থাকে। অধিকাংশ ক্ষারীয় আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে সূক্ষ্ণ বুনট সম্পন্ন এবং ক্ষারক সম্পন্ন উর্বর মাটি গঠন করে। এতে মন্টমরিলোনাইট জাতীয় কর্দম কণা বেশি থাকে।

জলবায়ু (Climate ):

Jenny’ র মতে, S = f (cl) {p, b, r, ……) এ সমীকরণে মাটির গুণের সাথে মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদান জলবায়ু বা এর কাজের ফাংশানকে বুঝানো হয়েছে, যখন অন্যান্য উপাদান অপরিবর্তিত থাকে। জলবায়ু হলো মৃত্তিকা গঠনের প্রত্যক্ষ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি মৃত্তিকা প্রোফাইল শত শত বছর ধরে মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানসমূহের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্রিয়ার ফল। জলবায়ু সাধারণত বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রার মাধ্যমে মৃত্তিকা গঠনে প্রভাব বিস্তার করে।

বৃষ্টিপাত:

বৃষ্টিপাত নানাভাবে মাটি গঠনে অংশ গ্রহণ করে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি চুয়ানোর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে ক্ষারীয় পদার্থ ক্রমেই চুইয়ে নিচে চলে যায়। তখন মাটি অয় হয় এবং সেখানে Fe এবং Al এর প্রাধান্য দেখা যায়। অল্প বৃষ্টি হলে উপরের স্তর হতে CaCO3 ও MgCO3 নিচে নেমে মধ্য স্তরে জমা হয়। ফলে চুন সমৃদ্ধ একটা হরাইজন (Horizon) এর সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বৃষ্টিপাত কম হলে বাষ্পীভবন বেশি হয় ফলে নিচের ক্ষারীয় উপাদান বাষ্পীভবনজনিত টানে পানির সাথে উপরে উঠে। আর পানি বাষ্প হয়ে উড়ে গেলে সে পদার্থগুলো মাটির উপরের স্তরে জমা হয় এবং তখন মাটি ক্ষারীয় বিক্রিয়া প্রদর্শন করে।

বৃষ্টিপাত উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে বাড়ায়, ক্ষুদ্র জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং তাদের কর্মতৎপরতাকে উৎসাহিত করে। ফলে মাটিতে বেশি পরিমাণে জৈবপদার্থের বিয়োজন হয়ে মৃত্তিকা গঠনের কাজ তরান্বিত করে।
বৃষ্টিপাত ঢালু জমিতে প্রাকৃতিক ভূমিকম্পের মাধ্যমে মাটির প্রোফাইলকে আক্রান্ত করে, ফলে মৃত্তিকা ধাপ (Steep) এ পাতলা মাটির স্তর এবং পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্তিকা পদার্থের পুরু স্তর জমা হয়।
বৃষ্টির পরিশ্রুত পানি মৃত্তিকার উৎস বস্তু গঠনকারী পদার্থগুলোকে দ্রবীভূত করে এবং অন্যত্র নিয়ে জমা করে মাটি গঠনে সহায়তা করে। বাংলাদেশে নদীজনিত ভূমিক্ষয় ও পানি জমাটের মাধ্যমে সামুদ্রিক উপকূল অঞ্চলে নতুন মৃত্তিকা গঠিত হয়।

তাপমাত্রা:

মৃত্তিকা গঠনের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি ১০° সে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মৃত্তিকার রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বিগুণ হয়। মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা হচ্ছে মৃত্তিকা গঠনের বিরোধিতাকারী একটি শক্তি। নিচু তাপমাত্রার কারণে সেখানে কোন পরিস্কার রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না। শুষ্ক অঞ্চলেও পরিস্রবনের পরিমাণ কম। যার কারণ হচ্ছে অধিক বাস্পীভবন। উঁচু পর্বত অঞ্চলে শীতকাল দীর্ঘ হওয়ায় মৃত্তিকা প্রোফাইল এর ভিতর দিয়ে পরিস্রবনের পরিমাণ কম হয়। ফলে হ্রদ জলভূমি পাট গঠিত হয়।

নিচু তাপমাত্রায় অণুজীবের কার্যকলাপ সীমিত হওয়ায় জৈব পদার্থ সঞ্চিত হতে থাকে। ফলে এসব অঞ্চলে জৈব পদার্থের স্তর বেশ বিস্তৃত হয় এবং পিটের নিচে কোন মৃত্তিকা স্তর গঠিত হয় না। অপরপক্ষে, আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডল ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডল অঞ্চলে উদ্ভিদ প্রচুর পরিমাণে জন্মে এবং অবশেষে বিগলিত হওয়ার ফলে Ao স্তরে জৈবপদার্থ খুব কম হয়।

যে সব এলাকায় উত্তাপ ও আর্দ্রতা বেশি সেখানে মাটিতে কর্দম কণা বেশি দেখা যায় কারণ অবক্ষয় প্রক্রিয়া বেশি মাত্রায় হয়। কিন্তু হীম ও শুষ্ক বা হীম ও আর্দ্র এলাকায় ইহা কম হয়। তাপমাত্রা বেশি ও বৃষ্টিপাত কম হলে মৃত্তিকার ধনাত্মক আয়ন বেশি ধরে রাখতে পারে এবং চুয়ানী পানির পরিমাণ কম হয়।

জীব সত্ত্বা (Biosphere):

Jenny’ র মতে, S=f (b) (cl, p, r, t…..} । এই সমীকরণে b দ্বারা জীব সত্ত্বা (Biosphere) বুঝানো হয়েছে যা সবুজ আণুবীক্ষনিক বা অপেক্ষাকৃত বড় জীবসমূহ এবং মানুষের সমন্বয়ে গঠিত। এটি মৃত্তিকা গঠন পদ্ধতিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। উদ্ভিদ কী প্রকৃতির এবং কী পরিমাণ জৈব পদার্থ প্রদান করিবে তাহার ওপর মৃত্তিকার গঠন নির্ভরশীল। মৃত্তিকার রং, বর্ণ, সংযুক্তি ইত্যাদি ভৌত অবস্থা উদ্ভিদ জাতীয় জৈব পদার্থ দ্বারা পরিবর্তিত হয়। বিশেষ করে উপরের স্তরের ঘাসী জমির মাটিতে জৈব পদার্থ (Organic matter) তুলনামূলকভাবে বনাঞ্চলের মাটি হতে বেশি থাকে।

উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি গাঢ় বর্ণের যার পানি ও ক্যাটায়ন ধারণ ক্ষমতা বনাঞ্চলের মাটি হতে বেশি। মৃত্তিকা গঠনও ঘাসী উদ্ভিদরাজি দ্বারা প্রভাবিত হয়। এছাড়া মৃত্তিকার অম্লত্ব ও ক্ষারকত্বও উদ্ভিদরাজি দ্বারা প্রভাবিত হয় পার্বত্য এলাকার মাটির চাইতে নিম্নভূমির মাটিতে গাছের বৃদ্ধি এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি হয়।

ভূমির বন্ধুরতা (Topography):

Jenny’র মতে, S = f (r) { cl, b, p. …… | এ সমীকরণে মাটির গুণের সাথে মৃত্তিকার বন্ধুরতার বা এর কাজের ফাংশানকে বুঝানো হয়েছে যখন অন্যান্য উপাদান অপরিবর্তিত থাকে। কোন স্থানের ভূমির বন্ধুরতা বলতে সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে উক্ত স্থানের উচ্চতাকে বুঝায়। মৃত্তিকা গঠনে ভূমির বন্ধুরতা সাধারণত নিম্নরূপ প্রভাব বিস্তার করে থাকে :
ভুমির বন্ধুরতা জলবায়ুর প্রভাবকে ত্বরান্বিত করে বা বিলম্বিত করে। অসমতল জমি অপেক্ষা সমতল জমি থেকে অতিরিক্ত পানি কণা বেশি অপসারিত হয়। কোন স্থানে সারা বছর বা বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমা থাকলে উহাতে জলবায়ূর প্রভাব ততটা কার্যকর হয় না।

পাড়ের তীক্ষ্ণঢালে সহজে ভূমিক্ষয় হয় এবং পানি মাটির প্রোফাইলে খুবই কম পরিমাণে প্রবেশ করে। এজন্য কম দৈর্ঘ্যের প্রোফাইল গঠিত হয়। ভূমির বন্ধুরতা নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও মাটির পানির স্তরের উচ্চতা নির্ধারণ করে। বন্ধুরতা বা ঢাল মৃদু হলে অধিক পরিমাণ পানি মৃত্তিকা প্রোফাইলে প্রবেশ করে ফলে অধিক দৈর্ঘ্যের প্রোফাইল প্রতিষ্ঠিত হয়।

কম ঢালবিশিষ্ট প্রোফাইলটিতে অধিক জৈব পদার্থ থাকে। ভূ-পৃষ্টের অসমতলতা সমুদ্রপৃষ্ট হতে উচ্চতা বৃদ্ধি করে জলবায়ু অধিকতর শীতল হয়। মাঝে মাঝে অধিক আর্দ্রতাসম্পন্ন হয় যা মৃত্তিকা গঠনে প্রভাব ফেলে। বন্ধুরতা ফসলী জমির ব্যবহার বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে জমির ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলে যা মাটি গঠনের সহায়ক।

সময় (Time):

Jenny’র মতে S = f (t) { cl, b, p, r} | এ সমীকরণে মাটির গুণের সাথে মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদান সময় বা এর কাজের ফাংশানকে বুঝানো হয়েছে, যখন অন্যান্য উপাদান যেমন : cl,b, pr… স্থির থাকে। শিলা হতে মাটি সৃষ্টি হওয়ার জন্য একটা ন্যূনতম সময়ের দরকার। শিলা ও খনিজ পদার্থের ক্ষয় হতে কী পরিমাণ সময় ব্যয়িত হয়েছে তার ওপর মাটির প্রকৃতি নির্ভর করে।

উৎস বস্তু সৃষ্টির পর সময়ের ব্যবধানে সৃষ্ট মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলীর পরিবর্তন ঘটে। যদিও সময়ের এ প্রয়োজনীয়তা জলবায়ু, Parent material এর প্রকার, প্রাণী ও উদ্ভিদের কার্যাবলী ও নিষ্কাশন (Drainage) এর উপর ঘনিষ্টভাবে নির্ভরশীল। সাধারণত একটি পরিণত বা সম্পূর্ণ মাটি (Mature soil) তৈরি হতে দুইশত থেকে কয়েক হাজার বছর লাগতে পারে।

নিম্নলিখিত কারণে মাটি তৈরির কাজ বিলম্বিত হয়।

(ক) কম বৃষ্টিপাত

(খ) কম আপেক্ষিক আর্দ্রতা

(গ) অধিক চুন সম্পন্ন উৎস বস্তু

(ঘ) অধিক বালি

(ঙ) অধিক কর্দম কণা

(চ) ক্ষয়রোধী উৎস বস্তু

(ছ) তীব্র ঢাল

(জ) উচ্চ পানি স্তর

(ঝ) সতত মৃত্তিকা দ্রব্যের অপসারণ

(ঞ) তীব্র বায়ু ও পানি ভূমি ক্ষয়

(ট) অধিক গর্ত খননকারী প্রাণী, ইত্যাদি

 

সূত্র:

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান ,পাঠ ১.২, ইউনিট ১ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

 

বীজমান নিয়ন্ত্রণ

কৃষিতে উচ্চ ফলন ও টেকসই উৎপাদনের মূল চাবিকাঠি হলো মানসম্মত বীজ। অথচ এই বীজের গুণগত মান নিশ্চিত না হলে কৃষকের পরিশ্রম ও উৎপাদনশীলতার উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাই বীজের গুণমান নিয়ন্ত্রণ বা বীজমান নিয়ন্ত্রণ কৃষি প্রযুক্তির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য অংশ।

আজকের আলোচনায় আমরা জানতে চেষ্টা করব—বীজমান নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝায়, কেন এটি প্রয়োজনীয়, কীভাবে এই নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা হয়, এবং বাংলাদেশে বীজমান নিয়ন্ত্রণের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো কেমন। এই পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বীজমান যাচাই, পরীক্ষণ, প্রত্যয়ন ও তত্ত্বাবধান প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ করবে, যা বাস্তব কৃষি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(বীজ ও বীজ প্রযুক্তি | ইউনিট: ৩ | পাঠ: ৩.৩)

 

বীজমান নিয়ন্ত্রণ

 

বীজমান কী?

বীজের মান বা বীজমান নির্ধারিত হয় একাধিক উপাদানের ভিত্তিতে। এর মধ্যে প্রধান হলো—বীজের বিশুদ্ধতা, অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা, স্বাস্থ্য এবং কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা।

বীজের বিশুদ্ধতা বলতে বোঝানো হয় একটি বীজের নমুনায় কতটুকু ধুলাবালি, কাঁকড়, মাটি, আগাছার বীজ, অন্যান্য ফসলের বীজ বা উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ উপস্থিত রয়েছে। এই বিশুদ্ধতার মাত্রাই অনেকাংশে বীজের সামগ্রিক গুণমানকে নির্ধারণ করে।

ইতঃপূর্বে আমরা বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

 

বীজের মান নিয়ন্ত্রণ প্রত্যয়ন

বীজমান নিশ্চিতকরণে বীজ প্রত্যয়ন কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উন্নত ও মানসম্মত বীজ উৎপাদন নিশ্চিত করতে এই কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাদেশে বীজ প্রত্যয়ন ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় ১৯৭৪ সালে শস্য বীজ প্রকল্পের আওতায়, যখন বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে, এই কার্যক্রমকে আইনগত বৈধতা দিতে প্রণয়ন করা হয় বীজ অধ্যাদেশ ১৯৭৭ এবং বীজ বিধিমালা ১৯৮০

 

বীজের মান নিয়ন্ত্রণে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো কার্যক্রম

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজনন ও ভিত্তি বীজ উৎপাদন করে। এই বীজসমূহ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বি..ডি.সি) বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও সরবরাহ করে, এবং বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি সেগুলোর প্রত্যয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে।

বীজ অধ্যাদেশ ১৯৭৭ ও বীজ বিধি ১৯৮০ অনুযায়ী, বীজের উৎপাদন, প্রত্যয়ন, বাজারজাতকরণ প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিধিমালার আওতায় বীজের বংশগত বিশুদ্ধতা, বাহ্যিক বিশুদ্ধতা, আর্দ্রতাঅঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতার নির্ধারিত মান যাচাই করা হয়।

বি.এ.ডি.সি বীজ উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ অনুসরণ করে। বীজ বপনের শুরু থেকে ফসল কাটার পর গুদামজাত করার শেষ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নিয়মিত তদারকি ও পর্যবেক্ষণ চালানো হয়।

 

মাঠপর্যায়ে বীজের মাননিয়ন্ত্রণ যাচাই

বীজ ফসলের মাঠ নিয়মমাফিক রোগিং করা হয় এবং বি.এ.ডি.সি ও বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি যৌথভাবে মাঠ পরিদর্শন করে থাকে। কেবলমাত্র নির্ধারিত মানসম্পন্ন ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে যথাযথভাবে গ্রেডিং, ক্লিনিং এবং প্রস্তুতকরণ কার্যক্রম সম্পাদিত হয়।

বিতরণ মৌসুমের আগে প্রতিটি বীজ লট বি.এ.ডি.সি এবং বীজ প্রত্যয়ন প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ পরীক্ষাগারে পৃথকভাবে পরীক্ষা করে। গুণগত মান নিশ্চিত হলে যৌথ ট্যাগযুক্ত প্যাকেট আকারে সরবরাহ করা হয়।

জাতীয় বীজ বোর্ড নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ফসলের মাঠমান ও বীজমান নির্ধারণ করে থাকে, যা দেশের সার্বিক কৃষি উৎপাদনে মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

 

 

 

বীজের মানের অবনতি:

বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের যে কোন স্তরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বীজের তেজ ও মানের অবনতি ঘটার কারণসমূহ নিম্নে বিশদভাবে আলোচনা করা হলো :

বীজ ফসল কাটার পূর্বে বীজের মানের অবনতি :

বীজ ফসল কাটার পূর্বে অর্থাৎ ফসল মাঠে থাকা অবস্থায়ই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বীজের তেজ ও মানের অবনতি ঘটতে পারে। যে সব কারণে ফসল মাঠে থাকা অবস্থায়ই বীজ মানের অবনতি ঘটে তা মোটামুটি নিম্নরূপ :

(ক) বৃদ্ধিকালে বীজের মানের অবনতি :

অতিরিক্ত শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়া থাকলে বীজ স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করতে পারে না এবং দ্রুত পরিপক্কতা লাভ করে। ফলে বীজ ছোট আকারের ও নিম্ন তেজ সম্পন্ন হয় এবং অনেক বীজ অপুষ্ট থেকে যায়।

(খ) বীজ পরিপক্কতা লাভ কালে বীজের মানের অবনতি :

অতিরিক্ত শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়া থাকলে বীজ দ্রুত শুকাতে থাকে। ফলে বীজ আবরণী ও বীজদলে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এমনকি ভ্রূণেও ফাটলের সৃষ্টি হতে পারে। এ ফাটল বীজের তেজ ও মানের অবনতি ঘটায়। এ ধরনের বীজ বপন করলে অঙ্কুরোদগমকালে বিভিন্ন রোগজীবাণু দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হয় এবং সাধারণতঃ অস্বাভাবিক চারার জন্ম দেয়।

(গ) বীজ পরিপক্কতা লাভের পর বীজের মানের অবনতি :

হঠাৎ করে বৃষ্টি হলে বীজ ভিজে যায়। চরম ক্ষেত্রে গাছে লেগে থাকা অবস্থায়ই বীজ গজিয়ে যেতে পারে।

(ঘ) বীজ পরিপক্কতা লাভের পরও বীজ ফসল কাটতে দেরী হলে বীজের মানের অবনতি :

কোন কোন পরিস্থিতিতে ক্ষেতের চরম পারিপার্শ্বিক অবস্থা বীজের মান নষ্ট করতে পারে। দিন ও রাত্রের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তারতম্যও শুষ্ক বীজের ক্ষতি সাধন করে।

 

বীজফসল কাটা থেকে শুরু করে সংরক্ষণের পূর্ব পর্যন্ত বীজের মানের অবনতি:

বীজ ফসল কাটা ও মাড়াই কালে এবং বীজ শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত করার সময় বিভিন্নভাবে বীজের মান নষ্ট হতে পারে। এর যে কোনো পর্যায়ে যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও পতনের ফলে বীজ আঘাত প্রাপ্ত হলে বীজের আবরণ, বীজদল ও ভ্রূণে ফাটল ধরতে পারে। বীজ শুকানোর সময় উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবেও বীজের মান নষ্ট হতে পারে।

 

বীজ সংরক্ষণকালে বীজের মানের অবনতি:

যথাযথভাবে বীজ সংরক্ষণ করতে না পারলে উন্নত মানের বীজেরও অবনতি হতে পারে। সদ্য সংগৃহীত উচ্চ তেজ সম্পন্ন বীজও সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে তার মানের দ্রুত অবনতি ঘটবে। সংরক্ষণ কালে বীজে অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াসমূহের মাত্রা যত বেশি থাকবে বীজের তেজ তত তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে। বীজের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াসমূহের মাত্রা আবার নির্ভর করে বিরাজমান তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপর। তাই বীজের তেজ ও মান দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে বীজ এমন অবস্থায় সংরক্ষণ করতে হবে যেখানে বীজের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াসমূহের মাত্রা থাকবে নিম্নতম। অতএব তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ বীজ সংরক্ষণের চাবিকাঠি। এ ছাড়াও সংরক্ষণ অবস্থার ওপর নির্ভর করে পোকামাকড় ও ইঁদুরের আক্রমণে বীজের মান নষ্ট হতে পারে।

সংরক্ষণাগারে বীজের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার তেজ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। এর প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে উক্ত বীজ থেকে উৎপাদিত চারার বৃদ্ধি কমে আসে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বীজের তেজ আরো কমে গেলে সে বীজ প্রতিকূল অবস্থায় শুষ্ক মাটি ও নিম্ন তাপমাত্রায় অংকুরিত হতে পারেনা এবং শেষ পর্যায়ে বীজের মৃত্যু ঘটতে পারে। সময়ের ব্যবধানে সংরক্ষণাগারে বীজের মান কত দ্রুত নষ্ট হবে তা নির্ভর করে বীজের প্রাথমিক তেজ বা গুণগত মান, বীজে রোগজীবাণুর উপস্থিতি, গুদামজাত করার শুরুতে বীজে জলীয় ভাগ ও সংরক্ষণাগারের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ওপর।

যথাযথ পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করে সংরক্ষণাগারে বীজের মান নষ্ট হওয়ার গতিকে অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সাধারণভাবে বলা যায় যে, সংরক্ষণাগারের তাপমাত্রা ও বীজের জলীয় ভাগ যত বেশি হবে, বীজের তেজ তত দ্রুত নষ্ট হবে। বীজের জলীয়ভাগ অবশ্য সংরক্ষণাগারের আর্দ্রতার ওপর নির্ভরশীল। বীজ বিজ্ঞানী হ্যারিংটন তার নিজস্ব গবেষণা ও অন্যান্য গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে বীজ সংরক্ষণের ওপর নিম্নলিখিত দুটি মতবাদ ব্যক্ত করেছেন (হ্যারিংটন-১৯৭০) :

 

বীজ বিজ্ঞানী হ্যারিংটনের দুটি মতবাদ:

  •  সংরক্ষণাগারে বীজের তাপমাত্রা প্রতি ৫ সেন্টিগ্রেড কমানোর ফলে বীজের সংরক্ষণকাল দ্বিগুণ হবে। এ নিয়ম ৫০ – ০° সেঃ তাপমাত্রা সীমার মধ্যে প্রযোজ্য।
  • সংরক্ষণাগারে বীজের জলীয়ভাগ ১% কমানোর ফলে বীজের সংরক্ষণকাল দ্বিগুণ হবে। এ নিয়ম বীজের ১৪৪% জলীয়ভাগ সীমার মধ্যে প্রযোজ্য।

 

হ্যারিংটন উদাহরণস্বরূপ দেখিয়েছেন যে, পেয়াজ বীজ ১২% জলীয় ভাগ ও ৪০° সেঃ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ১ সপ্তাহের মধ্যে মরে যাবে, কিন্তু ৭% জলীয় ভাগ ও ১০° সেঃ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ২০ বৎসর পরও তা অঙ্কুরিত হবে। বীজ সংরক্ষণের জন্য অপর একটি প্রচলিত সহজ নিয়ম হচ্ছে- সংরক্ষণাগারের আপেক্ষিক আর্দ্রতা (%) ও তাপমাত্রার (ফারেনহাইটে) যোগফল ১০০ এর অধিক হবে না।

সংরক্ষণকালে বীজের অভ্যন্তরে জলীয় ভাগের বিভিন্ন পরিমাণ বীজের মানকে যথেষ্ট প্রভাবিত করতে পারে। নিম্নে তার একটি বিবরণ দেয়া হলো :

উচ্চ তাপমাত্রা ও অধিক জলীয় অংশে বীজ সংরক্ষণের ফলে বীজ মানের দ্রুত অবনতি ঘটলেও শুধুমাত্র তাপমাত্রা কমিয়ে কিংবা বীজের জলীয় ভাগ কমিয়ে বীজের সংরক্ষণকাল আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

 

সূত্র:

  • বীজমান নিয়ন্ত্রণ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-৩ , পাঠ-৩.৩

বীজ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা

কৃষি উৎপাদনের মূল ভিত্তি হলো বীজ। একটি উন্নতমানের বীজ কৃষকের সাফল্যের চাবিকাঠি। তাই কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে বীজ প্রযুক্তি। এর সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ফসলের গুণগত ও পরিমাণগত উন্নতি সম্ভব। বর্তমান পাঠে আমরা বীজ প্রযুক্তির সংজ্ঞা, ধাপ, উপকারিতা ও এর গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বীজ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা

(ইউনিট-৩: বীজ ও বীজ প্রযুক্তি, পাঠ-৩.১)

🔍 বীজ প্রযুক্তি কী?

বীজ প্রযুক্তি বলতে বোঝায়—বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিপণনের পুরো প্রক্রিয়াজাত ধাপসমূহে অনুসরণযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত কলাকৌশলসমূহ। এটি একটি সমন্বিত ব্যবস্থা, যার লক্ষ্য হলো গুণগত মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

 

⚙️ বীজ প্রযুক্তির ধাপসমূহ:

বীজ উৎপাদন এবং সংরক্ষণের প্রতিটি পর্যায়ে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়, যেমন:

  1. উপযুক্ত জমি স্থান নির্বাচন
  2. উন্নত জাত নির্বাচন রোগমুক্ত বীজ সংগ্রহ
  3. পরিবেশ মাটির ধরন অনুযায়ী চাষাবাদ
  4. পর্যাপ্ত সার সেচের ব্যবহার
  5. আগাছা, রোগ পোকা দমন
  6. রোগিং (অবিশুদ্ধ গাছ সরানো) পর্যাপ্ত দূরত্ব রাখা
  7. সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহ প্রক্রিয়াজাতকরণ
  8. পরিশেষে বীজ সংরক্ষণ মান নিয়ন্ত্রণ

এ সকল ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করলে, বীজের বিশুদ্ধতা, অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা, স্বাস্থ্য জেনেটিক বিশুদ্ধতা বজায় থাকে।

 

🏭 বাংলাদেশের বীজ উৎপাদন কাঠামো

বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর অধীনে ২৪টি বীজ বর্ধন খামারে ধান, গম এবং কিছু আলু জাতের ভিত্তি ও প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করা হয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ উদ্ভাবিত এবং জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত জাতগুলো থেকে প্রজনন বীজ সংগ্রহ করে এ উৎপাদন শুরু হয়।

পরবর্তীতে এই বীজ চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মাধ্যমে প্রত্যায়িত বীজ হিসেবে উৎপাদন করে কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

 

🚜 চাষিদের মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব

বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। তারা নিজের উৎপাদিত ফসল থেকে বীজ আলাদা করে সংরক্ষণ করে থাকেন, যা সঠিক পদ্ধতিতে না হওয়ায় বীজের গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ফসলের ফলন আশানুরূপ হয় না।

উন্নত দেশগুলোতে ধানের গড় ফলন যেখানে ৫–টন/হেক্টর, সেখানে বাংলাদেশে তা মাত্র টন/হেক্টর। অথচ সার, পানি ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এ ব্যবধান কমানো যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হলো—গুণগতমানসম্পন্ন বীজের অভাব।

 

🌾 হাইব্রিড বীজ: আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন

হাইব্রিড (সংকর) বীজ বীজ প্রযুক্তির একটি বড় অর্জন। এগুলো মুক্ত পরাগায়িত বীজের তুলনায় অনেক বেশি সমরূপ, অধিক ফলনশীল, কষ্ট সহিষ্ণু এবং রোগ প্রতিরোধক্ষম। যদিও হাইব্রিড বীজের দাম বেশি, তবে অধিক ফলন দেওয়ায় তা কৃষকের জন্য লাভজনক।

 

বীজ প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগই দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান পথ। ফসল উৎপাদনে স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য কৃষকদের আধুনিক বীজ ব্যবস্থাপনা এবং হাইব্রিড বীজ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। তাই ক্রপিং ইনটেনসিটি’হেক্টর প্রতি উৎপাদন’ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বীজ প্রযুক্তির উন্নয়ন বিস্তার একান্ত প্রয়োজন।

বীজ ফসল উত্তোলন বা বীজ কর্তন

বীজ ফসল উত্তোলন বা বীজ কর্তন আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি বীজ ও বীজ প্রযুক্তি বিষয়ের ২ নং ইউনিটের ২.২ নম্বর পাঠ।

বীজ ফসল উত্তোলন বা বীজ কর্তন

বীজ ফসল উত্তোলন বা বীজ কর্তন সঠিক পরিপক্কতা বীজের সর্বোচ্চ ফলন ও উৎকৃষ্ট গুণ সম্পন্ন হতে সহায়তা করে। অপরিপক্কতা বা অতি পরিপক্কতা উভয় অবস্থাতেই বীজের গুণাগুণ ও ফলন ক্ষতিগ্রস্হ হতে পারে। তাই সঠিক পরিপক্কতায় বীজ ফসল উত্তোলন /কর্তন করতে হয়। ফসল তোলা বা কাটার সময় বা পদ্ধতি উভয়ই বীজের মান ও পরিমাণকে প্রভাবিত করে। মাঠে বীজ উৎপাদনের সকল কার্যক্রম এবং পরিচর্যা শেষ করার পরেই মাঠের সর্বশেষ কার্যক্রম হচ্ছে ফসল কর্তন।

বীজ উৎপাদন গাছের বংশ রক্ষার একমাত্র উপায়। তাছাড়া ফসলের ফলন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ভালো বীজ উৎপাদনের বিকল্প নেই। সাধারণ ফসল উৎপাদন পদ্ধতির চেয়ে বীজ ফসল উৎপাদন পদ্ধতি কিছুটা আলাদা। অর্থাৎ বীজ ফসল উৎপাদন করার জন্য বিশেষ কিছু পরিচর্যা ও যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আমরা বীজ থেকে ফসল উৎপাদন করি খাওয়ার জন্য।

কিন্তু যখন বীজ হিসেবে ফসল উৎপন্ন করব তখন সতর্কতার সাথে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। যেমন : ভালো বীজ ব্যবহার, উপযুক্ত স্হান ও জমি নির্বাচন, জমি সুচারুরূপে কর্ষন করা এবং মাত্রা মোতাবেক সার প্রয়োগ করা, নির্দিষ্ট ফসলের জন্য নির্দিষ্ট নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যাতে বিজাতি বা অন্য জাতের সাথে পরাগায়ন হতে না পারে, উত্তমরূপে আগাছা দমন করা এবং সময়মত ও প্রয়োজন মাফিক কীটনাশক/বালাইনাশক স্প্রে করা যাতে বীজ ফসল পোকামাকড় বা রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত না হয়।

বীজ ফসল নির্দিষ্ট সময়ে পরিপক্ক ও পুষ্ট হওয়ার পর বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এ ইউনিটে বীজ উৎপাদনের বিস্তারিত পদ্ধতি, আগাছা দমন ও রোগিং এবং বীজ ফসল সংগ্রহের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 

বীজ ফসল কর্তনের সময়:

বীজের সর্বোচ্চ ফলন ও উৎকৃষ্ট মান পেতে হলে উপযুক্ত সময়ে ফসল কর্তন করতে হবে। বীজ যখন যথাযথভাবে পুষ্ট ও পরিপক্ক হয়, বৃষ্টি বাদলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না এবং ফসল সংগ্রহজনিত সর্বনিম্ন ক্ষতি স্বীকার করে সহজে কাটা এবং পরিষ্কার করার উপযোগী হয় তখনই ফসল কাটার উপযুক্ত সময় হয়েছে ধরে নিতে হবে। ফসল যদি আগে কাটা হয় তবে বীজের মধ্যে অত্যাধিক আর্দ্রতা এবং অপরিপক্কতা থাকার দরুন যন্ত্র দ্বারা (Combine harvester) ফসল কাটা ও মাড়াই করা অসুবিধাজনক হয়ে ওঠে এবং মাড়াই, ঝাড়াই ও পরিষ্কার করার সময় বীজের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

আবার বিলম্বে কাটলে, আবহাওয়ার খারাপ প্রতিক্রিয়ার দরুন বীজ মানের অবনতিসহ ফসল হেলে পড়া বা দানা/বীজ ঝরে যাওয়ার কারণে ফলন কমে যায়। অতএব এর মাঝামাঝি কোন এক সময়কেই ফসল তোলার উপযুক্ত সময় ধরে নিতে হবে।

 

বীজ কর্তন পদ্ধতি:

বাংলাদেশে সাধারণত হাত দ্বারা (কাস্তে দিয়ে) ফসল কাটা হয়। বীজে যাতে কোন যান্ত্রিক ক্ষত বা মিশ্রণ না ঘটে, ফসল কাটার সময় সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

কমবাইন হারভেস্টার (Combine harvester) দ্বারা ফসল কর্তন করা হলে যন্ত্রটি ব্যবহারের পূর্বে ভালোভাবে পরিষ্কার এবং এর বিভিন্ন অংশ যথাযথভাবে সংযোজন করে ব্যবহার করা উচিত। নতুবা বীজে যান্ত্রিক মিশ্রণ ও ক্ষত সহ বীজের মানের অবনতি হতে পারে।

কমবাইন ফসল কাটা যন্ত্ৰ:

এ যন্ত্র দ্বারা একই সাথে বীজ কাটা ও মাড়াই হয় এবং বস্তা ভর্তি ও সেলাই হয়ে যায়। এটি ব্যয়বহুল যন্ত্র। বাংলাদেশে কেবল সরকারী খামারে এ ধরনের কমবাইন যন্ত্র ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

 

সূত্র:

  • বীজ ফসল উত্তোলন/কর্তন , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-২ , পাঠ-২.৩